– Advertisement –
– Advertisement –
ওয়েব ডেস্ক: হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব। অসীম ক্ষমতার অধিকারী দেবাদিদেবের নিবাসস্থল কৈলাশ। হিন্দুমতে এই কৈলাশ (Mount Kailash) খোদ ঈশ্বরের বাসভূমি, এখান দিয়েই নাকি স্বর্গে আরোহণের পথ। রহস্যে ঘেরা দুর্গম এই পর্বত সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত অনেক কিছুই জানা যায় নি। তিব্বত মালভূমি থেকে ২২,০০০ ফুট ওপরে অবস্থিত কৈলাশ হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও বৌদ্ধদের কাছেও অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় স্থান। কৈলাশ পর্বতের বেশিরভাগটাই এখনও পর্যন্ত রহস্যের অন্ধকারে ঘেরা।
কথিত আছে কৈলাশে (Mount Kailash) থাকেন দেবাদিদেব মহাদেব। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর এই তিন দেবতার সম্মিলিত শক্তির রূপ ত্রিদেব। ত্রিভুবনকে রক্ষা করে রেখেছেন তারাই। মনে করা হয় যে বেদগুলি উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার লৌহজংয়ের কাছে রচিত হয়েছিল। এমনও বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান ব্রহ্মা এই স্থানে তপস্যা করেছিলেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, এখানে তুষারময় চূড়ায় মেঘের মধ্যে ত্রিমূর্তি দেখা যায়। এখানে অবস্থিত পুকুরটির নাম ব্রহ্ম তাল। অনেকেই ব্রহ্মমুহূর্তে স্নান করতে এসে দেখেছেন, সাদা ধবধবে পাহাড়ের (Mount Kailash) ওপারে ত্রিমূর্তির প্রতিকৃতি। বিশেষ তিথি অনুযায়ী এই ব্রহ্ম তালে স্নান করে ত্রিমূর্তির কাছে মনোস্কামনা জানিয়ে পুজো দিলে ঈশ্বর তাঁর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন।
ঠিক পিরামিডের আকারের কৈলাশে (Mount Kailash) আছে অনেক প্রাচীন গুম্ফা ও গুহা। একাধিক বৌদ্ধ ও হিন্দু সন্ন্যাসীরা লোকচক্ষুর আড়ালে বহু বছর ধরে তপস্যা করে চলেছেন। প্রতি বছর হাজার হাজার তীর্থযাত্রী মানস সরোবর যাত্রা করেন। তবে অত্যন্ত দুর্গম প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে অল্প সংখ্যক কয়েকজনই যাত্রা সম্পূর্ণ করতে পারেন। তবে কৈলাশ পর্বতের শৃঙ্গে এখনও পর্যন্ত কেউ উঠতে পারেননি। একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টের পর যাওয়া সেখানে নিষিদ্ধ।
বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুসারে, এটি বলা হয়েছে যে কৈলাস পর্বত মহাকাশীয় গোলকের ঘূর্ণনের অক্ষ। বেদ ও পৌরাণিক গ্রন্থ রামায়ণে উল্লেখ থাকার পর কৈলাস পর্বতকেও বৈজ্ঞানিকভাবে অক্ষ মুন্ডি হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে। বিভিন্ন অধ্যয়ন প্রমাণ করেছে যে সর্বোত্তম ঐশ্বরিক শিখর হল বিশ্বের কেন্দ্র এবং বিশ্বজুড়ে উল্লেখযোগ্য স্মৃতিস্তম্ভের সাথে সংযুক্ত। ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক স্টোনহেঞ্জ এখান থেকে ৬৬৬৬ কিমি দূরে। একই মাত্রা উত্তর মেরুর সাথে যায়, যা মাউন্ট থেকে ৬৬৬৬ কিমি দূরে এবং দূরত্ব দক্ষিণ মেরুর সাথে ঠিক দ্বিগুণ হয়, যা শিখর থেকে ঠিক ৬৬৬৬ কিমি দূরে।
১৯৯৯ সালে রাশিয়ার এক বৈজ্ঞানিক দল কৈলাস পর্বতের (Mount Kailash) পাদদেশে গিয়ে অনেক পরীক্ষার পর সিদ্ধান্তে আসেন, এটি কোনও সাধারণ পর্বত নয় বরঞ্চ বরফে ঢাকা একটি পিরামিড। তাই কৈলাস পর্বতকে “শিব পিরামিড”ও বলে। পশ্চিম তিব্বতের এই পর্বত কেবল হিন্দুদের কাছেই নয়, জৈন, বৌদ্ধ ও তিব্বতের প্রাচীন ‘বন’ ধর্মের মানুষদের কাছেও কৈলাস পবিত্র এক স্থান।
কৈলাস অঞ্চলে অবস্থিত হ্রদগুলির আকৃতি রহস্যময়। মানস সরোবর পূর্ণ গোলাকার এক জলাশয়। রাক্ষস তালের আকৃতি অর্ধচন্দ্রাকার। এরা নাকি সূর্য ও চন্দ্রের শক্তিকে প্রকাশ করে।আশ্চর্যের বিষয় যত জোরেই হাওয়া থাকুক, মানস সরোবরের জল সবসময়ই শান্ত কিন্তু রাক্ষসতালের জল সব সময় অশান্ত থাকে।
হিন্দুরা মনে করেন, কৈলাস পর্বতের শৃঙ্গ হল দেবাদিদেব মহাদেবের নিভৃত আবাস। যেখানে বসে সৃষ্টি, ধ্বংস, সংহার ও প্রলয় নিয়ন্ত্রণ করেন নীলকণ্ঠ। বৌদ্ধদের কাছে কৈলাস পর্বত হল সৃষ্টির প্রাণকেন্দ্র। বজ্রায়ণ শাখার বৌদ্ধরা মনে করেন, কৈলাসের শৃঙ্গে ধ্যানমগ্ন হয়ে আছেন ধ্যানের দেবতা হেরুকা চক্রসাম্ভারা। তিব্বতের বন ধর্মের অনুসারীরা মনে করেন, কৈলাস শৃঙ্গ তাঁদের আকাশ দেবতা সিপাইমেনের আবাস। জৈন ধর্মের অনুসারীদের কাছেও পবিত্র এই শৃঙ্গ (Mount Kailash)। কারণ প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভদেব নির্বাণ লাভ করেছিলেন এই কৈলাস পর্বতেই। কৈলাস পর্বতকেই পৃথিবীর কেন্দ্র বলা হয়ে থাকে। কৈলাশ পর্বত কসমিক অ্যাক্সিস বা ওয়ার্ল্ড পিলার নামেও পরিচিত। কৈলাশ পর্বতেই স্বর্গ এসে পৃথিবীতে মিশেছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
নানান রহস্যে মোড়া, কৈলাস পর্বত সবচেয়ে চাহিদাপূর্ণ এবং স্থায়ী ট্রেকগুলির মধ্যে একটি হওয়া সত্ত্বেও, বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে তীর্থযাত্রীরা কৈলাস পর্বতে শ্রদ্ধা জানায়। কৈলাস পর্বতের চকচকে তুষারাবৃত চূড়াটি সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি। দেবাদিদেবের এই স্থান পবিত্র পুণ্য স্থান হিসাবেই সর্বজন পরিচিত।