Aajke | হ্যাঁ, এ বাংলায় আসন-রফা হচ্ছে কংগ্রেস-তৃণমূলের
এসব বৈঠক তো হুট বলতে ঝুট হয় না, আগে থেকেই ১০ নম্বর জনপথে অপেক্ষায় ছিলেন রাহুল গান্ধী, কাকভোরে দিল্লিতে নেমে সোজা ওই ১০ নম্বর জনপথে পৌঁছলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ তো সাতসকালে উঠে নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। কাজেই দু’ দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের আলোচনার কিছুটা তো আঁচ করাই যায়। ইন্ডিয়া জোটের বিহার থেকে কর্নাটক, মহারাষ্ট্র থেকে গুজরাত নিয়ে কীই বা বলার আছে তৃণমূল নেতৃত্বের? নিশ্চিতভাবেই কথা হয়েছে বাংলার রাজনীতি নিয়ে। আমরা কোনও আগাম শর্ত না রেখেই জোটে রাজি, আমরা বিভিন্ন কংগ্রেস বিরোধী শক্তিগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করছি। আমাদের নেত্রী ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম মুখ, যিনি রাজীব গান্ধীর খুব কাছের মানুষ ছিলেন, যিনি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বরাবর ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রেখেছেন, আমরা আপনাকে, আপনার দলকে সমর্থন করছি। অথচ বাংলায় আমাদের বিরুদ্ধে এরকম আদা জল খেয়ে নেমেছে আপনাদের নেতা, এরকমটা চলতে থাকলে আমাদেরও তো ভাবতে হবে। এটা আলোচনার কাল্পনিক রূপ, কিন্তু সত্যি করে আলোচনা এর বাইরে আর কী হতে পারে? আপনি পিৎজাতে কোন সস দেন? আপনার নদী ভালো লাগে না পাহাড়? এ জাতীয় আলোচনার জন্য সক্কাল সাড়ে ছটায় ১০ নম্বর জনপথে আলোচনায় তো বসেননি রাহুল-অভিষেক, কাজেই এ নিয়ে খানিক আলোচনার অবকাশ আছে আর তাই এটাই আমাদের বিষয় আজকে, হ্যাঁ, এ বাংলায় আসন-রফা হচ্ছে কংগ্রেস-তৃণমূলের।
মমতা আজ থেকে নয়, ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে একটা জোটের কথা বলে আসছিলেন। কখনও ফেডেরাল ফ্রন্ট, কখনও থার্ড ফ্রন্ট, এসবের চেষ্টা আজকের নয়, বহুকালের। তার জন্য মহারাষ্ট্র যাওয়া, শরদ পাওয়ারের সঙ্গে কথা বলা, সি চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে কথা বলা, নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে কথা বলা, কলকাতায় কনক্লেভ ইত্যাদি বহু চেষ্টার পরে ইন্ডিয়া জোট তৈরির পুরোভাগে তিনি ছিলেন, নামকরণে ছিলেন, এখন জোটের ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত। বাংলার বাইরে দলকে নিয়ে যাওয়ার বারকয়েক ব্যর্থ চেষ্টার পরে বুঝেছেন আপাতত ঘরের দিকে নজর দেওয়াটা দরকার। বিজেপি আরএসএস-এর তীব্র সংখ্যালঘু বিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু মানুষজন স্বাভাবিক কারণেই কংগ্রেসমুখো হয়েছেন, কংগ্রেস তার দলিত ভোটও খানিকটা ফিরে পাচ্ছে, কর্নাটকে তা স্পষ্ট। মমতা জানেন এ রাজ্যে সিপিএম বা কংগ্রেস তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সেটা বিজেপি, কাজেই তিনি বিজেপিকে এই লোকসভার নির্বাচনে এ রাজ্যে তলানিতে নিয়ে যেতে চান।
আরও পড়ুন: Aajke | ইন্ডিয়া জোট, এ বাংলায় মুখ থুবড়ে পড়বে
সাধারণ হিসেবে মমতা, বাম-কংগ্রেস আর বিজেপির মধ্যে তিনকোনা লড়াই হলে কংগ্রেস ১/২ টো বিজেপি ৮/১০টা, তৃণমূল ৩০/৩২টা আসন পাবে। কিন্তু কংগ্রেস তৃণমূল জোট হলে বিজেপি ৩/৪ এ নেমে যাবে, সেক্ষেত্রে কংগ্রেসকে ৪ টে কি ৫টা আসন ছাড়তেও মমতার আপত্তি নেই। হ্যাঁ, আই প্যাকের হিসেব এইরকমই। কাজেই এই রফা আলোচনাটাই যে সেরে ফেলা হল, এরকমটাই খবর ভাসছে রাজনৈতিক মহলে। এই রফার সমস্যা দুটো। না না, অধীর বা মাথা নেড়া বাগচিদের নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব কোনওদিনই চিন্তিত নন, কারণ মাথা নেড়া বাগচির সমর্থনে সাড়ে চোদ্দ জনের বেশি মানুষ নেই, আর অধীরের সমর্থনভূমিতে অধীরের কংগ্রেস করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। ৪০-৪৬ শতাংশ সংখ্যালঘু অঞ্চলে বিজেপিতে যাওয়ার কথা অধীর ভাববেন না, তিনি এতটাও কাঁচা খেলোয়াড় নন। সমস্যা দুটো, প্রথম হল তৃণমূল দল রাজ্যের বাইরে তিন চারটে আসনের দাবিদার, তার সূত্র বের করতে হবে, আর এ রাজ্যে বামেদের সঙ্গে সম্মানজনক বিচ্ছেদের ফর্মুলাটা বের করতে হবে। কারণ এখন ততটা কাছের না হলেও সীতারাম ইয়েচুরিকে দিল্লিতে অনেকেই রাহুলের মেন্টর বলেই চেনে। তবে যাই হোক, রাহুল গান্ধী যিনি আজ পর্যন্ত শরিক দলের হাতে গোনা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তিনিই তৃণমূলের দু’ নম্বর নেতার সঙ্গে কাকভোরে এক ঘণ্টার বৈঠক সারলেন আও আবার ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের আগে, তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের আগে দিল্লিতে ১০ নম্বর জনপথে কাকভোরে ১ ঘণ্টা ধরে বৈঠক করলেন রাহুল, অভিষেক। এই বৈঠকে কি কংগ্রেস-তৃণমূল নির্বাচনী জোট নিয়েই আলোচনা হল? নাকি এ বিষয়ে রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীই সিদ্ধান্ত নেবেন?
ইন্ডিয়া জোটের ভালো ফলাফল নির্ভর করছে মহারাষ্ট্র, বিহার, বাংলায় বিজেপির অনেকটা শক্তি কমে যাওয়া আর কংগ্রেস শাসিত রাজ্য কর্নাটক, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর উপর। কাজেই বাংলার নির্বাচনী হিসেব নিকেশে রাহুল বা কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের একটু বেশি নজর থাকবে বইকী। একলা লড়ে ১টা আসন আর তৃণমূলের সঙ্গে লড়ে ৩/৪টে আসনের অনেকটা দাম আছে কংগ্রেসের কাছে, সেই হিসেবেই আসন রফা হচ্ছে দুই দলের মধ্যে। তবে বহু ক্ষেত্রের মত, এই যৌথ সিদ্ধান্তের কো-ল্যাটারাল ড্যামেজ বঙ্গ বাম, বা সিপিএম, সেটা নিয়ে অবশ্য খুব বেশি আলোচনার অবকাশ নেই।