রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় সজিব হাসান নামে পরকীয়া প্রেমিককে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন শাহানাজ পারভিন নামে ৫০ বছর বয়সী এক নারী । গ্রেফতারকৃত ওই নারী ৩ সন্তানের মা। গ্রেফতারের পর এই নারী চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। প্রেমিককে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর ৫ টুকরা করেন শাহানাজ নিজেই। নিহত সজিবের সঙ্গে তার পাঁচ বছর ধরে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ওয়ারীর স্বামীবাগের কে এম দাস লেন এলাকার একটি চারতলা বাসায় এ ঘটনা ঘটে। লাশের তিন টুকরা ঘরের মেঝেতে এবং দুই টুকরা টয়লেটে পাওয়া যায়।
নিহত সজিব হাসান শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাষ্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপায়। বাড়িতে তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, পারভিন তিন দিন ধরে নিখোঁজ জানিয়ে তার স্বামী ওয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেই ডাইরির পর পুলিশ পারভিনকে খুঁজতে গিয়েই সজিবের মৃতদেহ পায়।
পুলিশ জানায়, সজিবের সঙ্গে পারভিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে কারণে পারভিন তার স্বামীর বাসা থেকে তিন দিন আগে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে সজিবের বাসায় ওঠেন।
জিডি হওয়ার পর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে পারভিনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সজিবের বাসায় যায় পুলিশ। সেখানে পারভিনকে পাওয়ার পাশাপাশি সজিবের লাশও মেলে।
পারভিনকে সন্দেহের কারণ জানতে চাইলে উপ-কমিশনার ইফতেখার বলেন, সজিবের সঙ্গে থাকতে গিয়ে পারভিন বুঝতে পারে, সজিবের অন্য মেয়েদের সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে এবং সজীবের মুখ্য উদ্দেশ্য পারভিনের টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়া ।
পারভিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, উল্লেখিত কারণেই বৃহস্পতিবার সকালে ঝগড়ার সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
তিনি বলেছেন, সজিবের সঙ্গে তার প্রথমে ঝগড়া হয়, তখন সজিব তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে ধস্তাধস্তির মধ্যে ছুরি পারভিনের হাতে চলে আসে। তখন তিনি সজিবকে ছুরি মারলে সে মারা যায়। এরপর পারভিন রান্না ঘরের বটি দিয়ে সজীবের মৃতদেহ পাঁচ টুকরা করার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। ঘটনায় পারভিনের হাতেও কেটে জখম হওয়ার কথা জানান তিনি।
পারভীন পুলিশকে জানিয়েছেন এক কক্ষের ওই বাসায় সজিব একাই থাকতেন। পাঁচ বছর ধরে তার সঙ্গে সজিবের সম্পর্ক। স্বামীবাগের বাসাটি পারভীনকে স্ত্রী পরিচয়ে দেখিয়েই ভাড়া নিয়েছিলেন সজিব।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের জানা গেছে, শাহানাজ স্বামীবাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। নিহত সজিবের সঙ্গে শাহানাজের পাঁচ বছর ধরে অবৈধ সম্পর্ক চলছিল। তারা এই বাসায় মাঝে মাঝেই অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন। বৃহস্পতিবারও দুজন দেখা করে শারিরীক সম্পর্ক শেষে টাকা ও সোনা গহনা পাওনা নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সজিব শাহনাজকে চড় থাপ্পড় মারলে শাহনাজ ক্ষিপ্ত হয়ে চুরিকাঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই সজিবের মৃত্যু হয়। মৃতদেহ লুকাতে শাহানাজ মরদেহ ৫টি খণ্ড করেন।
গত দুইদিন আগে হত্যাকারী শাহানাজ পারভিন তার প্রকৃত স্বামীর ঘর সংসার ছেলে মেয়ে রেখে স্বর্ণাংলকার, কাপড়-চোপড়, টাকা-পয়সা এবং লাগেজ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। পরে সজিব হাসানের সঙ্গে দেখা করেন এবং তার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সজিবের বাসায় অবস্থান করা শুরু করেন।
ওই নারী পুলিশের কাছে বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে সজিব হাসান তার টাকা-পয়সা নিয়ে নে। এরপর স্বর্ণাংলকার নিয়ে বিক্রি করতে চাইলে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে সজিব হাসান তাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করতে গেলে ওই ছুরি কেড়ে নিয়ে উল্টো সজিব হাসানের বুকের নিচে আঘাত করেন পারভীন। হত্যাকারী শাহানাজ পারভিন প্রেমিক সজিবের তুলনায় শারীরিক গঠনে খুবই ভালো। হত্যা শেষে ছুরি দিয়ে সজিবের দু’হাত, দু’পা বিছিন্নও করেন পারভীন । এ কাজে ব্যবহৃত ছুরি ও শিলপাথর উদ্ধার করেছে পুলিশ।