Skip to content

ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ডের বিধানসহ সংসদে আইন পাস

ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করে জাতীয় সংসদে আজ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০ পাস করা হয়েছে। সংশোধনীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি বদলে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দবন্ধ বসানো হয়েছে। বিদ্যমান আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধানের স্থলে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধানের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া বিলে ধর্ষনের শিকার এবং অভিযুক্তের ডিএনএ টেষ্ট বাধ্যতামূলক করার বিধান রয়েছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন।  এর আগে আজ সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও উত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়। ৭১ বিধিতে জরুরী জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়, নারী ও শিশু ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ। নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের মধ্যে দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটন সামাজিক গতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ও সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের ধারা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এমন অপরাধ দমনে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায় আইনে সর্বোচ্চ দন্ডের বিধান যুক্ত করে এই বিলটি আনা হয়েছে।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আলোচিত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনকারীরা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করার দাবি জানান। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার আইনটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়।

সংসদ অধিবেশন না থাকায় সংশোধিত আইন কার্যকর করতে গত ১৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০০০’ জারি করেন। পরে ৮ নভেম্বর নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাদেশটি সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। একই দিন সেটি বিল আকারে সংসদে তোলা হয়।

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারায় বলা ছিল, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

বিলে মূল আইনের খসড়ায় ৯(১) উপধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

আইনের ৯(৪) (ক) উপধারায় ছিল- ‘যদি কোনো ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

এই উপধারা সংশোধন করে পাস হওয়া বিলে ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ এর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো যোগ করা হয়েছে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ধর্ষণ ছাড়া সাধারণ জখমের ক্ষেত্রে অপরাধ আপসযোগ্য হবে। এছাড়া আগের আইনে ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের রেফারেন্স ছিল। এখন সেখানে হবে ‘শিশু আইন- ২০১৩’।

২০০০ সালের আইনের ৩২ ধারায় বলা ছিল, “এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের শিকার ব্যক্তির সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করিয় মেডিকেল পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে কিংবা সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে স্বীকৃত কোন বেসরকারি হাসপাতালে সম্পন্ন করা যাইবে।”

বিলে অপরাধের শিকার ব্যক্তির পাশাপাশি ‘অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির’ মেডিকেল পরীক্ষা করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া ৩২ ধারার সঙ্গে ৩২(ক) শিরোনামে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে বিলে।

সেখানে বলা হয়, “এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ধারা ৩২ এর অধীন মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াও, উক্ত ব্যক্তির সম্মতি থাকুক বা না থাকুক, ২০১৪ সালের ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) আইনের বিধান অনুযায়ী তার ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে।”

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের প্রাগ্রসরমান ধারা আজ বিশ্বব্যাপী নন্দিত ও প্রশংসিত। বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ঊর্ধ্বগামী পরিক্রমণের মধ্যে দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটন, সামাজিক গতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব রাখাসহ সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের ধারাকে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

“এইরূপ হীন অপরাধ দমনে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণার্থে দণ্ডারোপের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা গ্রহণ-সময় ও পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় অত্যাবশ্যক।“

এছাড়া আজ সংসদে আকাশ পথে পরিবহন( মন্ট্রিল কনভেনশন) বিল, ২০২০ পাস করা হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন।
বিল দুটি পাসের প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বি এনপির হারুনুর রশীদ, মোশাররফ হোসেন, বেগম রুমিন ফারহানা এবং স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব আনলে তা কন্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।