আজ একুশে ফেব্রুয়ারি-, মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে এক বেদনাবিধুর এবং গৌরবোজ্জ্বল দিন। ৬৯ বছর আগে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করার অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানেরা। এই অনন্য ইতিহাসকে স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেসকো ১৯৯৯ সালে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে বাঙালির আত্ম-অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের এই দিনটি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি একদিকে শোক ও বেদনার, অন্যদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত।
এর আগে দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষায় বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে। ’ পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ বাঙালির গৌরবময় ঐতিহাসিক দলিলে ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। ’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে দিবসটি উপলক্ষে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য একটি ই-পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। যার শিরোনাম ‘আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা জয় বাংলা। ’
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (১৩৫৮ বঙ্গাব্দের ৮ ফাল্গুন) দিনটিতে ‘বাংলা’কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র-যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠীর চোখরাঙানি ও প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলে। সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। এ সময় সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেসকো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়।
একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংগতি রেখে বর্তমান কভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ, কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। কভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন প্রতিনিধি ও ব্যক্তিপর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দুজন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারছেন। শহীদ মিনারের সব প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হয়েছে। মাস্ক পরা ব্যতিরেকে কাউকে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। সারাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক – সাংস্কৃতিক সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে ।