Skip to content

হাজার হাজার পাখির ডিভোর্স, কিন্তু কেন ভাঙছে তাদের সংসার

এশিয়া বার্তা, ৩ ডিসেম্বর : কোনো সম্পর্কে যখন চিড় ধরে কিংবা একেবারেই তা শেষ হয়ে যায়, তখন আমরা ধরেই নেই, দুজনের মধ্যে হয়তো সেই ভালোবাসার অনুভূতি আর নেই। আবার এমনও হতে পারে যে দুজন একে অপরকে সময় দিতে পারছে না। তবে কখনো ভেবেছেন কি জলবায়ু পরিবর্তনও বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে?

জলবায়ু পরিবর্তন এটাই কি হাজার হাজার পাখির ডিভোর্সের একমাত্র কারণ! অ্যালবাট্রস নামে সামুদ্রিক এক পাখি। এই পাখিরা সঙ্গী বাছাই করে অনেকটা মানুষের মতোই। মানুষই শুধু নয়, পশু-পাখির উপরও প্রতক্ষ প্রভাব বিস্তার করে জলবায়ু পরিবর্তন। অনেক প্রজাতির পশু-পাখির জীবনে প্রভাব পড়েছে।

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, অ্যালবাট্রস প্রজাতির পাখির বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তন। এই প্রজাতির পাখি সঙ্গী বা সঙ্গীনীর প্রতি দায়বদ্ধ। তবে এখন হাজার হাজার পাখিকে সঙ্গী বা সঙ্গীনী ছাড়াই দেখা যাচ্ছে।

এই পাখিটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডানাওয়ালা সামুদ্রিক পাখি বলা হয়। এরা সাধারণত সমুদ্রের মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তরে দেখা যায় এই প্রজাতির পাখিদের।

বলা হয়, এই প্রজাতির পাখিরা মানুষের মতো সঙ্গী বেছে নেয়। তারপর সারা জীবন সেই সঙ্গীর সঙ্গেই থাকে। তাদের বিবাহবিচ্ছেদও অনেকটা মানুষের মতোই। দুজনের মধ্যে যে কেউ অন্য সঙ্গী বেছে নিলে অপরজন সরে যায়।

রয়্যাল সোসাইটি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহাসাগরের পানিতে উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য অ্যালবাট্রস পাখির জীবনে পরিবর্তন হচ্ছে। কারণ এই সময়ে তারা মাছ শিকারের জন্য সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।

পাঁচজন বিজ্ঞানী একটি গবেষণার পর জানিয়েছেন, মূলত মাছ শিকার নিয়েই সঙ্গী বা সঙ্গীনীর সঙ্গে মনোমালিন্য হচ্ছে এই প্রজাতির পাখিদের। যার ফলে তারা আলাদা থাকছে।

অ্যালবাট্রস সঙ্গী বা সঙ্গীনীর প্রতি দায়বদ্ধ থাকে সব সময়। যা অন্য প্রজাতির পাখিদের মধ্যে বিরল। একজন সঙ্গীর সঙ্গেই এই প্রজাতির বেশিরভাগ পাখি জীবন কাটিয়ে দেয়। যা কিনা বিরল ব্যাপার। দক্ষিণ আফ্রিকার অকল্যান্ড দ্বীপে এই পাখি দেখা যায় প্রচুর।

২০০৩ সালে এখানে প্রায় ১৬ হাজার যুগল দেখা গিয়েছিল। তবে এখন সেই সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। বেশিরভাগ পাখি একা ঘুরছে, মাছ শিকার করছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন অ্যালবাট্রস পাখির জীবনচক্রে প্রভাব ফেলেছে। যার ফলে তারা সঙ্গী ছাড়াই থাকতে শুরু করেছে। প্রজননেও যার প্রভাব পড়ছে। ফলে কমে যাচ্ছে এই পাখির সংখ্যা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো পাখি প্রজননে অক্ষম হলে তার সঙ্গী তাকে ছেড়ে চলে যায়। তার পরের মরশুমে সেই পাখি নতুন সঙ্গী খুঁজে নেয়। তা না হলে এই প্রজাতির পাখির বিবাহবিচ্ছেদ বিরল ব্যাপার। এখন প্রজননে সক্ষম পাখিকেও ছেড়ে যাচ্ছে তার সঙ্গী।

গত বছরের তুলনায় এবার অ্যালবাট্রস পাখির বিচ্ছেদের হার বেড়েছে আট শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া আর কোনও কারণ রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সামনেই প্রজননের মরশুম। আর এখন অকল্যান্ড দ্বীপে বহু পাখিকেই একা থাকতে দেখছেন গবেষকরা। যা চিন্তার ব্যাপার।

সমুদ্রের জল আগের থেকে উষ্ণ হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে পাখিদের জীবনযাপনে। পাখিদের প্রজননেও এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে সামুদ্রিক পাখিদের জীবনে বড়সড় বদল এসেছে।