© শ্রী দীপ্তাস্য যশ
সালটা সম্ভবত ২০১৫, মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রেজা রাজী একটি মেয়েদের সেভেন এ সাইড ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় মৌলবীদের ফতোয়ার জেরে প্রশাসন সেই ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করিয়ে দেয়।
প্রশ্ন হোল হিজাব যদি চয়েস হয় তাহলে ফুটবল চয়েস নয় কেন?
কেন আফগানিস্তানে তালিবান শাসক মেয়েদের ফুটবলকে নিষিদ্ধ করতে চায়?
সর্বোপরি ইরানের মতো একটি মুসলিম রাষ্ট্রে কেন মেয়েদের ফুটবল দেখার হ্যা ঠিক পরেছেন শুধুমাত্র পুরুষদের সাথে এক স্টেডিয়ামে বসে ফুটবল দেখার জন্য এতো দীর্ঘ লড়াই করতে হয়? তখন কেন চয়েসের প্রশ্নটি গুরুত্ব পায়না? ইরানে তো বোরখা বাধ্যতামূলক। সেখানে কেন বিষয়টি চয়েসের উপরে ছাড়া হয়না?
আসলে এটি কোন চয়েসের বিষয়ই নয়। এটি আসলে একটি জেহা দ। সাংস্কৃতিক জেহা দ। ঠিক যেমন ভাবে স্কুলে সরস্বতী পুজো বন্ধ করে দিতে চাওয়া হয়, দুর্গা পুজো এলেই নিয়ম করে মূর্তি ভাঙা হয়, আমাদের ঘরের মেয়ে নিকিতা তোমর লাভ জেহা দের ফাঁদে পা দিতে রাজী না হলে তাকে গুলি করে মারা হয়, ঠিক তেমনই আমাদের শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য এই বোর খা জেহাদ।
স্কুল, কলেজ এগুলি ধর্ম পালনের স্থান নয়। ধর্ম পালনের জন্য মন্দির, মসজিদ, চার্চ, গুরদ্বোয়ারা এসব আছে। স্কুল, কলেজ হোল বিদ্যা শিক্ষা, দেশের সংস্কৃতি শিক্ষা, ইতিহাস সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা, ভবিষ্যতের সোপান নির্মান করার স্থান। সর্বোপরি আমাদের ভারতীয় হয়ে ওঠার পাঠশালা। সেখানে গরীব বড়লোক, হিন্দু মুস লিম, শিখ খৃষ্টান ইত্যাদি ভেদাভেদের কোন স্থান নেই। সেই কারনেই স্কুল, কলেজে ইউনিফর্মের প্রথা আছে। কারন ছাত্রছাত্রী ধর্ম বর্ন, আর্থিক অবস্থা নির্বিশেষে সেখানে সমান। সকলের জন্য সমান সুযোগ, এক নিয়ম এই হোল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল কথা। সেখানে হটাত ধর্মাচারনের প্রশ্ন আসবেই বা কেন আর কাউকে সেকারনে কোন অন্যায় সুযোগ দেওয়াই বা হবে কেন।
এই সংখ্যাঘুঘুদের বুঝতে ভারতবর্ষের বাসিন্দারা পচাত্তর বছর এদের নানা অন্যায় আব্দার সহ্য করেছেন শুধুমাত্র একটি আশাতেই যে একদিন এরা ভারতীয় হয়ে উঠবেন। কিন্তু এরা সেই সহ্যক্ষমতাকে ভারতীয়দের দুর্বলতা ভেবে বারেবারে আক্রমন করেছেন আমাদের সহনশীলতাকে। এবার মানুষ রেগে গেছে। তাই আর তারা এইসব অন্যায় আব্দার মানতে চাইছেননা। সেই কারনেই স্কুলে সকলের ইউনিফর্মের দাবী যেমন উঠছে, তেমনই দেশে অভিন্ন দেওয়ানী বিধির দাবীও উঠছে। আর অভিন্ন দেওয়ানী বিধি করতেও হবে, কারন এটি সময়ের দাবী। ভারতবর্ষের দাবী।
বিদ্র – বামেরা দেখলাম বোরখার সাথে পাগড়ীকে তুলনায় টেনেছেন। যদিও বোরখা কি এবং কেন তা পাগড়ীর থেকে আলাদা তা বোরখা পক্ষের আইনজীবী কালকেই কোর্টে পরিষ্কার করে দিয়েছেন। কিন্তু বামেরা তাদের সংখ্যাঘুঘু ভাইদের পাশে থাকার প্রবল প্রচেষ্টায় সেসব শুনতে নারাজ। তাই ভয় হয় এরপরে না বামেরা বোরখার সাথে জাঙিয়ার তুলনা শুরু করে এবং নিজেরা জাঙ্গিয়া ছাড়িয়া ধ্বজ ভাঙিয়া ফেলেন।
তবে ঘোমটা, সিঁদুর ইত্যাদির বিরুদ্ধে সরব বামেরা যেভাবে এগোচ্ছেন তাতে সময়ের অপেক্ষা, অচিরেই তারা সতীদাহ ফিরিয়ে আনার দাবীও তুলবেন বোর খার নিচে খ্যামটা নাচের সুবিধার জন্য। বাল্য বিবাহ, বহুবিবাহ এসবের সমর্থক তো তারা অনেকদিনই (হিন্দুদের ক্ষেত্রে নয় অবশ্য)। কাজেই যারা নিকাহ হালালার মতো ঘৃণ্য প্রথার সমর্থক হতে পারেন তারা সংখ্যাঘুঘু স্বার্থে সতীদাহ করতেও পিছপা হবেননা।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
Image Credits: The Economic Times