বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে। এখন তারা দেশ বিক্রি করতে চায়।
বুধবার (২১ জুন) প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফরের ফলাফল নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা এবং এ দেশের কোনো সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চান না।
তিনি বলেন, এখন আমি যদি বলি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ লিজ দিয়ে দেব, তাতেও আমার ক্ষমতায় থাকতে কোনো সমস্যা হবে না।
তবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে তিনি কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবেন না।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো বা কাউকে আক্রমণ করার মতো কোনো কাজ করতে দেব না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি। প্রায় ১১ লাখ মিয়ানমারের শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পরও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে বিবাদে জড়ায়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ওই ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁর সরকার সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো সঙ্গে বিদ্বেষ নয় নীতিতে বিশ্বাসী। আমরা তাদের (মিয়ানমার) সঙ্গে মারামারি বা ঝগড়া করতে যাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর শুধু এই দুই দেশের সঙ্গে নয় বরং আরও কয়েকটি বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্ককে আরও বেগবান করবে।
শেখ হাসিনা গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তাঁর সুইজারল্যান্ড সফরের সময়, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, ইউএনএইচসিআর প্রধান ফ্লিপো গ্র্যান্ডির সঙ্গে জেনেভায় ১৪ জুন তিনি সাক্ষাৎ করেন।
এ ছাড়া ওই দিন শেখ হাসিনা প্যালেস ডি নেশনসে সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরসেটের সঙ্গে বৈঠক করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দুই নেতার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যালাইস ডি নেশনসে ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ার্ক সামিট ২০২৩’–এর প্লেনারিতে তাঁর ভাষণ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট: সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর সরকারের নেতৃত্বে শ্রম খাতের সংস্কারে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
একই সঙ্গে তিনি তাঁর সরকারের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে গৃহীত বিভিন্ন প্রস্তুতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করেন।
শেখ হাসিনা মাল্টার প্রেসিডেন্ট ড. জর্জ ভেলা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাতামেলা সিরিল রামাফোসার সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন এবং একই স্থানে আইএলও মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাউংবো তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী আইএলও মহাপরিচালকের সদর দপ্তরে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দেন।
১৫ জুন শেখ হাসিনা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম-ডব্লিউইএফ আয়োজিত ‘নিউ ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি ইন স্মার্ট বাংলাদেশে’ একটি ইভেন্টে ভাষণ দেন।
এ ছাড়াও, তিনি ডব্লিউইএফ অফিসে ডব্লিউইএফের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। সন্ধ্যায় তিনি ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক ড. ওকোনজো-ইওয়ালা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। একই দিন সন্ধ্যায় তিনি একটি কমিউনিটি সংবর্ধনাতেও যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ১৬ জুন সকালে ঢাকার উদ্দেশে জেনেভা ত্যাগ এবং বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে সহযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর কাতার সফরে তিনি অন্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে তিন দিনব্যাপী কাতার অর্থনৈতিক ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেন।
এ ছাড়া, তিনি সম্মেলনে যোগদানকারী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে আয়োজিত একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা তৃতীয় কাতার ইকোনমিক ফোরামের উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে ভাষণ এবং একটি মতবিনিময় অধিবেশনে যোগ দেন।
শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি দেখিয়েছেন।
একই দিন শেখ হাসিনা আমিরি দেওয়ানে গিয়ে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ ছাড়া, র্যাফেলস টাওয়ারে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জেসিম আল থানি এবং দোহায় রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
শেখ হাসিনা দোহার কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে ভাষণ দেন।
এগুলো ছাড়াও কাতারের প্রতিমন্ত্রী সাদ বিন শেরিদা আল-কাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর হোটেলে সাক্ষাৎ করেন এবং একই স্থানে সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহও তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন।
কাতারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এলএনজি সরবরাহকারী রাসগ্যাসের কাছ থেকে আরও এলএনজি সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে সই করা পরবর্তী চুক্তির জন্য তাঁর পার্শ্ব বৈঠকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ঢাকার উদ্দেশে দোহা ছাড়ার আগে শেখ হাসিনা আওসাজ একাডেমি পরিদর্শন করেন।
শেখ হাসিনা কাতার ইকোনমিক ফোরাম-২০২৩এ যোগ দিতে গত ২২ থেকে ২৫ মে কাতার সফর করেন এবং আইএলও-এর একটি শীর্ষ সম্মেলনে ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট: সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’ এ যোগ দিতে ১৩ থেকে ১৬ জুন সুইজারল্যান্ড সফর করেন।