Skip to content

সুন্দরবনে ৫ বছরে বাঘ বেড়েছে ৮টি: প্রবণতার বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

সুন্দরবনে ৫ বছরে বাঘ বেড়েছে ৮টি: প্রবণতার বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে গত ৫ বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে ১১৪ টিতে পৌঁছেছে। গত ৫ বছরে সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে ৮টি। সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ রয়েছে বলে ক্যামেরা ট্রাকিং জরিপে উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংখ্যার দিক থেকে এটা উল্লেখযোগ্য না হলেও, প্রবণতার বিবেচনায় এটা গুরুত্বপূর্ণ।

বনবিভাগের বিভিন্ন পদক্ষেপেরে কারণে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।বিশেজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। তবে, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমিকে তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ করা গেলে, বাঘের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে।

সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অবাধ বিচরণ ও প্রতিনিয়ত বাঘের শাবকের দেখা মিলছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে ও বাওয়ালীরা।

বন বিভাগের তথ্য মতে, ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিলো ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি এবং এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ রয়েছে বলে জানানো হয়।

১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর, ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান।২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি।

১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। সেই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়। ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদশ অংশে বাঘের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে দাড়ায় ১০৬ টিতে। হঠাৎ করে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০টি থেকে ১০৬ টিতে এসে দাঁড়ালে সারাবিশ্বে ব্যাপক আলাচনা শুরু হয়। সর্বশেষ বাঘ জরিপে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চলতি বছর আবার শুরু বাঘ গননার কাজ। বর্তমানে সুন্দরবনের বাঘের আনাগোনা যে ভাবে দেখা যাচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) এজেডএম হাছানুর রহমান বলেন, “বাঘের সংখ্যা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সুফলও দেখা যাচ্ছে।”

সুন্দরবনসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতি অসিত কুমার মণ্ডল বলেন, “লোকালয়ে চলে আসা বাঘ নিরাপদে বনে ফেরাতে ইতোমধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যার ফলে এখন আর মানুষ বাঘ পিটিয়ে মারে না।”

কয়রার সুন্দরবন মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য রেজাউল করিম কারিম বলেন, “সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে এটা খুশির বিষয়। বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনকে নিরাপদ করতে পারলে অবশ্যই বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।”

কয়রা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, “চোরা শিকারীদের প্রধান টার্গেট বাঘ। তারা বাঘ শিকার করে বিভিন্ন দেশে পাচার করে থাকে। এই চক্র যাতে করে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, “বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল ফাঁড়ি। পাশাপাশি চোরা শিকারীদের তৎপরতা বন্ধে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট প্রেট্রোলিং ও ফুট প্রেট্রোলিং চালু করা হয়েছে।”

বড় বেড়ালের উপস্থিতি বনের পরিবেশ ও প্রতিবেশের সুস্থতা পরিমাপের অন্যতম সূচক; জানান বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র: ভয়েজ অব আমেরিকা