Saturday, March 15, 2025

সপ্তাহে শীর্ষে

প্রাসঙ্গিক বার্তা

সুদানের গৃহযুদ্ধে শিশুরা নৃশংসতার শিকার, বলছে ইউনিসেফ ও এমএসফ

জাতিসংঘের শিশুদের কর্মসূচি, ইউনিসেফ’এর প্রধান বৃহস্পতিবার বলেন যে সুদানের গৃহযুদ্ধের মুখে সে দেশের ১ লক্ষ ৬০ হাজার শিশু দূর্ভোগের শিকার হয়েছে, অনেকেই প্রতিদিন সহিংসতা,অনাহার, ব্যাধি এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বলেন, “ তাদের ঠিক দরজার সামনেই, তাদের বাড়ির আশেপাশে, তাদের স্কুল ও হাসপাতালে এবং সুদানের বহু শহর, নগর ও গ্রামে যুদ্ধ চলছে”।

তিনি বলেন বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা ঝুঁকির মুখে রয়েছে । ১৩ লক্ষেরও বেশি শিশু দেশের পাঁচটি সর্বাধিক দূর্ভিক্ষ-পীড়িত এলাকায় বাস করছে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় আরও তিরিশ লক্ষ শিশু কলেরা, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর মতো রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্তত ১ কোটি ৬৫ লক্ষ তরুণ-তরুণী এখন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না।

রাসেল বলেন গত বছর সুদানের ১৮টি রাজ্যের মধ্যে ৯ টিতে ২২১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন এদের দুই-তৃতীয়াংশই মেয়ে।

তিনি বলেন, “যে সব ঘটনার রেকর্ড রয়েছে তার মধ্যে ১৬টি শিশুদের বয়স ছিল পাঁচ বছরের কম। চারজনের বয়স ছিল এক বছরেরো কম”।

তিনি এই বৈরিতার অবসান চাইলেও বলেন এই শিশুরা যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছে তা কখনই মুছে যাবে না।

তিনি বলেন, “ এই শিশুরা আতংকের অভিজ্ঞার মধ্য দিয়ে গেছে এবং যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা অস্ত্রবিরতি বা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের সাথে সাথে মুছে যায় না। তাদের নিরাময়ের জন্য এবং তারা যাতে তাদের জীবন আবার গড়ে তুলতে পারে সে জন্য তাদের প্রয়োজন অব্যাহত পরিচর্যা ও সহযোগিতা”।

ডক্টার্স উইদাউট বর্ডার্স(এমএসএফ) ‘এর প্রধান নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন যে তাদের লোক সুদানে যৌন সহিংসতার প্রমাণ পেয়েছে, গত বছর তারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছে এমন ৩৮৫ জনের চিকিৎসা করিয়েছে।

এমএসএফ’এর মহাসচিব ক্রিস্টফার লকইয়ার বলেন, “ পাঁচ বছরের কম শিশুসহ, এক বিশাল সংখ্যক শিশুদের প্রায়শই সশস্ত্র পুরুষরা ধর্ষন করেছে। প্রায় অর্ধেকজনকে মাঠে কাজ করার সময় আক্রমণ করা হয়। নারী ও মেয়েরা যে অরক্ষিত তাই-ই শুধু নয় , তাদেরকে নৃশংস ভাবে নিশানা করা হচ্ছে”।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে খারতুমে দু জন প্রতিদ্বন্দ্বি জেনারেলের মধ্যে যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয় তার শিকার হচ্ছে শিশুরা। আর তখন থেকে এই সংঘাত দারফুর অঞ্চলসহ দেশটির অধিকাংশ স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে।আধা-সামরিক র‍‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস সুদানের সশস্ত্র বাইহনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং জাতিসংঘ বলছে উভয় পক্ষই মারাত্মক ভাবে মানবাধিকার লংঘন করেছে।

এমএসএফ প্রধান পরিষদকে বলেন ছয় সপ্তাহ আগে তিনি সুদানে ছিলেন এবং রাজধানীর কাছে অমদুরমানে তাদের সহযোগী একটি হাসপাতালের “ চূড়ান্ত ধ্বংসযজ্ঞের” তিনি একজন স্বাক্ষী।

তিনি ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন যে বিভিন্ন পক্ষকে যুদ্ধ শেষ করার জন্য তাঁর বার বার আহ্বানে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

পরে তিনি সংবাদদাতাদের বলেন সুদানের পরিস্থিতি “ লক্ষ লক্ষ লোকের জন্য এতটাই ভয়াবহ যে এটি প্রতিদিনই আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়”।

ইউনিসেফের পরিচালক বলেন এ বছর এই সংস্থার প্রয়োজন কোটি কোটি ডলার যাতে সুদানের ৮৭ লক্ষ শিশুকে খাদ্য, পানি ও পয়ঃব্যবস্থা, সুরক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদানের জন্য এই অর্থের প্রয়োজন। তিনি এবং লকইয়ার উভয়ই পরিষদের প্রতি এই আহ্বান জানান যে তারা যেন যুদ্ধরত পক্ষগুলিকে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে।

–ভয়েজ অব আমেরিকা

পাঠক প্রিয়