সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিদ্রোহী বাহিনীর নেতাও যে ন্যায্যতার লড়াইয়ে অত্যাচারী শাসনকে উৎখাত করতে পারে সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে উৎখাতকারী জোলানি তার দৃষ্টান্ত।
আবু মোহাম্মদ আল-জোলানিকে ধরার জন্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। এক দশকেরও বেশি আগে তারা জোলানিকে সন্ত্রাসী হিসাবে সনাক্ত করেছিল। বলেছিল, তার বাহিনী “সিরিয়া জুড়ে অনেক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।”
সেই জোলানির আক্রমণ এত দ্রুতগতিতে বাসার আল আসাদকে ফেলে দেবে তা বিশ্বকে অবাক করেছে।
ফলস্বরূপ, জোলানি এখন ২৩ মিলিয়নেরও বেশি সিরিয়ানদের ডি ফ্যাক্টো নেতা। কয়েক মিলিয়ন সিরিয়ান শরণার্থী যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের অনেকেই এখন দেশে ফিরতে চাইবে।
তাহলে জোলানি কে এবং সে কি চায়? ২০-এর দশকের গোড়ার দিকে সিরীয়া থেকে একজন “বিদেশী যোদ্ধা” হিসাবে জোলানি ২০০৩ সালের বসন্তে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ইরাকে পাড়ি জমান। এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার হন। মার্কিন-চালিত কুখ্যাত ইরাকি কারাগার ক্যাম্প বুক্কায় তার স্থান হয়, যেটি পরিণত হয়েছিল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির জন্য মূল নিয়োগের ক্ষেত্র, যা হয়ে উঠবে ইসলামিক স্টেট।
ক্যাম্প বুক্কা থেকে মুক্তি পেয়ে জোলানি সিরিয়ায় ফিরে আসেন এবং আবু বকর আল-বাগদাদির সমর্থনে আসাদের বাথিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। বাগদাদি পরে আইএসআইএসের প্রতিষ্ঠাতা হয়ে ওঠেন।
সে বলয় থেকে বেরিয়ে জোলানি জাবহাত আল-নুসরা (ইংরেজিতে “দ্য ভিক্টরি ফ্রন্ট”) নামে একটি জঙ্গি গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠন আল কায়েদার প্রতি অনুগত ছিল। তবে মার্কিন নৌ-বিশ্লেষণ কেন্দ্রের মতে ২০১৬ সালে জোলানি সেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী থেকে আলাদা হয়ে যান।
তারপর থেকে জোলানির নেতৃত্বাধীন গ্রুপ হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামে পরিচিত। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লক্ষ লক্ষ লোককে শাসন ও মৌলিক পরিষেবা প্রদান করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
জোলানি খুব কমই পশ্চিমা সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকার দেন। তবে বৃহস্পতিবার সিএনএনের জোমানা কারাদশেহের সাথে কথা বলেছেন। সেই সাক্ষাত্কারে জোলানি আইসিস এবং আল কায়েদার মতো সুন্নি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি থেকে নিজের সাতন্ত্র প্রমাণের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “যারা ইসলামিক সরকারকে ভয় পায় তারা এটির ভুল বাস্তবায়ন দেখেছে বা এটি সঠিকভাবে বোঝে না।” আলাউই এবং খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে তিনি বলছেন, “এই সম্প্রদায়গুলি শত শত বছর ধরে এই অঞ্চলে সহাবস্থান করেছে এবং তাদের নির্মূল করার অধিকার কারও নেই।”
৪২ বছর বয়স্ক জোলানি সিএনএনকেও বলেছেন, তিনি দুই দশক আগে ইরাকে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার পর থেকে পরিপক্ক হয়েছেন। “তখনকার বিশ বছরের তরুণ এখন আলাদা ব্যক্তিত্বের অধিকারী।”
জোলানির সাম্প্রতিক তুষ্টিকর বিবৃতিগুলির সত্যতা এবং দীর্ঘমেয়াদে তার অর্থ কী হতে পারে তা মূল্যায়ন করা কঠিন। তবে তার লোকেরা সিরিয়ার শহরগুলি দখল করার সময় আইএসআইএস-স্টাইলে সাম্প্রদায়িক গণহত্যা চালায়নি৷
সিরিয়া থেকে গৃহযুদ্ধের সংবাদ পরিবেশনের সময় ১২ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া আমেরিকান সাংবাদিক অস্টিন টিসকে খুঁজে পেতে জোলানি সহযোগিতা করলে আমেরিকার সঙ্গে তার সম্পর্কের একটি ইতিবাচক সূচনা হতে পারে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বিডেন রবিবার বলেছেন তিনি বিশ্বাস করেন অস্টিন এখনও বেঁচে আছেন।
তাহলে “ইনক্লুসিভ” বোতলে ভরিয়ে বিক্রি করা পুরাতন মদের মতো জোলানি কি নতুন চেহারায় একজন পুরানো জিহাদি? নাকি তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের মতো একজন ইসলামপন্থী নেতার ছাঁচে আছেন, যিনি উদার গণতন্ত্রী না হলেও তার জনসংখ্যার উপর সাম্প্রদায়িক নির্মূল অভিযান চালাবেন না?
তালেবানরা ২০২১ সালে পুনরায় আফগানিস্তান দখল করার আগে যেভাবে নরম হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল এখন কিন্তু আর তা নেই। তারা সেই জঙ্গি ইসলামিক স্টাইলেই শাসন করছে। আইএসআইএস এক দশক আগে ইরাকের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নেওয়ার পর সুন্নি ছাড়া প্রায় সব জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নির্মমভাবে দমন করেছিল। অতএব আলাউই এবং খ্রিস্টানদের প্রতি জোলানি এখন যে আচরণ দেখাচ্ছেন তা তার প্রকৃত রঙ কিনা তা সময়ে বলা যাবে।
– এশিয়া বার্তা ডেস্ক
সূত্র: সিএনএন পরিবেশিত সংবাদ ভাষ্য অবলম্বনে