সাত বছর পর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ হাজার কোটি ডলারের নিচে নামলো। সোমবার দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ২ হাজার ৯৭০ কোটি ডলার।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি এবং আমদানি দায় মেটাতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) সবশেষ অর্থ পরিশোধের পর, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে যায়।
উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে একটি অপ্রচলিত গণনা পদ্ধতি অনুসরণ করে। যাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ প্রকাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে দেখানো হয়। তবে, আগামী মুদ্রানীতিতে রিজার্ভ হিসাব করতে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভের হিসাব বাংলাদেশ এখন দু’ভাবে করছে। প্রথমত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে দেখানো হচ্ছে। আরেকভাবে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) সহ বিভিন্ন তহবিলের অর্থ বাদ দিয়ে রিজার্ভ দেখানো হচ্ছে।
২০২১ সালে আইএমএফ প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলো যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বইতে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার পরিমাণ দেখানো হয়েছে, যা ইডিএফ এবং অন্যান্য তহবিলের অন্তর্ভূক্ত। ৮০০ কোটি ডলারের সিংহভাগ রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) বরাদ্দ; প্রকৃতপক্ষে যা ৭০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি বৃহৎ ঋণ রয়েছে, যা ৫২ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে দেয়া হয়েছে। আর শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়া হয়েছে।
বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ রিজার্ভ গণনার ক্ষেত্রে মনে করেন, যা ব্যয় করা যায় না, তা গণনা করা উচিত নয়। এই নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারি পরিসংখ্যান থেকে ৮০০ কোটি ডলার বিয়োজন করা উচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংক অবশেষে আইএমএফের সঙ্গে তাদের লেনদেনের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে এবং রবিবার তারা ঘোষণা করে যে আগামী ১ জুলাই তার পরবর্তী অর্ধ-বার্ষিক মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় রিজার্ভ গণনার জন্য আইএমএফের প্রস্তাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার কিছুটা চাপে পড়েছে, কারণ অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের প্রবাহ এবং রপ্তানি আয় হ্রাসের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ রিজার্ভ ৩০০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি চলে এসেছিলো ২০১৫-১৬ সালে। ২০১৬ সালের জুনে ছিলো ৩০৩৫ কোটি ডলার। প্রায় ৭ বছর পর সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সেই সময়ের স্তরে নেমে গেছে। প্রকৃতপক্ষে, ৮ মাস আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ ৩০০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল।
২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে আকু-কে ১৭৩ কোটি ডলার অর্থ দেয়ার ফলে সরকারি রিজার্ভের পরিমাণ ৩৮৯৪ কোটি ডলার থেকে ৩৭০৬ কোটি ডলারে নেমে আসে। ৮০০ কোটি ডলার বিয়োগ করলে, প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ দেখা যায় ৩০০০ কোটি ডলারের নিচে।