টানা সাত ঘণ্টার অভি
যানের পর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার উকিলপাড়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে নব্য জেএমবির চার সদস্যের আত্মসমর্পণের কথা জানিয়েছে র্যাব।
অভিযান শেষে শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন—র্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, “চার জঙ্গি আত্মসমর্পণ করার পর ওই বাড়িতে এখন আর কেউ নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আত্মসমর্পণ করা চারজনই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য। তাঁরা উত্তরবঙ্গে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।
আশিক বিল্লাহ বলেন, “এর আগে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানায এলাকায় চারজন জঙ্গি ধরা পড়ে। তাদের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী, এই বাড়িটিতে জঙ্গি আস্তানা রয়েছে বলে জানা যায়।”
আত্মসমর্পণকারীরা হলেন; কিরণ ওরফে শামীম ওরফে হাবিব (২২), পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নাইমুল ইসলাম (২১), দিনাজপুরের আতিউর রহমান (২২) ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার আমিনুল ইসলাম শান্ত (২৫)।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, তারা নব্য জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। এদের মধ্যে কিরণ পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে নব্য জেএমবির দ্বিতীয় প্রধান।
এর আগে রাজশাহীতে আটক চারজন হলেন; জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের আমির নাটোরের বাগাতিপাড়ার জুয়েল আলী ওরফে হাবিবুল্লাহ ওরফে মাহমুদ (৩৩), খুলনার খালিশপুরের আশরাফুল ইসলাম (২৪), পাবনার সাঁথিয়ার আলিফ হোসেন (২০) এবং সাতক্ষীরার নলতার জুয়েল শেখ (২২)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এক ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলেও অপরাধ কমেনি।”
“যারা সংগঠিত অপরাধ করে, তারা আপাতদৃষ্টিতে বাসায় বসে থাকলেও অপরাধের নানা পরিকল্পনা করছে। তারা রিক্রুটমেন্টসহ সব ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে,” বলেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য উল্লেখ করে ফারজানা রহমান জানান, এই কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও সাইবার অপরাধের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ ছিল।
“এর অর্থ জঙ্গিরা সংগঠিত আছে, সুযোগের অভাবে হয়তো নতুন করে হামলা করতে পারছে না,” বলেন তিনি।
এই অপরাধ বিশেষজ্ঞের মতে, “গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের ফলে দেশে জঙ্গি হামলা কমেছে। কিন্তু জঙ্গিবাদ বা এই আদর্শ নিঃশেষ হয়ে যায়নি।”
“জঙ্গিবাদের সাথে লড়তে হবে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে,” জানিয়ে খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, “জঙ্গিদের শনাক্ত ও আটক করা ছাড়াও প্রয়োজন ছিল জঙ্গিবাদের চিন্তা বা আদর্শ যাতে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে সেটা নিয়ে কাজ করা। এই জায়গাতে কম কাজ করা হয়েছে।”
উত্তরবঙ্গে প্রশিক্ষণ চালাচ্ছে জঙ্গিরা
আত্মসমর্পণ করা চার জঙ্গি উত্তরবঙ্গে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল বলে অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার।
তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গে জঙ্গি সংগঠন কাজ করছিল বলে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। উকিলপাড়ায় জঙ্গিরা মাসিক সভার জন্য মিলিত হয়েছিল।”
মোস্তফা সারোয়ার বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত এগারোটার দিকে জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার মাহমুদকে রাজশাহী থেকে আটক করা হয়। তাঁকে নিয়ে ভোর চারটার দিকে উকিলপাড়ার বাড়িটি শনাক্ত করা হয়।”
তিনি বলেন, “ওই সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গি সদস্যরা বাড়ির ভেতর থেকে চার-পাঁচ রাউন্ড ফায়ার করে। এরপরে বাড়ির আশপাশ থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।”
পরে সকাল ১০টার দিকে র্যাব চূড়ান্ত অভিযান শুরু পরপরই ওই চারজন আত্মসমর্পণ করে বলে জানান মোস্তফা সারোয়ার।
“এখানে আরো কিছু জঙ্গি সদস্যের আসার কথা থাকলেও তাদের কোনো নেতার নির্দেশে বাকিরা আসেনি। এখান থেকে মূলত জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো,” বলেন তিনি।
মোস্তফা সরোয়ার বলেন, “এই জঙ্গিরা ২০-২৫ দিন আগে বাসাটা ভাড়া নিয়েছিল। তাবলীগের ছদ্মবেশে এলাকায় থাকা এবং আড়ালে জেএমবি কার্যক্রম পরিচালনা করাই ছিল তাঁদের মূল কৌশল।”
শাহজানপুর উপজেলার উকিলপাড়ার বাসিন্দা আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “অল্প কিছুদিন হলো ওই চারজনকে এই এলাকায় দেখা যাচ্ছিল। ছাত্র পরিচয়ে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল তাঁরা। চালচলন দেখে অবশ্য আমরা ভেবেছিলাম তারা তাবলীগ জামায়াত করত।”
“তবে র্যাব অভিযান চালানোর পরে জানতে পারি তারা জঙ্গি। এখানে এভাবে জঙ্গি আস্তানা করেছিল, এটা ভাবতেই শিউরে উঠছি,” বলেন আতাউর।