সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শয্যা দ্বিগুণ তিন গুণ বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু আনুপাতিক হারে চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবলের পদ সৃজন করা হচ্ছে না। শয্যা অনুপাতে জনবলের পদ সৃজনের তালিকা অনুমোদনের জন্য বছরের পর বছর মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকে। শয্যা বাড়ানো হলেও এই পর্যন্ত দেশে সরকারি কোনো হাসপাতালে ৫০০ শয্যার বেশি জনবলের পদ সৃজন করা হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসকরা জানান, শয্যা বাড়লেও চিকিত্সকসহ জনবলের অর্গানোগ্রামের কোনো পরিবর্তন নেই। পদোন্নতি, পদায়ন, ব্যবস্থাপনা নীতিমালা সময়োপযোগী করা হচ্ছে না। চিকিৎসায় বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী প্রচুর চিকিৎসক চাকরির জন্য ঘুরছে। প্রতি বছরই কোর্স সম্পন্ন করে অসংখ্য চিকিৎসক বের হচ্ছেন। পদোন্নতি জটিলতা নিরসন ও শয্যার আনুপাতিক হারে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের পদ সৃজন না হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবায় সুফল মিলছে না।
চিকিৎসকরা জানান দেশে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করা প্রচুর চিকিৎসক রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত কনসালট্যান্টের পদ সৃজন না করায় নিয়োগ পাচ্ছে না পাঁচ বছর মেয়াদি ডিগ্রিধারী চিকিৎসকরা। উপজেলা সদর হাসপাতালগুলোতে ৫০ শয্যার হলে ১০ জন ও ৩১ শয্যার হলে চার জন কনসালট্যান্টের মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে। চিকিৎসকসহ জনবলের অর্গানোগ্রামের পরিবর্তন করা হচ্ছে না। এখানে চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ পদ হলো জুনিয়র কনসালট্যান্ট। অন্যান্য পদের মধ্যে রয়েছে মেডিক্যাল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন ও আরএমও। এখানে সিনিয়র কনসালট্যান্টের কোনো পদ সৃজন করা হয়নি। আবার নীতিমালা অনুসারে ৫০ ও ৩১ শয্যার হাসপাতালগুলোতে সিনিয়র কনসালট্যান্টের পদ সৃজনের সুযোগ নেই। চিকিৎসকদের অভিযোগ পদোন্নতি নিয়ে নানা জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে চিকিত্সকরা হতাশ। বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্তদের চাকরি স্থায়ী হতে তিন বছর সময় লাগে। এদের মধ্যে অনেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এফসিপিএস ও এমডি কোর্স সম্পন্ন করার পরও পদোন্নতি পাচ্ছে না। নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতি না পাওয়ায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি সম্পন্নকারী চিকিৎসকরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৫০০ শয্যা থেকে দুই দফায় বৃদ্ধি করে ২ হাজার ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজারের ওপরে রোগী চিকিৎসাধীন থাকে। কিন্তু ৫০০ শয্যার জনবলের অর্গানোগ্রামের জনবল দিয়ে চিকিৎসাসেবা পরিচালিত হচ্ছে। হাসপাতালে দুপুর আড়াইটার পর থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন রোগীরা সিনিয়র চিকিৎসকদের সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মেডিক্যাল কলেজগুলোতে অনেকগুলো পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু রয়েছে। কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকরা কলেজে পাঠদান, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষা, সেমিনার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রোগীরা সিনিয়র চিকিৎসকদের তেমন সেবা পায় না। সিনিয়র চিকিৎসকদের ওপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণও নেই। তাই কলেজ সংযুক্ত হাসপাতালগুলোতে কর্তৃপক্ষের আওতায় কনসালট্যান্টের পদ সৃজন প্রয়োজন রয়েছে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান ইত্তেফাককে বলেন, রোগীরা সিনিয়র চিকিৎসকদের সব সময় কাছে পাই না। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে কনসালট্যান্ট চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন। এতে চিকিত্সাসেবার মান বাড়বে। আমাদের মাত্র সাত-আট জন কনসালট্যান্ট রয়েছে। জরুরি বিভাগে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের জন্য কনসালট্যান্টসহ ১০৮ জন জনবল অনুমোদনের ফাইল মন্ত্রণালয়ে পড়ে রয়েছে।’