Skip to content

সম্প্রীতির আহ্বানে কল্পজাহাজ ভাসা উৎসব

সম্প্রীতির আহ্বানে কল্পজাহাজ ভাসা উৎসব

কক্সবাজারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস ওড়ানোর পর রীতি অনুযায়ী নদীতে কল্পজাহাজ ভাসানো হয়। রোববার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে বাঁকখালী নদীর চেরাংঘাটে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূণিমা উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

পানিতে ভাসছে পঙ্খীরাজ, ড্রাগন, বিহার-মন্দির, বিশাল হাঁসসহ আরও কত কিছু! বাঁশ, কাঠ, বেত এবং রঙিন কাগজের কারুকাজে তৈরি এসব কল্পজাহাজ দেখতে নদীর দুই পাড়ে ভিড় হাজারো নারী-পুরষ। তাদের বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, অন্যরা দর্শনার্থী। নানা বাদ্য বাজিয়ে নাচ-গানে ব্যস্ত শিশু-কিশোর-যুবকরা। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক মহামিলন মেলা। উৎসবের আয়োজন করেছে রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব কমিটি। উৎসবে রামু উপজেলার ছয়টি বৌদ্ধ পল্লীতে নির্মিত ৮টি কল্পজাহাজ অংশ নেয়।

৭-৮টি কাঠের নৌকার ওপর বসানো হয়েছে একেকটি কল্পজাহাজ। রঙ-বেরঙয়ের কাগজ, বাঁশ-কাঠ ও বেতের অর্পূব কারুকাজে তৈরি প্রতিটি জাহাজই নজর কাড়ছে। এসব জাহাজের মাইকে বাজছে বুদ্ধ কীর্তন।

উৎসবে আসা রামু সরকারি কলেজের শিক্ষক মানসী বড়ুয়া বলেন, ‘এই উৎসব আমাদের অস্প্রদায়িক চেতনার তাগিদ দেয়। উৎসবটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও সবার অংশগ্রহণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয়। চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে আসা বিমল বড়ুয়া বলেন, মানুষের ভিড় দেখে ভালো লাগে তাই প্রতিবছর এখানে চলে আসি। মনভরে উৎসব উপভোগ করার পর বাড়ি ফিরে যাই। 

জাহাজ ভাসা উৎসবের এক পাশে চলে ধর্মীয় সভা। উৎসব কমিটির সভাপতি অর্পন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাপ্তি চাকমা, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মোস্তফা প্রমুখ।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘সকল ধর্ম,বর্ণ ও গোত্রের মানুষ এই উৎসবে সমবেত হয়েছেন এবং আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাংলার চিরায়িত ঐতিহ্য। এ জাহাজ ভাসা উৎসব তারই অনন্য উদাহারণ। এ ধরণের উৎসব বাঁচিয়ে রাখতে সবাইকে কাজ করতে হবে।’

অর্ধশতাব্দীকাল ধরে রামুতে এ উৎসবের আয়োজন করা হলেও ২০১২ সালে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ঘটনার পর দুই বছর এ উৎসব উদযাপন হয়নি। দু’বছর পর আবারো প্রতি বছর থেকে উৎসবের আমেজে তা পালন করা হচ্ছে। বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলিম সকল সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে এ উৎসব অসাম্প্রদায়িক মিলন মেলায় পরিণত হয়।



বার্তা সূত্র