Skip to content

সংখ্যালঘুদের মন জয়ে ‘মোদি মিত্র’-এ ভরসা গেরুয়া শিবিরের

সংখ্যালঘুদের মন জয়ে 'মোদি মিত্র'-এ ভরসা গেরুয়া শিবিরের

প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের সহারানপুর লোকসভার অধীন দেববন্দ বিধানসভায় আজ এক গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন আয়োজন করে বিজেপির মাইনরিটি সেল। উত্তর ভারতে ইসলামিক শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ‘দারুল উলুম’-এর শহর নামে পরিচিত দেববন্দে এদিন মোদী ভক্ত ১৫০ মুসলিম বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষাবিদের হাতে তুলে দেওয়া হল ‘মোদি মিত্র’ শংসাপত্র। এই সকল শংসাপত্র প্রাপকদের মধ্যে একটি মিল সর্বাত্মক – এঁরা প্রত্যেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভারতের মুসলিম সমাজের শক্র নয়, বরং মিত্র ও হিতৈষী রূপেই দেখেন, আর সেই কারণেই তাঁদের এই বিশেষ স্বীকৃতি। বিজেপি কেন্দ্রীয় শিবির সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সারাদেশে প্রায় ৩.৫০ লক্ষ ‘মোদি মিত্র’ তৈরি করতে চায়।

বিগত ৯ বছরে মোদী সরকারের কৃতিত্বের তালিকা যতই দীর্ঘায়িত হোক না কেন; আজও বিজেপি দেশের সিংহভাগ সংখ্যালঘুদের মনের নাগাল পাননি বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৪ সালে মোদী জমানার সূচনা থেকেই দেশের অনুন্নত শ্রেণী, বিশেষ করে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় বারবার হিংসা ও সন্ত্রাসের সম্মুখীন হয়েছে৷ ‘তিন তালাক’ আইন বা দেশের সংখ্যালঘু সমাজের হিতস্বার্থে জরুরি কেন্দ্রীয় প্রকল্প শুরু করলেও, প্রায় সারা বছর ধরে উগ্র হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন, ঘৃণার ভাষণ, গণপিটুনি বা লাগামছাড়া সন্ত্রাসের সাক্ষী হয়েছে দেশের মুসলমানরা৷ স্বাভাবিক ভাবেই মোদির বিরুদ্ধে প্রকট হয়েছে ‘মুসলিম-বিদ্বেষী’, বা অন্যান্য বিরুদ্ধ ধ্যানধারণা। দেশের অনুন্নত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনেও সে নিয়ে রয়েছে চাপা ক্ষোভ, নির্বাক অভিমান। ২০২৪ এর সাধারণ নির্বাচনের আগে এহেন সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে এবং দেশের অনুন্নত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের আস্থা জিততে এবার ‘মোদি মিত্র’ সার্টিফিকেট জারি করছে কেন্দ্রীয় বিজেপি।

উল্লেখ্য আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে হাতে সময় থাকতেই জরুরি হোমওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছে বিজেপি৷ ২০২৪-র মহারণের আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দুর্বল সাংগঠনিক ভিত্তি সম্পন্ন আসন গুলিকে সবার আগে খুঁজে বার করার কাজ চালানো হচ্ছে বিজেপির তরফে৷ নয়াদিল্লিতে দলীয় সূত্রের দাবি, এই কাজ করতে গিয়েই সামনে এসেছে ৬৫টি বিশেষ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত লোকসভা আসন, যেখানে দলের শক্তি তুলনামূলক ভাবে দুর্বল বলে মনে করা হচ্ছে৷  কী ভাবে এই আসন গুলিতে দলের ভিত্তি মজবুত করা যাবে তার উপায় খুঁজতে গিয়ে অভিনব পন্থা ভাবা হয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে৷ এই আসনগুলির বাসিন্দা দলের সক্রিয় কর্মী, সমর্থক ১ লক্ষ ভোটারকে চিহ্নিত করে তাদের হাতেই তুলে দেওয়া হবে প্রচারের দায়িত্ব, ভেবেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷ আজ তার সলতে পাকানোর কাজ শুরু হল উত্তরপ্রদেশের দেববন্দে। এখানেই শেষ নয়, এই এক লক্ষ সক্রিয় কর্মী, সমর্থককে ‘মোদি-মিত্র’ উপাধিতে ভূষিত করা হবে৷ চলতি বছরের শেষে দিল্লিতে রামলীলা ময়দানে তাদের সঙ্গে মিলিত হবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে৷ তিনিই নিজের হাতে ‘মোদি-মিত্র’-দের বিশেষ সম্বর্ধনা দেবেন, উদ্বুব্ধ করবেন লোকসভা নির্বাচনের আগে, এমনই দাবি জানানো হয়েছে নয়াদিল্লিতে বিজেপি সূত্রে৷

তাত্‍পর্যপূর্ণ হল, আগামী লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক যে বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে তা বুঝতে বাকি নেই গেরুয়া শিবিরের৷ প্রথমে হিমাচল, পরে কর্ণাটক বিধানসভা ভোটের ফলাফলে সুস্পষ্ট ভাবে দেখা গিয়েছে যে সংখ্যালঘু শ্রেণী তাদের সমর্থনের ঝুড়ি উপুর করে ভোট দেয়নি বিজেপিকে৷ এর পরেই তড়িঘড়ি গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত লোকসভা আসন গুলিতে দলের সাংগঠনিক শক্তির বিশ্লেষণের কাজ শুরু করেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷ একই সাথে সংখ্যালঘুদের মনে মোদি নামের ‘ভীতি’ও দূর করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতেই ‘মোদি মিত্র’ প্রকল্পের অবতারণা। এই মুসলিম ‘মোদি মিত্র’রাই কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে৷ মোদী সরকারের রাজত্বে কিভাবে তাদের জীবন উন্নত হয়েছে, জনসমক্ষে তুলে ধরবেন সেই সব তথ্য, দাবি করা হয়েছে দলীয় সূত্রে৷ এই পরিকল্পনা মাথায় রেখেই এগোতে চাইছে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন জয়ে আরও একবার তুরুপের তাস হয়ে উঠতে হতে পারে প্রধানমন্ত্রী মোদির ব্যক্তিগত ক্যারিশমাই, এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ৷

বার্তা সূত্র