শেরপুরের নৃ-জনগোষ্ঠী কোচ ও হাজং সম্প্রদায়ের নারীরা ঐতিহ্যবাহী পোষাকে কোলের শিশু পিঠে বেঁধে অন্যরকম এক দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
বুধবার বিকালে ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া আদর্শ গ্রাম স্কুল মাঠে দি ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্যা ওয়ার্ল্ডস ইনডিজিনাস পিপলস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে এই প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করা হয়।
এতে অংশগ্রহণকারী কোচ ও হাজং সম্প্রদায়ের ৬ নারীর মধ্যে নওকুচি গ্রামের রুকনা কোচ প্রথম এবং মেঘলা কোচ দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। জয়ী দু’জনকেই সুগন্ধি সাবান এবং নগদ ১০০ টাকা করে পুরষ্কার দেওয়া হয়। এছাড়া অংশগ্রহণকারী সকল নারীকেই শুভেচ্ছা উপহার দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ‘কোচ’ সম্প্রদায়ের নববর্ষ উৎসব ‘বিহু’
নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জনউদ্যোগ শেরপুর, বাংলাদেশ কোচ আদিবাসী ইউনিয়ন, ঝিনাইগাতী হাজং সমাজ কল্যাণ সংগঠন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসআইএল-বাংলাদেশ ও আইইডি যৌথভাবে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
নারীদের এ খেলা ছাড়াও নৃ-জনগোষ্ঠীর পুরুষদের জন্য প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়। ফুটবল খেলায় কোচ ও হাজং সম্প্রদায়ের লোকদের সমন্বয়ে গড়া চেংড়া (তরুণ) একাদশ বনাম বুইড়া (প্রবীণ) একাদশ নামে দু’টি দল অংশগ্রহণ করে। খেলায় টাইব্রেকারে চেংড়া একাদশ ৪-১ গোলে বুইড়া একাদশকে হারিয়ে জয়লাভ করে। নির্ধারিত সময়ে খেলাটি গোলশূন্য থেকে অমিমাংসিত ছিলো। খেলা শেষে বিজয়ী ও বিজিত দলের খেলোয়াড়দের মাঝে শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশ কোচ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রুয়েল কোচ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রীবরদী উপজেলা চেয়ারম্যান এডিএম. শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক আমিরুজ্জামান লেবু, শ্রীবরদী টিডবি’ওএ চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম. সাংমা, জনউদ্যোগ আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, হাজং নেতা সুখরঞ্জন হাজং, শিক্ষক যুগল কিশোর কোচ, মিঠুন কোচ, হাকিম বাবুল প্রমুখ।
আরও পড়ুন: পুষনা উৎসবে মেতেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা
অনুষ্ঠানে নৃ-জনগোষ্ঠির দুই মুক্তিযোদ্ধা এবং সদ্য এসএসসি উত্তীর্ণ কোচ ও হাজং সম্প্রদায়ের ৩০ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সম্মাননাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন-ঝিনাইগাতী উপজেলার নওকুচি এলাকার মতিলাল বর্মন এবং ধানশাইল গ্রামের গোবিন্দ চন্দ্র বর্মন। অতিথিরা সম্মাননাপ্রাপ্তদের হাতে ফুলেল শুভেচ্ছা, ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী তুলে দেন।
তাছাড়া কোচ এবং হাজং সম্প্রদায়ের তিনটি নৃত্য দল নিজস্ব সংস্কৃতির মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশন করেন। এ অনুষ্ঠান থেকে নৃ-জনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ নৃ-জনগোষ্ঠীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের নৃ-জনগোষ্ঠিদের জন্য পৃথক ভুমি কমিশন গঠন এবং নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় শেরপুর জেলায় একটি নৃ-জনগোষ্ঠীদের কালচারাল একাডেমি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা ও দাবি তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে কোচ, গারো, হাজং, বর্মন, বানাই, রাজবংশী, হদি জনগোষ্ঠীর শতাধিক নারী-পুরুষ ছাড়াও শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনীতিক অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: কয়রায় নৃ-গোষ্ঠীর নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ: আটক ৬