Skip to content

শিক্ষার উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপকদের কাছে কিছু প্রত্যাশা

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছয় জন বরেণ্য অধ্যাপককে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। নিজ নিজ ক্ষেত্রে যে অবদান তারা রেখেছেন তা কেবল অতুলনীয় নয়, জাতির ইতিহাসে মহান ওই শিক্ষকদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। উক্ত ছয় জন অধ্যাপকের মধ্যে একজন আমার খুবই প্রিয় ব্যক্তি অধ্যাপক আতিউর রহমান। পদ্মা সেতুর অর্থায়নে অবদান রাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আতিউর রহমান দক্ষিণ বঙ্গের জনগণ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। বিশ্ব ব্যাংক ও উন্নয়নের অন্যান্য সহযোগীরা একটা মিথ্যা ধুঁয়া তুলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করলে শক্তভাবে হাল ধরেন যারা তাদেরই একজন বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক আতিউর রহমান। স্যারের কাছে এক দিন জানতে চেয়েছিলাম আমরা শিক্ষকরা কবে আমাদের পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে নিজস্ব একটি গাড়িতে করে যেতে পারবো ? স্যার, বলেছিলেন “ইনশাআল্লাহ” হবে। স্যারকে অভিবাদন জানিয়ে আজ জানতে চাই- আমরা কবে গ্রাম থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করে আবার গ্রামে ফিরে যেতে পারব- যেভাবে সকাল বেলা গরম ভাত খেয়ে একসময় আমাদের পূর্বপুরুষেরা পাঠশালায় যেতেন!- বিলুপ্ত করে বিভীষিকাময় গণরুম ! যে দুর্বার গতিতে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হচ্ছে হয়তো সেই দিন আর দূরে নয়। আজ শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারে। পরীক্ষার সময় আমরা অনলাইনে তাদের পরীক্ষা নিয়েছি। হয়তো গণরুম অপবাদ থেকে আমরা উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে মুক্ত হবো।

বরেণ্য এই অর্থনীতিবিদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে সম্মান দিয়েছে সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কি বলে সাধুবাদ জানাবো আমার ভাবনায় আসে না। তবুও আমার অভিবাদন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজকে। তারা গুণী ব্যক্তির সম্মান দিতে ভুল বা কার্পণ্য করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাংকিংয়ে নিতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সংকীর্ণতার উর্ধে উঠতে হবে। বরেণ্য শিক্ষকদের পদচারণায় মুখরিত করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

সম্প্রতি কিছু কথা শোনা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিদেশ থেকে ডিগ্রী করে আসা শিক্ষকদেরকে কোনঠাসা করে রাখায় হয়। আবার এমন কথাও শুনেছি সরকার বিদেশী ডিগ্রী থাকলে বিশেষ সুবিধা দেবে। কিন্তু আজও শিক্ষকরা তাদের পিএইচডি ইনক্রিমেন্ট পায়নি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। এ বিষয়ে একটা চিঠিও ফেডারেশন দিয়েছে।

শিক্ষকদের দাবি ছিল প্রশাসন এর মতো একটি প্রাইভেট কার কেনার ব্যবস্থা করবার সেই দাবিকে করোনার মহামারী ও তার পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থা চাপা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে আসা শিক্ষকদেরকে যদি আকৃষ্ট করতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যর্থ হয় তবে ব্রেন-ড্রেন হবে এবং শিক্ষার মান নিম্নগামী হবে।

নগরের যানজট সমস্যা ও অ-নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংকটের সঙ্গে প্রাইভেট কার পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন করে তার পরেও একটি কার চড়বার স্বপ্ন একজন মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দেখতে পারেন। বিদেশ মেধাবীদের হাত ছানি দিয়ে ডাকে যেখান একটি কার কেনার জন্য বাংলাদেশের মতো বিপুল পরিমান ট্যাক্স দিতে হবে না। সেই লোভলালসা ত্যাগ করে যারা দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন সেই শিক্ষকরা সুদমুক্ত লোন ও ট্যাক্স মুক্ত যানবাহনের সুবিধা পেলে জাতির ভাগ্য উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সরকার বিষয়টি নিয়ে ভাববে বলে আমার বিশ্বাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপকদের মাঝে আছেন নগর গবেষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি হয়তো আরও ভালো বলতে পারবেন কিভাবে নগরের মর্যাদা উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষক সমাজ অবদান রাখতে পারেন। আমরা হয়তো অধ্যাপক হাশেম খান ও রণবীর নামে পরিচিত অধ্যাপক রফিকুন্নবীর শিল্প কর্ম এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করতে পারবেন।

ভারত আমাদের প্রতিবেশী। তারা কিভাবে শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে সেটা যদি অন্তত আমাদের পলিসি মেকাররা ভাবেন তবে তার চেয়ে সেরা কিছু হতে পারে না। হয়তো আমাদের পলিসি মেকারদের সন্তানেরা এই দেশে পড়েন না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিনতা দিন দিন বাড়ছে। সেই দুরবস্থা থেকে আমাদের ইমিরেটাস অধ্যাপকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে আমার উপলব্ধি। বরেণ্য শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ আপনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতির পক্ষ থেকে দাবি তুলবেন শিক্ষার এবং বিশেষভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উন্নয়নে একটি উচ্চ শিক্ষা কমিশন করে সংস্কার ও উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরবেন।

যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বসবাস করে, যে খাবার খেয়ে তারা জীবন যাপন করে তা থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া দুরূহ হবে। তাদের পুষ্টিকর খাবারের অভাব ক্লাসে গেলে বোঝা যায়। ৩০ মিনিট পার হলেই তারা মনোযোগ হারিয়ে ফেলে কিংবা হাই তোলে। তাদের নেই বই কেনার সক্ষমতা এবং লাইব্রেরীতে নেই লেটেস্ট বই। পুরনো বইগুলো নাড়াচাড়া করলে পাতাগুলো ভেঙে পড়ে। সে এক করুন চিত্র যা ভাষায় বর্ণনা করবার মতো নয়।

আজ নীলক্ষেতের এক প্রিন্টারের সঙ্গে কথা হলো। তার কাছ থেকে জানলাম একজন ছাত্র ২ মাস পড়াশোনা করে একটি প্রজেক্ট পেপার লেখে। আর সেটাকে চুরি করে ওই কম্পিউটার অপারেটর যে পড়াশোনা করে না তার কাছে বিক্রি করে। এভাবেই নাকি নীলক্ষেত হয়ে উঠেছে চুরিবিদ্যা হাব বা চন্দ্র রেনু বিদ্যা কেন্দ্র ।

এই কপি -কাট -পেস্ট সংস্কৃতি এবং অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম স্যারের পর্যবেক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় বিসিএস একাডেমী হয়ে ওঠার ভ্রান্তি থেকে জাতিকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে সম্মানিত ইমেরিটাস শিক্ষকরা যদি ভূমিকা রাখেন তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জাতির কাছে সঠিক বলে বিবেচিত হবে। আমার আরও বিশ্বাস অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরও ইমেরিটাস অধ্যাপক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে অবদান রাখবে। অভিবাদন জাতির বাতিঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপকগণ।

অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।



বার্তা সূত্র