Skip to content

রাজশাহীতে আইসিটি আইনে গ্রেপ্তার সাংবাদিকের মুক্তি দাবি

জেসমিন পাপড়ি, বেনার নিউজ: পাঁচ বছর আগে তখনকার তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মানিক রাইয়ান বাপ্পির নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা।

একই মামলায় আরো সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নিন্দা জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের উত্তরাধিকার হিসেবে আসা বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটিও বাতিলের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সালমান শাকিল বেনারকে বলেন, “ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার অর্ধশত বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সাংবাদিককে তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য কারাবরণ করতে হলো। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে।”

বাপ্পির মুক্তিসহ এ মামলায় অভিযুক্ত সকল সাংবাদিকের অবিলম্বে অব্যাহতি দাবি করে শাকিল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্তবুদ্ধি চর্চার স্থানে সাংবাদিকেরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হলে ক্যাম্পাসগুলোতে সাংবাদিকতার পথ আরো সংকুচিত হয়ে যাবে।”

২০১৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের তখনকার আবাসিক শিক্ষক ও কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে সিট বরাদ্দ করার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

এ বিষয়ে অনলাইনে একটি সংবাদ প্রকাশ করেন বাপ্পি। পরে তিনি যুগান্তর পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন।

ওই বছরের ২৪ অক্টোবর ১৬টি পত্রিকার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করেন শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমান।

মামলার তদন্ত শেষে গত ২৯ সেপ্টেম্বর যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, মানিক রাইহান, রাবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি হাসান আদিব, রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক লিয়াকত আলীসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মতিহার থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মোমিন বেনারকে বলেন, “ওই মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। আদালত থেকে কয়েকজনের নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।”

পুলিশ জানায়, মামলার এজাহারে ১৬টি পত্রিকার কথা উল্লেখ ছিল। তবে প্রমাণ না মেলায় মোট আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। পরে আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এর প্রতিবাদে সোমবার রাজশাহী নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকেরা। ওই মানববন্ধন থেকে বাপ্পিসহ আট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। একই দাবিতে গত রবিবারও রাজশাহীতে মানবন্ধন করেন সাংবাদিকেরা।

মানববন্ধনে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি কাজী শাহেদ বলেন, “সরকার বারবার সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করার পরেও কালো আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ হয়নি।”

ওই শিক্ষকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “শিক্ষক হয়েও তিনি আইসিটি আইনে নিজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাঁর মধ্যে শিক্ষকসুলভ আচরণ থাকলে তিনি আজই মামলা প্রত্যাহার করবেন।”

জেল খেটেছেন বাদী শিক্ষকও

এদিকে মামলার বাদী ওই শিক্ষকও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সম্প্রতি জেল খেটেছেন। প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বেশ কিছুদিন কারাবাসের পরে গত ২৭ আগস্ট জামিন পান তিনি।

গ্রেপ্তারের পরপরই কাজী জাহিদকে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ দল থেকে বহিষ্কার করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “বাপ্পীকে হয়রানি করা হচ্ছে। শিক্ষক জাহিদুর রহমানও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি জানেন, এ আইন হয়রানিমূলক। জাহিদুর রহমান শিক্ষক হিসেবে অভিযোগটি তুলে নিলে বা মামলা প্রত্যাহার করলে তাঁর ভাবমূর্তি ও শিক্ষক হিসেবে তাঁর দায়িত্বজ্ঞান প্রকাশ পাবে,” বলেন তিনি।

“তবে সবচেয়ে বড় কথা এই ধরনের আইনের নামে হয়রাণিমূলক ব্যবস্থার অবসান হোক,” বলেন আমিরুল ইসলাম।

তথ্য প্রযুক্তি​ আইনের ৫৭ ধারাসহ কিছু ধারা নিয়ে চরম বিতর্কের মুখে সরকার আইসিটি​ আইনটি বাতিল করে। তবে ওই আইনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো চলছে।

২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যা আগের আইসিটি আইনের মতোই। দেশের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠন শুরু থেকেই আইনটি বাতিল চেয়ে বলছে, এটি মানবাধিকার ও মত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আইনটি পাস হওয়ার পর দুই বছরে এ আইনে এক হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে অর্ধশতাধিক, গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ৩৮ জন সাংবাদিক।