দেশের পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী ১১টি নৃগোষ্ঠীর ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার কাজে রাঙামাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট। শুরুতে বিপুল উদ্যমে কাজকর্ম শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে বেড়েছে সীমাবদ্ধতা।
তাতে গতি হারিয়েছে এ ইনস্টিটিউট; বর্তমানে প্রয়োজনের অর্ধেক জনবল নিয়ে অনেকটা ‘খুঁড়িয়ে’ চলছে ইনস্টিটিউটের কাজ। এমনকি পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের চারটি পদও রয়েছে শূন্য।
লেখক আব্দুল সাত্তারকে পরিচালক করে ১৯৭৮ সালে যাত্রা করে উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, যার বর্তমান নাম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট।
এমনভাবে ইনস্টিটিউটটি নকশা করা হয়েছে যেন, একবার ঘুরে দেখলেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নৃগোষ্ঠীগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
স্থানীয় প্রায় সবগুলো জনগোষ্ঠীর জীবনাচার, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নান্দনিক উপস্থাপনা রয়েছে এ জাদুঘরে। যদিও যথাযথ প্রচারের অভাবে রাঙামাটি ঘুরে যাওয়া বেশিরভাগ পর্যটক জানতেই পারেন না এর কথা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইনস্টিটিউট যেসব কাজ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে– স্থানীয় সংস্কৃতির জীবনধারা ও লোক সাহিত্যের পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পুস্তক ও সাময়িকী প্রকাশ, প্রচার, হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ, চারু ও কারুশিল্প, পোশাক পরিচ্ছদ, অলংকার, সংগীত, যন্ত্র, মুদ্রা, অস্ত্রশস্ত্র সংরক্ষণ এবং নিজস্ব জাদুঘরে প্রদর্শন।
পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে প্রায় শতাধিক বই প্রকাশ করেছে ইনস্টিটিউট। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইংরেজি বইয়ের বাংলা অনুবাদও প্রকাশ করেছে। যদিও বই প্রকাশের সংখ্যা সম্প্রতি অনেকটাই কমে এসেছে।
১৯৮৯ সালে গিরিনির্ঝর নামে একটি প্রকাশনা নিয়মিত বের করতে শুরু করে ইনস্টিটিউট। নয়টি সংখ্যা প্রকাশের পর সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে প্রতিবছর ‘বৈ-সা-বি’ উপলক্ষে একটি প্রকাশনা নিয়মিত বের হয়। রয়েছে ১০ হাজার বই সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি।
প্রকাশনার পাশাপাশি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তংচঙ্গ্যা ভাষায় স্বল্পকালীন এবং দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে ইনস্টিটিউট। এর মধ্যে দুই বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট কোর্সটি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ক্ষুদে শিল্পীদের জন্য নাচ, গান, চারুকলাসহ বেশ কিছু নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে।