Skip to content

যৌন হয়রানির প্রতিবাদ: ঝুঁকিতে ভারতের কুস্তিগীরদের অলিম্পিক স্বপ্ন

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এশিয়ান গেমসের মাত্র তিনমাস বাকি। এ সময় ভারতের কুস্তিগীরদের কঠোর অনুশীলনে থাকার কথা। কিন্তু শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নেয়া দূরের কথা, ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে কুস্তিগীররা রাজধানী দিল্লির যন্তর মন্তরে ধুলোমাখা পরিবেশে অবস্থান নিয়েছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদে গত একমাস ধরে শব্দ দূষণের মাঝেই প্রায় নিদ্রাহীন সময় তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি চালাচ্ছেন।

ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের (ডব্লিউএফআই) সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিং এবং অন্য অজ্ঞাত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আসা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। কমনওয়েলথ গেমসে দুবার এবং এশিয়ান গেমসে একবার স্বর্ণপদক জেতা নারী কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট তাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ সামনে আনার পর তোলপাড় শুরু হয়।

কুস্তিগীররা ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের পদত্যাগ ও গ্রেপ্তারের দাবি করছেন। ব্রিজভূষণকে ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দিল্লি পুলিশ। যৌন হয়রানির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। একইসঙ্গে ফেডারেশন সভাপতি তার বিরুদ্ধে চলা বিক্ষোভকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বলেছেন।

একমাস ধরে কুস্তিগীররা অনুশীলন বন্ধ রাখায় আসন্ন চ্যাম্পিয়নশিপে তাদের পদক জয়ের সম্ভাবনা হুমকির মুখে পড়েছে। পরিস্থিতির সমাধান না আসায় ক্রীড়াবিদদের মাঝেও সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। মানসিকভাবে তারা ভেঙে পড়েছেন। পর্যাপ্ত অনুশীলনের অভাবে আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকে পদক পাওয়ার স্বপ্নের হতে পারে সমাধি। অথচ ২০০৮ সাল থেকে কুস্তি ইভেন্টে এপর্যন্ত সাতটি অলিম্পিক পদক জিতেছে ভারত।

টোকিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী কুস্তিগীর বজরং পুনিয়া বলেছেন, ‘পুরো দেশ আরও পদক পাওয়ার জন্য আমাদের উপর আশা রেখেছে। আমরা সত্যিই পদক জিততে চাই। কিন্তু এখানে আমরা ৩০ দিন ধরে বসে আছি।’

এশিয়ান র‌্যাঙ্কিং সিরিজসহ কয়েকটি বড় টুর্নামেন্ট খেলতে না পারার আক্ষেপের কথা পুনিয়ার কণ্ঠেই ঝরেছে, ‘মানুষ বলে আমরা ব্যক্তিগত লাভের জন্য প্রতিবাদ করছি। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারাটাই একজন খেলোয়াড়ের জন্য সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার।’

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে থাকা কুস্তিগীরদের শতশত পুলিশ অফিসার ঘিরে রেখেছে। নীল টারপলিনে তৈরি একটি ছাউনিযুক্ত কাঠামোর ভেতরে তাদের বসবাস। প্রতিনিয়ত অনেক মানুষের সঙ্গে তাদের দেখা হচ্ছে, দিতে হচ্ছে বক্তৃতা ও সাক্ষাৎকার। ভোরে যখন তাদের সমর্থন দিতে আসা জনতার বেশিরভাগ ঘুমিয়ে থাকে, তখন সামান্য সময়ের জন্য কুস্তি খেলেন খেলোয়াড়রা। এক থেকে দুই ঘণ্টার অনুশীলনে তারা হন ঘর্মাক্ত আর ক্লান্ত। স্বল্প সময়ের অনুশীলনের মাঝে থাকে অপরিসীম নিবেদন। তবে অতি আগ্রহী মানুষের জন্য তাতেও আসে বাধা।

ক্যাম্পের অনুশীলনের সঙ্গে তুলনা করে এটুকু যে মোটেও যথেষ্ট নয়, সেটি কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট স্বীকার করে নিচ্ছেন। হতাশা ঝরা কণ্ঠে বলছেন, ‘আমরা হৃদয় থেকেই জানি এ পর্যায়ের অনুশীলন আমাদের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। তবে আমরা যতটুকু করতে পারি, তাই করার চেষ্টা করছি।’

এন্টার দ্য দঙ্গল: ট্র্যাভেলস থ্রু ইন্ডিয়াস রেসলিং ল্যান্ডস্কেপ বইয়ের লেখক রুদ্রনীল সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘কুস্তি অত্যন্ত শারীরিকভাবে চাহিদাপূর্ণ একটি খেলা। সেরা পর্যায়ে থাকার জন্য আপনাকে শারীরিকভাবে অতিমাত্রায় ফিট থাকতে হবে। এর জন্য আপনাকে ক্রমাগত অনুশীলনে থাকতে হবে। কন্ডিশনিং ক্যাম্প ছাড়া একজন খেলোয়াড় খেলা শুরুর প্রথম ৩০ সেকেন্ডের ভেতরেই হারতে পারেন।’

২০১৬ সালে অলিম্পিকে কুস্তিতে পদকজয়ী প্রথম ভারতীয় নারী সাক্ষী মালিক বলছেন, ‘প্রশিক্ষণ স্থলে আমাদের জীবন কঠিন। কিন্তু আমরা জানি এটাই জীবন। আমাদের তাই করতে হবে যা কখনো কল্পনাই করিনি।’

ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়ে দিচ্ছেন মালিক, ‘আমাদের কাজ হল অনুশীলন করা, খেলায় অংশ নেয়া এবং জেতা। কিন্তু কথা বলা আমাদের দায়িত্ব এবং আমরা তা অব্যাহত রাখব। আমাদের নিজেদের সেরা অবস্থায় ছিলাম। শীর্ষ পর্যায়ে খেলতে না পারাটা আমাদের সবাইকে মানসিকভাবে কিছুটা মেরে ফেলবে।’

বার্তা সূত্র