যন্ত্রসংগীতের মূর্ছনায় মেতে উঠলো পুরো দেশ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শিল্পীদের উপস্থিতিতে প্রতিটি বিভাগে অনুষ্ঠিত হল যন্ত্রসংগীত উৎসব।
শনিবার ও রবিবার একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের সমন্বয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমিগুলোর ব্যবস্থাপনায় সারাদেশে এ উৎসব আয়োজিত হয়। প্রত্যেক বিভাগের জেলা, উপজেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ের শিল্পীরা এই উৎসবে পরিবেশনা উপস্থাপন করেছেন।
জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় যন্ত্রসংগীত শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা ও উৎসাহ প্রদানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এ উৎসব আয়োজন।
শিল্পকলা একাডেমির সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আয়োজনটা খুবই সফল হয়েছে। মানুষ খুব খুশি, শিল্পীরা খুব খুশি। সবশ্রেণীর মানুষের জমায়েত হয়েছিল। যন্ত্রসংগীতের প্রতি মানুষের ভালোবাসা শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেছে। তৃণমূলে শিল্পীরা এসেছেন, একসঙ্গে বাজিয়েছেন।”
“দেশের আনাচে-কানাচে এত মেধাবী শিল্পীরা রয়েছেন তাদের মঞ্চে হাজির করাই এ আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। তাদের বোঝাতে চেয়েছি আপনারা অবহেলিত নন, আপনাদের জন্য আমরা দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছে যাবো। নতুন প্রতিভা ও মেধাবী শিল্পীদের প্লাটফর্ম হয়ে উঠবে শিল্পকলা একাডেমি, এটা আমাদের প্রত্যাশা।”
সাম্প্রতিক গণভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মানুষের মধ্যে ভয়হীন আনন্দের পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। খোলা আকাশের নিচের উন্মুক্ত এ আয়োজনে মানুষও সাড়া দিয়েছে দারুণভাবে।
তিনি আরও বলেন, “সারাদেশে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টির ইচ্ছে থেকেই এ আয়োজনটা করেছি আমরা। সারাদেশের তৃণমূলের শিল্পীদের উপস্থিতি এ আয়োজনের স্বার্থকতা। এতে তারা অত্যন্ত আনন্দিত। অনেক শিল্পী আমাকে বলেছেন, তারা এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনেক শক্তি পেয়েছেন, শিল্পচর্চায় আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন। সংস্কৃতিচর্চা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে অমূলক ভয় ও সংকোচ ছিল তা এ ধরণের উন্মুক্ত আয়োজনের মধ্য দিয়ে কেটে যাবে।”
একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানায়, বিভাগগুলোর মধ্যে সিলেটের চাঁদনী ঘাট, ক্বীন ব্রিজ চত্ত্বর; রংপুরে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ, টাউন হল চত্বর; রাজশাহীতে লালন শাহ মুক্ত মঞ্চ; ময়মনসিংহে বৈশাখী মঞ্চ-২, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পার্ক; খুলনায় শহীদ হাদিস পার্ক মুক্তমঞ্চ এবং বরিশালে বেলস্ পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা যায়, প্রতিটি আয়োজনে কমপক্ষে ৫৫-৮০ জন যন্ত্রশিল্পী যৌথ ও এককভাবে তাদের পরিবেশনা উপস্থাপন করেছেন। ময়মনসিংহে বৃন্দ তবলা পরিবেশন করে ১৭ জন শিশু শিল্পী, এছাড়া বৃন্দ ঢোল বাদন, একক বেহালা বাদন, সারিন্দা-খমক-বেহালা বাদন, একক সেতার, অর্কেস্ট্রা, সানাই বাদন, বাঁশি বাদন উপস্থাপন করেন শিল্পীরা।
সিলেটে মাদল, বেহালা, বাঁশি, মৃদঙ্গ, গিটার সহ বিভিন্ন পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয়েছে। খুলনায় তবলার লহড়া, বাঁশি, রাগ ইমন, বেহালায় রাগ সঙ্গীত, রাগদেশ, ত্রিতাল, ভৈরবী প্রভাতী, দেশ রাগ, কাফি রাগ এর সুরের মূর্ছনা, সেতারসহ বিভিন্ন পরিবেশনা উপস্থাপন করেন খুলনার যন্ত্রশিল্পীরা।
একইভাবে বরিশালে তবলার লহড়া, দোতারায় রাগ, ঢোল, বেহালা, কাহন, শেইকার, খমক, পারকিউশন এর উপস্থাপনা উপভোগ করেন আগত দর্শনার্থী ও শ্রোতারা। রাজশাহীতে সমবেত পরিবেশনায় উপস্থাপন করা হয় ধুন, রাগ যন্ত্রে সঙ্গীত, বেঞ্জু, পিয়ানো, বাঁশি, তবলার লহড়া, বাংলার ঢোল, সরোদ, কর্নেট, পাখোয়াজ ও অন্যান্য যন্ত্রসংগীত পরিবেশনা।
সময়ের বিবর্তনে অনেক যন্ত্রসঙ্গীত চর্চার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, পৃষ্ঠপোষকতা ও চর্চার মাধ্যমে সেসব সঙ্গীত যন্ত্র টিকিয়ে রাখা এবং শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির দেশব্যাপী এ আয়োজন।
আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী আসর।
একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান জানান, ভবিষ্যতে ৬৪ জেলায় এ ধরণের আয়োজন করার স্বপ্ন দেখছে শিল্পকলা একাডেমি।