Skip to content

মেঘাচ্ছন্ন সকালেও ‘সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ঢাকা | দেশ রূপান্তর

মেঘাচ্ছন্ন সকালেও ‘সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ঢাকা | দেশ রূপান্তর

এই তো সেদিনের কথা। অনেকেই চমকে উঠেছিলেন খবরটা দেখে। স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক বেচে দেবেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। সময় দিয়েছিলেন এক মাস।

হতাশা কোন পর্যায়ে গেলে দেশের সেরা প্রায় সব পুরস্কারে ভূষিত একজন রাষ্ট্রীয় পদক বেচে দিতে চান। যদিও কবির আলটিমেটামে কাজ হয়নি। সরকার সমস্যার সমাধান করেনি।

কবি কি বাড়তি সুবিধা চেয়েছিলেন সরকারের কাছে? ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে তিনি একটি তিনতলা বাড়ি বানিয়েছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেও গ্যাস সংযোগ মেলেনি। বারবার চেষ্টা করেও না। খোলা বাজার থেকে চড়া দামে কবিকে তরল গ্যাস কিনতে হয়। হতাশ হয়ে কবি পদক বেচে দেওয়ার হুমকি দেন।

গত বছর ২৫ অক্টোবর ফেসবুকে এ ঘোষণা দেওয়ার পর তা ভাইরাল হয়। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে কথার ঝড় ওঠে। সরকারের ভেতরে-বাইরেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। তবে এ প্রতিক্রিয়া মিইয়ে যেতেও সময় লাগেনি।

নির্মলেন্দু গুণ কি খুব বেশি কিছু চেয়েছিলেন? রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কারপ্রাপ্তদের সামান্য বাড়তি সুবিধা কি দেওয়া যায় না? কবি তো বিনামূল্যে সুবিধাটুকু চাননি।

শুধু নির্মলেন্দু গুণ কেন? রাষ্ট্রীয় সব পুরস্কারপ্রাপ্তই তো এ ধরনের সুযোগ পেতে পারেন। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর দাবি খুব বেশি চাওয়া নয়। সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে তারা এগুলো এমনিতেই পেতে পারেন।

নানারকম পুরস্কারের প্রচলন রয়েছে দেশে। মানের দিক থেকে সর্বোচ্চটি হচ্ছে স্বাধীনতা পুরস্কার। জাতীয় জীবনে বা নির্ধারিত কয়েকটি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ পুরস্কার প্রতি বছর দেওয়া হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার হচ্ছে একুশে পদক। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ পদক দেওয়া হয়। এগুলো মূলত বেসামরিক পুরস্কার। ১৮ ক্যারেটের সোনার স্বাধীনতা পুরস্কার পদকে থাকে ৫০ গ্রাম সোনা। ৩৫ গ্রাম থাকে একুশে পদকে। দুটি ক্ষেত্রেই আলাদা অর্থ ও সনদ পেয়ে থাকেন পদকপ্রাপ্তরা, সঙ্গে পদকের একটি রেপ্লিকা। স্বাধীনতা পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫ লাখ আর একুশের ৪ লাখ টাকা।

বাংলাদেশে ভিভিআইপি (ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট পারসন), ভিআইপি (ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট পারসন) ও সিআইপি (কমার্শিয়ালি ইম্পর্ট্যান্ট পারসন) এ তিন ক্যাটাগরিতে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। কারা কোন ধরনের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন তা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট করা আছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হলেন ভিভিআইপি। তারা বিমানবন্দরে ভিভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেন। আর ভিআইপি হলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, তিন বাহিনী প্রধান সংসদ সদস্য, সিনিয়র সচিব, সচিব, পুলিশপ্রধান। তবে সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য কাউকে ভিআইপি মর্যাদা দিতে পারে। বিধি অনুযায়ী তারা প্রটোকল, নিরাপত্তা, গার্ড ও গানম্যান পেয়ে থাকেন।

ব্যবসা-বাণিজ্যে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তাদের বলা হয় সিআইপি। প্রথম দুই ধাপের ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় নির্ধারিত হন। আর সিআইপি ঠিক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। সিআইপি মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদের কার্ড ব্যবহার করে সচিবালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ঢুকতে পারেন। ব্যবসাসংক্রান্ত ভ্রমণে বিমান, সড়ক, রেল ও নৌপথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আসন সংরক্ষণের সুযোগ পান এবং বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন। বিমানবন্দরে সুবিধা ছাড়াও সিআইপিরা দেশ-বিদেশে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অগ্রাধিকার পান। বিভিন্ন দিবস ও উৎসবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি মিশনে নিমন্ত্রণ পান। পরিবারের সদস্যসহ নিজে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি হাসপাতালে কেবিন পান।

ভিভিআইপি, ভিআইপি ও সিআইপিরা যথেষ্ট মর্যাদা পান। শুধু মর্যাদা নেই রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্তদের। তাদের সম্মান শুধু একদিনের। প্রধানমন্ত্রী যেদিন তাদের হাতে পদক তুলে দেন সেদিনই তারা বিশিষ্ট ব্যক্তি। বাকি দিনগুলোতে কেউ তাদের খোঁজ নেয় না। সরকারও তাদের কোনো খবর রাখে না। অথচ সামন্তযুগেও এ দেশের রাজা-বাদশারা জ্ঞানীদের কদর করতেন। যারা শিল্প-সাহিত্যের চর্চা করতেন, তাদের পুরস্কৃত করতেন। নির্বিঘ্ন সাধনায় পাশে দাঁড়াতেন। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দিতেন। সভ্যতার দিক থেকে এগিয়ে থাকা দেশগুলোও কীর্তিমানদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। সম্মানিত বা স্বীকৃতি দিলে জ্ঞানী-গুণী যতটা না উপকৃত হন, তার চেয়ে বেশি উপকৃত হন সাধারণ মানুষ। চিরায়ত এ প্রক্রিয়ায় প্রতিভা বিকাশের সম্ভাবনা তৈরি হয়। পদক পেয়ে মানুষ মহিমান্বিত হন। আর মহিমান্বিত মানুষদের পদক দিয়ে পদক মর্যাদাবান হয়। দেশে গুণিজনের সম্মানের সংস্কৃতি গড়ে উঠলেই সেই মহিমার দেখা মিলবে।

রাষ্ট্রীয় সম্মান দেশে দেশে খুশির বার্তা বয়ে আনে। সাধারণ মানুষ সম্মান দিয়ে আর পদকে ভূষিতরা সম্মান পেয়ে খুশি হন। মালয়েশিয়ায় রাষ্ট্রীয় পদক প্রাপ্তদের জন্য অনেক সুবিধা দেয় রাষ্ট্র। যদিও তাদের সহজে চেনার জন্য আলাদা পোশাক থাকে, যেখানে থাকে বিভিন্ন মেডেল। অর্থাৎ তাদের মেডেল দিয়ে যায় চেনা।

ইংল্যান্ডের নাইট উপাধির খ্যাতি ভুবন জুড়ে। ভারতের পদ্মভূষণ, জ্ঞানপীঠ, আকাদেমি পুরস্কার নাম করেছে। ইউরোপের প্রায় সব দেশেই নানারকম পদক-পুরস্কার রয়েছে। ষাটের দশকে আইয়ুব সরকার প্রবর্তন করে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’। তাছাড়া স্বাধীনতার আগে ছিল সাহিত্যের জন্য আদমজী পুরস্কার, দাউদ পুরস্কার, ন্যাশনাল ব্যাংক পুরস্কার এসব।

সরকারের টাকা মানেই জনগণের করের টাকা। সেই টাকা খরচ করতে হলে নীতিমালা থাকতে হয়। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের জন্যও নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু নানা ফাঁকফোকর দিয়ে তা লঙ্ঘনও করা হয়। এ নীতিমালার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো পুরস্কারের জন্য প্রার্থীকে বা তার পক্ষে সুপারিশকারীকে আবেদন করতে হবে। একজন খ্যাতিমান আবেদন করে পুরস্কার নিতে যাবেন কেন? ব্যক্তিত্ববান ও রুচিবান ব্যক্তি এ কাজটি করেন না। এ কাজটি তদারকি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জাতীয় পুরস্কারসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পুরস্কারের তালিকা তৈরি ও যাচাই-বাছাই করে। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব কমিটির ওপরই বর্তায়। মন্ত্রিপরিষদ থেকে সব মন্ত্রণালয়ে তালিকা চাওয়া হয়। কিন্তু তারা এ কাজটি ঠিকভাবে করে না। রাজনীতিবিদদের ছাপিয়ে আমলাদের দাপটের কারণে কখনো তারা তাদের সহকর্মীদের আত্মীয়স্বজনকে নানা টালবাহানায় এ পুরস্কার দেয়।

কখনো কখনো এসব পুরস্কার মরণোত্তর হিসেবেও দেওয়া হয়। উপমহাদেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী কৃতী মানুষের দাম জীবদ্দশায় কম। মৃত্যুর পর বাড়ে। তাই তো মরণোত্তরের এত ছড়াছড়ি। এ দেশের মতো মরণোত্তর পুরস্কারের ব্যবস্থা পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। কোনো কারণে হয়তো উপযুক্ত একজন পুরস্কার পাননি। অথচ তার প্রাপ্য ছিল। এর মধ্যে তিনি মারা গেলেন। যে বছর তিনি মারা গেলেন, সে বছর পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনীত করা অযৌক্তিক নয়। কিন্তু অর্ধশতাব্দী আগে মারা যাওয়া একজনকেও এ পুরস্কার দিতে হয়। এখানেও তদবির। হয়তো তার নাতি-নাতনি বা বংশধর বংশ মর্যাদা রক্ষার জন্য তদবির করে এ পুরস্কার নিয়ে যান।

বাঙালির অল্পে মন ভরে না। যে সমাজে কৃতী মানুষ খুঁজে পাওয়াই কঠিন, সেখানে প্রতি বছর পদক-পুরস্কার প্রাপকের সংখ্যা এত বেশি হয়। গত বছর ২৪ জনকে একুশে পদক দেওয়া হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা পদক ১০ জনের বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

রাষ্ট্রীয় সম্মান এ দেশে রাজনীতির হাতিয়ার। এ পথেই স্বাধীনতা পদক পেয়েছিলেন শর্ষিনার পীরসহ আরও অনেকে।

প্রথমবারের মতো একুশে পদক দেওয়া শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। আর স্বাধীনতা পুরস্কার তার পরের বছর থেকে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এগুলোর প্রবর্তন করেন।

প্রথমবার একুশে পদক পেয়েছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি জসীমউদ্দীন, বেগম সুফিয়া কামাল, কুদরত-এ খুদা, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া প্রমুখ।

আরেকটি সম্মানজনক পুরস্কার হচ্ছে বাংলা একাডেমি পুরস্কার। এটিও একটি বাৎসরিক পুরস্কার, যা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিশু-কিশোর সাহিত্যে অবদানের জন্য শিশু একাডেমি পুরস্কার, চলচ্চিত্র শিল্পে অবদানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, খেলাধুলায় অবদানের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়া হয়। এত এত পুরস্কার দিয়ে কী হবে, যদি মানি লোকের মান না দেওয়া যায়।

বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার জন্য নির্মলেন্দু গুণ দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সরকার পাশে দাঁড়ায়নি। এক মাসের আলটিমেটাম দিলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কোনো হেলদোল নেই।

নির্মলেন্দু গুণ ব্যাপকভাবে পরিচিত একজন কবি। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনি লিখেছেন ও ছবি এঁকেছেন। তার কবিতায় শ্রেণি-বৈষম্য, স্বৈরাচার বিরোধিতা উঠে এসেছে। স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়। পরে এর ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে তার লেখা পাঠ্য। তাকে ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।

কবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, তিনি এখনো গ্যাসের সংযোগ পাননি। সরকারের কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। কবির প্রশ্ন, সবাই একদিনের চমক দিতেই ব্যস্ত থাকে? কী হয় একদিনের চমকে?

২০০১ সালে একুশে পদক ও ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত নাট্যজন আতাউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, গুণের মতো গুণী মানুষ কেন গ্যাসের লাইনের জন্য সরকারি দপ্তরের টেবিলে টেবিলে ঘুরবেন? ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গুণই প্রথম কবিতা লিখে প্রতিবাদ করেছিলেন। নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে এটা হয়ে থাকলে অবিচার করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উচিত সরকারি-বেসরকারি সব দপ্তরে পুরস্কার বা পদকে ভূষিতদের নামের তালিকা পাঠিয়ে তাদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা। তাদের উপযুক্ত সম্মান দেওয়া সরকারের কর্তব্য।

একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও লেখক মামুনুর রশীদের অভিমত, বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ব্যক্তিকে নানারকম পদক দিয়ে যে সম্মাননা জানায়, তা পদকপ্রাপ্তদের কোনো কাজেই লাগে না। এককালীন একটা টাকা আর একটা সোনার মেডেল পাওয়া যায় শুধু। এটাকে যদি লাভ বলেন তাহলে এটুকুই যা লাভ। কিন্তু এসব পদক কোনো জায়গায়ই পদকপ্রাপ্তদের ভিআইপি স্ট্যাটাস দেয় না। এয়ারপোর্টে না, সার্কিট হউজে না, হাসপাতালে না… কোত্থাও না। তিনি বলেন, ‘যতটুকু সম্মান পাই আমরা, মানে আমরা যারা এ পদক পেয়েছি, আমরা যতটুকু সম্মান পাই সেটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে। আমি শুনেছি, যে এই পদকপ্রাপ্তদের সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যাপারে নাকি দুই-একবার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আমলারা সেটা ঠেকিয়ে দেয়। আমলাদের মধ্যে অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি থেকে ভিআইপি স্ট্যাটাস ও বিভিন্ন সুবিধা পায়। এমপি, মন্ত্রীরাও হয়তো পান। কিন্তু এই যে ভিআইপি স্ট্যাটাস বা সুযোগ-সুবিধা, এটা পদকপ্রাপ্ত শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক কেউই পান না। এতেই বোঝা যায় যে শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিটা কী।’

জানতে চাইলে জাতীয় ক্রীড়া পদকে ভূষিত জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আব্দুল গাফফার দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো শিল্পী-সাহিত্যিক-খেলোয়াড় পুরস্কারের আশায় কাজ করেন না। নিজ নিজ ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বা জাতির মুখ উজ্জ্বল করার জন্য সরকার তাদের খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করে। কিন্তু সেই পুরস্কারটা হয়ে গেছে একদিনের চমক। বিষয়টি এমন হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, যারা যোগ্য তাদেরই তো বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়। সেই পুরস্কারের প্রভাবটা থাকা উচিত আমৃত্যু। বিমানবন্দরে কত রাজনৈতিক হোমরাচোমরা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করছেন। কিন্তু পুরস্কারে ভূষিত অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এটা দেখতে খুব দৃষ্টিকটু লাগে।

আব্দুল গাফফার বলেন, ‘হাসপাতালে, রেলে কোথাও রাষ্ট্রীয় সম্মানপ্রাপ্তদের কোনো সম্মান নেই। আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে যদি তাকাই তাহলে ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই, তারা গুণীর কদর করে।’

শিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রিকশার বডিতে ছবি আঁকতাম। রিকশাচালকরা সম্মান করে ভাড়া নিতেন না। শিল্পী হিসেবে এ সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হয়েও পাইনি। স্পেনে তিনটি পদক পেয়েছি। ওসব মেডেল পোশাকে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াই। এগুলো দেখে রেলস্টেশনে ও বিমানবন্দরে বিশেষ সম্মান পাই। বাংলাদেশে এসব মেডেল লাগিয়ে ঘুরে বেড়ালে লোকে হাসবে।’



বার্তা সূত্র