
আমাদের ভারত, ২৭ এপ্রিল: কালিয়াগঞ্জে গতকাল রাতে এক যুবককে গুলি করে খুনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই পুলিশ গুলি করে ওই যুবককে খুন করেছে বলে তাঁর অভিযোগ।এই ঘটনায় তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হিন্দু বিরোধী বলে তোপ দেগেছেন।
গতকাল রাত ২টো নাগাদ কালিয়াগঞ্জের রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদগাঁ গ্রাম এলাকায় ওই যুবককে পুলিশ গুলি করে খুন করে বলে বাড়ির লোকজন এবং প্রতিবেশিরা দাবি করছেন। এব্যাপারে তাঁরা সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। ১৬ বছরের স্কুল ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় গত পরশু রাজবংশী এবং আদিবাসীদের আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কালিয়াগঞ্জ। সেই ঘটনার পর গতকাল মুখ্যমন্ত্রী কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। প্রতিবেশি এবং নিহত যুবকের বাড়ির সদস্যদের অভিযোগ, গতকাল রাত দুটোর সময় তিনটি গাড়িতে করে পুলিশ আসে। তারা দরজা ভেঙ্গে বিজেপির পঞ্চায়েত সামিতির সদস্যের খোঁজ করে। তাকে না পেয়ে তাঁর বাবা এবং বাড়ির জামাইকে নিয়ে যেতে চায়। মঙ্গলবার এবং বুধবার ওই বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। সেই উপলক্ষে বাড়ির জামাই এসেছিলেন। তাঁকেও নিয়ে যেতে দেখে স্থানীয় লোকজন এবং ওই বাড়ির যুবক মৃত্যুঞ্জয় বর্মন (যিনি বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের ভাইপো) বাধা দেন। অভিযোগ, সেই সময় পুলিশ তাঁকে গুলি করে।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী গতকালই সাংবাদিক সম্মেলনে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এইভাবে মারা হোক, যাতে যারা বিজেপিকে ভোট দেয় তাদের মনে ভয় এবং সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করা যায়। সুকান্ত বলেন, আমি মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই সিএএ নিয়ে আন্দোলনের সময় যখন ট্রেন পোড়ানো হচ্ছিল তখন আপনার এই বাণী কোথায় ছিল? তখন ভয়ে আপনার পুলিশ গর্তের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল গিয়েছিল কেন? তখন তো পুলিশকে বলেছিলেন,
কোনও প্রোএকটিভ স্টেপ নেবেন না? কেন বলেছিলেন এই কথা? কারণ তখন যারা ট্রেন পোড়াচ্ছিল তারা একটি বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের ছিল, আর আজ যারা আন্দোলন করছে, তারা হিন্দু সমাজের। সেজন্য আপনার পুলিশ তাদের গুলি করে মারতে উদ্ধত হয়েছে। সুকান্ত বাবুর অভিযোগ নিহত যুবককে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয়েছে। সুকান্তবাবু এর থেকে পরিস্কার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু বিরোধী। তাঁর এই হিন্দু বিরোধী অবস্থান আজ দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার। তাই আগামী দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে যাবেন সেখানেই মানুষ বিক্ষোভ দেখাবে।
পুলিশের এই কার্যকলাপে তিনি যথেষ্ট চিন্তিত। তাঁর অভিযোগ, উত্তরবঙ্গের রাজবংশীরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে, তাই রাজবংশী তথা তপশিলি সমাজের মানুষকে গুলি করে মারা হচ্ছে। একটা ভিডিও পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে পরশু দিন থানা থেকে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য ফায়ারিং করছে পুলিশ অফিসাররা। তাতে আহত হয়েছেন এক ব্যক্তি। তাকে দেখতে তৃণমূলের বিধায়ক থেকে নেতারা হাসপাতালে যাচ্ছেন, কিন্তু বিজেপির কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তপশিলি সমাজের উপর আক্রমণের প্রতিবাদে বিজেপি রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ আন্দোলন করবে বলে জানিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার।
অন্যদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবিতে রায়গঞ্জ শহরের শিলিগুড়ি মোড় এলাকায় অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছে বিজেপি নেতৃত্ব। রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী, বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার সহ বিজেপি নেতৃত্ব এই অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন। অবিলম্বে গুলি করার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার সহ কালিয়াগঞ্জ থানার আইসির কঠোরতম শাস্তির দাবি তুলেছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।