Skip to content

মামলার বিড়ম্বনায় সাংবাদিকতা: ২৫ বছরে শতাধিক মামলার জালে প্রথম আলো

মামলার বিড়ম্বনায় সাংবাদিকতা: ২৫ বছরে শতাধিক মামলার জালে প্রথম আলো

১৯৯৮ সালের নভেম্বরে যাত্রা শুরুর পর ২০২৩ সালের মে মাস আসতে আসতে শতাধিক মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে ‘প্রথম আলো’ নামের বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকদের। গত ৪ নভেম্বর ২৫ বছরে পা দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে এখনো ৫২টি মামলা চলমান। দেশটির ইতিহাসে অন্য কোনো বাংলা গণমাধ্যম এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি।

প্রথম আলো অফিস কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সম্পাদক মতিউর রহমানের নাম উল্লেখ আছে এমন চলমান মামলার সংখ্যা ১৬টি। একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে এতগুলো মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, ‘‘বেশি মানুষ সংক্ষুব্ধ হচ্ছেন বলেই বেশি মামলা হচ্ছে।’’

বাংলাদেশে যখনই যে দল ক্ষমতায় এসেছে তারাই প্রথম আলোর সাংবাদিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক মামলা করেছে। বারবার বন্ধ হয়েছে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। নজিরবিহীনভাবে কখনো ঘণ্টাব্যাপী, কখনো কয়েক মিনিট ধরে জাতীয় সংসদে তাদের সমালোচনা হয়েছে। এরমধ্যে ২০০১ সালের একটি ঘটনায় স্পিকার সংসদের কার্যবিবরণী থেকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারীর বক্তব্য বাদ (Expunge) দিয়েছিলেন। সেবছর ১২ ও ২৬ জুন দুইবার জয়নাল হাজারী প্রথম আলো এবং মতিউর রহমানের তীব্র সমালোচনা করেন। সম্প্রতি দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সংসদে গণমাধ্যমটির সমালোচনা করেছেন।

সাংবাদিকতায় মতিউর রহমান

মতিউর রহমান ১৯৭০ সালে সাপ্তাহিক একতা পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। পত্রিকাটি তখন বেআইনি ঘোষিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ছিল।

মতিউর রহমান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘‘একাত্তরের জানুয়ারি, মার্চ জুড়ে দেশবাসীর সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে সাপ্তাহিক একতায় আমরা প্রচুর লেখালেখি করেছি। এখনো মনে পড়ে সর্বশেষ ২৫ মার্চ রাতে পুরো পৃষ্ঠাজুড়ে ‘সর্বাত্মক লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হউন’ শিরোনামে পত্রিকা বের করেছিলাম। ২৬ মার্চ সে পত্রিকা আর বিলি হতে পারেনি। ততক্ষণে আমাদের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।’’

‘‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াবহ দিনগুলোর মধ্যে ঢাকা, কাপাসিয়া, রায়পুরা (নরসিংদী) আবার ঢাকা-কয়েক দফা নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত এপ্রিলের শেষ দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় গিয়ে পৌঁছাই। সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী কর্মকাণ্ডে অংশ নেই। এই দিনগুলোতে কলকাতা থেকে প্রকাশিত আমাদের সাপ্তাহিক মুক্তিযুদ্ধ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবেও কাজ করেছিলাম।’’

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মতিউর রহমান ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে সাপ্তাহিক একতা পত্রিকা বের করেন। কিন্তু এবারও বেশিদিন পত্রিকাটি চালানো সম্ভব হয়নি।

সেই স্মৃতি মনে করে মতিউর রহমান বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (BAKSAL) নামের বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল গঠন করলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসে। চালু হয় একদলীয় শাসন। তখন চারটি পত্রিকা বাদে সব পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। কারণ আমরা সব সময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার কথা বলেছি। সেই ’৬২ সাল থেকেই এইসব দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছি। সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশে সাড়ে তিন বছরের মাথায় সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেল।’’

ওই সময় ‘অরাজনৈতিক’ ও ‘নিরপেক্ষ’ আমলা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কাজী আজহার আলীর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘তিন কাল’ থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধন এনে বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর যে চারটি পত্রিকা চালু রাখা হয় সেগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে দুটি বাংলা (দৈনিক ইত্তেফাক এবং দৈনিক বাংলা), দুটি ইংরেজি (দ্য বাংলাদেশ টাইমস এবং দ্য বাংলাদেশ অবজারভার)।

এভাবে পত্রিকা বন্ধ হওয়ার পর অপেক্ষা বাড়ে মতিউর রহমানের। এরপর ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাপ্তাহিক একতা পুনঃপ্রকাশ হয়। এভাবে বছর সাতেক চলার পর এইচ এম এরশাদের আমলে আবার একতা বন্ধ হয়! প্রায় দশমাস বন্ধ থাকার পর ১৯৮৭ সালের মার্চে ফের চালু হয় পত্রিকাটি।

মতিউর রহমান এরপর দৈনিক ভোরের কাগজ নামের নতুন একটি গণমাধ্যমে হাত দেন। সেটি ১৯৯২ সালের বিএনপি আমলের কথা। ‘একতা’র মতো এই ‘ভোরের কাগজে’ও অন্ধকার পিছু ছাড়েনি মতিউর রহমানের। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার দৈনিক ভোরের কাগজের সব সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়। মতিউর রহমানের দাবি, বিএনপি সরকারের ‘অগণতান্ত্রিক কার্যক্রম’ ও ‘দুর্নীতির তথ্য’ প্রকাশ করায় তাদের বিরুদ্ধে অমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকারি বিজ্ঞাপন ফিরে পেতে তখন তারা রাস্তায়ও নামেন।

ভোরের কাগজে মতিউর রহমানের পথচলা থেমে যায় ১৯৯৮ সালের দিকে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। মতিউর রহমান বলেন, ‘‘তখন ভোরের কাগজের প্রকাশক ছিলেন সরকারি দলের এক সংসদ সদস্য। পরে তিনি উপমন্ত্রী হন। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের চাপ আর নিতে পারেননি।’’

প্রথম আলো

ভোরের কাগজের পর মতিউর রহমান ১৯৯৮ সালের নভেম্বরে ‘প্রথম আলো’র যাত্রা শুরু করেন। এখানেও সেই পুরনো গল্প। মতিউর রহমান বলেন, ‘ ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম আলোর সব সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয়; প্রথম আলো ডটকম অনলাইন সংস্করণও বন্ধ করে দেয়।’’

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রথম আলোর বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়। এসময় প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়িতে ২৭টি মামলা হয়েছিল। আদালতে কোনো মামলা অবশ্য টেকেনি। সব খারিজ হয়ে যায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল পেরিয়ে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেও প্রথম আলোর সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয় বলে দাবি মতিউর রহমানের। তিনি বলেন, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে প্রথম আলো নানা রকম চাপ, ভয়ভীতি এবং আক্রমণের মুখে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।’’

তার অভিযোগ, ‘‘সম্প্রতি একজন দিনমজুরের বক্তব্য একটি শিশুর মুখে চাপিয়ে দিয়ে অসত্য প্রচার করে প্রথম আলোকে নতুন করে চাপে ফেলা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক সরকারি-আধা সরকারি অফিসে পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধের সিদ্ধান্তের কথাও আমাদের জানানো হয়েছে।’’

দিন যায় মামলা বাড়ে

প্রথম আলো কিংবা প্রতিষ্ঠানটির কোনো প্রতিনিধির নামে প্রথম মামলা হয় ১৯৯৯ সালে। সেবার পত্রিকাটির কুষ্টিয়া প্রতিনিধির নামে মামলা হয়েছিল।

প্রথম আলোর সম্পাদককে জড়িয়ে প্রথম মামলা হয় ২০০২ সালে। সেবছর সম্পাদক, প্রকাশক এবং মাগুরা প্রতিনিধির নামে মামলা হয়।

মানহানির অভিযোগে বেশি মামলা

প্রথম আলোর বিরুদ্ধে ৫২টি মামলা চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত মোট কতটি মামলা (খারিজসহ) হয়েছে তার নির্দিষ্ট হিসাব দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে তাদের হাউজ থেকে বলা হয়েছে, সংখ্যার হিসেবে শতাধিক।

অধিকাংশ মামলা হয়েছে দণ্ডবিধির ৫০০/৫০১ ধারায়। বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থায় মানহানির ফৌজদারি মামলার প্রধান উৎস হলো ১৮৬০ সালে প্রণীত দণ্ডবিধির ৪৯৯ ও ৫০০ ধারা।

দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি বর্ণনায় বলা হয়েছে, এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। অন্যদিকে দণ্ডবিধির ৫০১ ও ৫০২ ধারা অনুসারে, মানহানিকর বলে পরিচিত বিষয় মুদ্রণ বা খোদাইকরণ সম্পর্কে এবং এর শাস্তি বর্ণিত হয়েছে। মানহানিকর বক্তব্য যদি অনলাইনের বাইরে হয়, তাহলে একধরনের শাস্তি আর অনলাইনে হলে আরেক ধরনের শাস্তি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৯ ধারার অধীনে মামলা করা হলে এবং মানহানিকর কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য ৩ (তিন) বছরের কারাদণ্ড ও ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মানহানি ডিজিটাল মাধ্যমে হতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন তবে ৫ (পাঁচ) বছরের কারাদণ্ড ও ১০ (দশ) লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মতিউর রহমান জানিয়েছেন, চলমান মামলার মধ্যে ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলাও রয়েছে।

সংবাদ প্রকাশের কারণে এভাবে রাজধানী ঢাকাসহ জেলায় জেলায় একের পর এক সরাসরি মামলা হলেও প্রেস কাউন্সিলে খুব একটা অভিযোগ কখনো কেউ করেননি। ‘তবুও শ্বশুর বাড়িতে ঠাঁই হলো না হোসনে আরার’-এমন একটি শিরোনামে একবার সংবাদ প্রকাশ করায় দায়ের হওয়া মামলা প্রেস কাউন্সিল খারিজ করে দেয়। সেটা ২০০১ সালের কথা।

প্রথম আলো কিংবা তাদের কোনো সাংবাদিকের নামে মামলার কারণে দেশে-বিদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে রোজিনা ইসলামের ঘটনায়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া এই নারী সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আক্রমণের শিকার হন। তাকে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে শত বছরের পুরনো ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’ গ্রেপ্তার দেখিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত থানায় রেখে কাকডাকা ভোরে কারাগারে নেয় শাহবাগ থানা।

সেদিন রাতে এই প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে থানার ভেতরই অসুস্থ হতে দেখেন। অন্যদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা থানার বাইরে বিক্ষোভ করলে পুলিশ শুরুতে মারমুখী আচরণ করে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা থেকেও রেহাই পাননি প্রথম আলোর সাংবাদিকেরা। সর্বশেষ স্বাধীনতা দিবসে গণমাধ্যমটির অনলাইন সংস্করণের এক প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশের সময় জাকির হোসেন নামের এক দিনমজুরের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ফটোকার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবি ছিল একটি শিশুর। পোস্ট দেওয়ার ১৭ মিনিটের মাথায় ফটোকার্ডটি প্রত্যাহার করে সংশোধনী দেয় প্রথম আলো। এই ঘটনায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক (সাভারে কর্মরত) শামসুজ্জামান শামস, সম্পাদক মতিউর রহমান এবং সহযোগী ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। মামলায় মতিউর রহমান ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন পেলেও চারদিন কারাগারে থেকে জামিন পান শামসুজ্জামান।

এভাবে একের পর এক মামলা পেশাগত কাজে ‘অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে’ জানিয়ে দৈনিকটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, “অমূলক অজুহাতে পর পর মামলা হতে থাকলে সাংবাদিকদের মনে চাপ পড়াই তো স্বাভাবিক। তবে শুরু থেকে নানা সরকারের আমলেই এ রকম অভিজ্ঞতায় আমরা অভ্যস্তও হয়ে উঠেছি। আমরা বুঝতে পেরেছি, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করলে এসব বিধিলিপি। আমাদের রক্ষাকবচ হলো সাংবাদিকতার মূল নীতিগুলোর চর্চা আর বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য পাঠকদের কাছ থেকে পাওয়া ব্যাপক সমর্থন। এটাই আমাদের শক্তি।”

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা জানি, বাংলাদেশে এখনো অব্দি গণতন্ত্রের যে পরিস্থিতি, সেখানে জনস্বার্থে সাংবাদিকতা করলে চাপ এড়ানো সম্ভব হবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমস্যা হলো, এটা সাংবাদিকতা চর্চার সীমানাকেই সংকুচিত করে এনেছে। সংবিধানে ‘সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা’ বলে সাংবাদিকতার অবাধ অধিকার দেওয়া আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রকান্তরে সাংবিধানিক অধিকারকেই খর্ব করছে। এই আইন বাতিল না হলে দেশের সাংবাদিকতা বিকলাঙ্গ হয়ে থাকবে।”

“কোনো প্রতিনিধির নামে মামলা হলে প্রথম আলো সার্বিকভাবে তার পাশে থাকে,” জানিয়ে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, “কোনো কর্মীর নামে মামলা হলে আইনি ও মানবিক সহায়তা তো আমরা অবশ্যই দেই। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। তাদের প্রত্যয় দেই। বাংলাদেশের আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আমরা নিয়মনীতি মেনে সাংবাদিকতা করি। তাই এই প্রত্যয় আমাদের থাকে যে ন্যায়বিচার আমরা পাব।”

সরকারের বক্তব্য

বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, ‘‘প্রথম আলো মামলার যে হিসাব দিচ্ছে ৫০ কিংবা ৫২টা, তার অধিকাংশ ব্যক্তি বিশেষের নামে। পত্রিকার বিরুদ্ধে এত মামলা নেই, হয়তো দুএকটি আছে।’’

‘‘রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলে প্রথম আলোর অনুষ্ঠানে একটা ছাত্র বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেল, তাকে পাশের হাসপাতালে না নিয়ে দূরের হাসপাতালে নেওয়া হলো। পরে সে মৃত্যুবরণ করেছে। এই ঘটনা জানার পরও অনুষ্ঠান চলমান থাকলো, এতে কি মামলা হবে না? তারপর যেদিন সকালে রানা প্লাজা ধসে পড়লো, বিকেল বেলা জমকালো নাচগানের অনুষ্ঠান করা হলো। একটি বার সেখানে শোক প্রকাশ করা হলো না-এতে অবশ্য মামলা হয়নি; কিন্তু এথিকাল দিকটা কোথায়, সেই প্রশ্ন তো মানুষ তুলতেই পারে। আর যখন কোনো ব্যক্তি বিশেষ ক্ষুব্ধ হয়, সে তো মামলা করতেই পারে। প্রথম আলো যদি বেশি মানুষকে ক্ষুব্ধ করে, তাহলে বেশি মামলা হয়েছে। তবে আমি তথ্যমন্ত্রী হিসেবে বলতে পারি, কারো বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হওয়া সমীচীন নয়।’’

সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘‘তারা তো প্রচুর সরকারি বিজ্ঞাপন পায়। তাদের বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়েছে কি না, তা আমার সঠিক জানা নেই।’’

সূত্র: ভয়েজ অব আমেরিকা