বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কেউ যাতে পাচারের শিকার না হয় সে জন্য ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে হবে। শুধু উদ্ধার, প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন নিয়ে চিন্তা করা উচিত নয়।
বুধবার (২ অগাস্ট) বিশ্ব পাচারবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের (এমও এইচএ) সহায়তায় বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশনের (বিডিইউএনএনএম) কাউন্টার ট্রাফিকিং ইন পার্সনস টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ (সিটিআপি-টিডব্লিউজি) ঢাকায় এই জাতীয় সংলাপের আয়োজন করে।
‘পাচারের শিকার সকলের পাশে থাকব, বাদ যাবে না কেউ’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সংলাপটি আয়োজন করা হয়। এতে মানবপাচার মোকাবিলায় একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ইউএনওডিসি গ্লোবাল রিপোর্ট অন ট্রাফিকিং ইন পারসন্স-২০২২ অনুসারে, সামগ্রিকভাবে পাচারের শিকার ৪১ শতাংশ ভুক্তভোগী কঠিন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সক্ষম হয়। তারা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়। বাকিদের ক্ষেত্রে পাচারবিরোধী প্রতিক্রিয়া কম লক্ষ্য করা যায়।
সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস, ইউএনওডিসির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি মার্কো টেক্সেইরা ও আইওএম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী ফাতিমা নুসরাত গাজ্জালি প্রমুখ।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মানবপাচার মামলার দুর্বলতা এবং মূল কারণগুলো মোকাবিলার জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, অভিবাসন প্রক্রিয়া উন্নত করতে এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এটিকে সহজ, টেকসই ও সময়োপযোগী করতে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আরও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসহ ই-পাসপোর্ট চালু করেছি।
গুয়েন লুইস বলেন, রোহিঙ্গাসহ পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া সমস্ত ব্যক্তির জাতীয় সুরক্ষা পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
পাচারের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্ত করে রেফার করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অন্য প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা তৈরি অব্যাহত রাখা ও পাশাপাশি তদন্ত করার ওপর দেন তিনি। একই সঙ্গে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন তিনি।
মার্কো টেক্সেইরা বলেছেন, “মানবপাচার সংক্রান্ত ইউএনওডিসির সর্বশেষ গ্লোবাল রিপোর্ট বিশ্বব্যাপী পাচারের শিকারদের শনাক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে পাচারের সঙ্গে জড়িতদেরও শনাক্ত করতে হবে। এই জঘন্য অপরাধের অবসান ঘটাতে পাচারের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সহায়তা করতে এবং বিচারের জন্য আমাদের একসঙ্গে আরও কিছু করতে হবে”।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) মো. খায়রুল আলম শেখ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মীর খায়রুল আলম, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শ মো. মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ঈশিতা রনি, ইউএনওডিসির জাতীয় কর্মসূচি সমন্বয়কারী মাহদী হাসান ও উইনরক ইন্টারন্যাশনালের ইউএসএআইডির ফাইট স্লেভারি অ্যান্ড ট্রাফিকিং-ইন-পার্সন (এফএসটিআইপি) অ্যাক্টিভিটি পার্টির প্রধান সুসান স্ট্যাম্পারও আলোচনায় অংশ নেন।