ভারতের উত্তরাঞ্চলে মহাকুম্ভ উৎসব চলাকালে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী পবিত্র পানিতে ডুব দিতে দৌড়ানোয় বুধবার সকালে বিশ্বের বৃহত্তম এই ধর্মীয় সমাবেশে পদপিষ্ট হয়ে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রয়াগরাজ শহরের পুলিশ কর্মকর্তা বৈভব কৃষ্ণ বলেছেন, আরও ৬০ জন আহতকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়।
ছয় সপ্তাহের এই হিন্দু উৎসবের বিশেষ পবিত্র দিন ছিল বুধবার। গঙ্গা, যমুনা ও পৌরাণিক সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে প্রথামাফিক পুণ্যস্নান করতে রেকর্ড ১০ কোটি পুণ্যার্থী হাজির হবেন বলে ধারণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, পবিত্রস্থলে ডুব দিলে অতীতের পাপ ধুয়ে যায় এবং পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে বলেছেন, সাধুদের মিছিলের জন্য নির্মিত বেষ্টনী তীর্থযাত্রীরা লাফ দিয়ে টপকানোর চেষ্টা করায় এই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে।
এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হল, ছাইভস্ম মাখা হাজার হাজার হিন্দু সাধু, যারা পুণ্যস্নানের জন্য সঙ্গমস্থলের দিকে বিশাল মিছিল করে অগ্রসর হন।
হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করতে ভারতীয় প্রশাসন ১৬ ঘন্টার বেশি সময় নিয়েছে; এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রাণহানির কথা স্বীকার করে এই ঘটনাকে “অত্যন্ত দুঃখজনক” বলে অভিহিত করেছেন এবং সমবেদনা জানিয়েছেন।
প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই) সংবাদ সংস্থা সরোজিনী নামের এক তীর্থযাত্রীকে উদ্ধৃত করে জানায়, “ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ ঠেলাঠেলি শুরু হয় এবং আমরা আটকে পড়ি। আমাদের অনেকেই পড়ে যান এবং জনতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।” তিনি আরও বলেন, “পালানোর কোনও পথ ছিল না। সব দিক থেকে ধাক্কা আসছিল।”
শোকার্ত পরিবারগুলি অস্থায়ী হাসপাতালের বাইরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। নিখোঁজ প্রিয়জনদের খবর জোগাড় করতে তারা মরিয়া হয়ে ওঠেন। পদপিষ্টের ঘটনাস্থলে কাপড়, চাদর ও ব্যাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল।
পদপিষ্টের ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও ৪ হাজার হেক্টর বিস্তৃত এই তীর্থস্থানে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল অব্যাহত থাকে, এমনকি যখন পুলিশ মেগাফোনে তাদের সঙ্গমস্থল এড়িয়ে যাওয়ার অনুরধ করছিল। অন্যান্য নদীর তীরে বরং স্নান করতে মানুষকে অনুরোধ করেছেন আদিত্যনাথ।
আদিত্যনাথ বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে, তবে তীর্থযাত্রীদের বিশাল ভিড় এখনও রয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেছেন, ৯-১০ কোটি তীর্থযাত্রী ওই স্থানে হাজির হয়েছিলেন।
তিনি জানিয়েছেন, বুধবার সকাল ৮টার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি মানুষ পুণ্যস্নান সেরেছেন।