Tuesday, November 26, 2024

Top 5 This Week

Related Posts

মর্গে বিকৃত যৌনাচার মামলায় ডোম মুন্না ৪ দিনের রিমান্ডে

 

ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা নারী মৃতদেহের সাথে বিকৃত যৌনাচার ও ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী ডোম মুন্না ভগতকে আবারো ৪ দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস দুই মামলায় মুন্নাকে ২ দিন করে মোট ৪ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

সোমবার মুন্নাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। ২ মামলায় আসামি মুন্নাকে ৭ দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন জানান তিনি।

গত বছর ১৯ নভেম্বর সিআইডির ইন্সপেক্টর জেহাদ হোসেন বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর ২০ নভেম্বর আসামি মুন্না আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই দিন জবানবন্দিতে অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করলেও সে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত নয় বলে জানায়। মুন্না বলে, রাতে মর্গে সে একাই থাকত। নিরিবিলি পরিবেশ এবং কোনো লোকজন না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। তার ভাষায়, ‘মৃত মানুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক দোষের কিছু না।’
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, সিআইডি ফরেনসিক ল্যাবের বিশ্লেষকরা ‘কোডেক্স’ নামে সফটওয়্যারে ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখতে পায় ৫টি মৃতদেহে একই ব্যক্তির ডিএনএ। পাঁচ ভিক্টিমই কিশোরী। তাদের বয়স যথাক্রমে- ১১, ১৩, ১৪, ১৬ এবং ১৭ বছর। সবগুলোই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা। ৫টি আত্মহত্যার মধ্যে ৪টি মিরপুর এবং ১টি ঘটেছে মোহাম্মদপুর এলাকায়। ২টি ঘটেছে ২০১৯ সালের মার্চ ও অক্টোবর মাসে। বাকি তিনটির একটি এ বছরের মার্চ ও ২টি আগস্ট মাসে ঘটেছে। সময়, এলাকা, বয়স ও লিঙ্গ একই ধরনের হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে সিআইডির ধারণা হয় ভিক্টিমরা কোনও সিরিয়াল কিলারের শিকার।
২০১৫ সালে হাইকোর্ট এক আদিবাসী নারীর অপমৃত্যু মামলার রায়ে এক ঐতিহাসিক নির্দেশ দেন। তাতে বলা হয়, কোনো নারীর অপমৃত্যু হলে, তাদের যৌনাঙ্গ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করতে হবে। দেখতে হবে অপমৃত্যুর আগে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা। তারপর থেকে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব আদালতের নির্দেশ মেনে আসছে।
সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, শিগগিরই ওই সিরিয়াল কিলার আরও হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কা নিয়ে তদন্তে নামেন তারা। তারা মোহোম্মদপুর ও কাফরুল থানায় হওয়া ৫টি অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন। তাতে তারা জানতে পারেন, ৫টি মামলার ভিক্টিমের সুরতহালে কোনো ধরনের জোরজবরদস্তির আলামত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তে প্রতিটি ঘটনাকে আত্মহত্যা বলা হয়েছে।
এছাড়া, প্রত্যেক ভিক্টিম দরজা লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ৩টি ঘটনায় স্বজনদের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। সব মিলিয়ে সিআইডির কর্মকর্তারা সিদ্ধান্তে আসেন তাদের প্রাথমিক ধারণা ভুল। এরপরই ওই অভিনয়ের আশ্রয় নেয় সিআইডি।
অনুসন্ধানে নেমে সিআইডি জানতে পারে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গের মূল ডোম রজত কুমার। তাকে সহায়তা করে আরও ৫/৬ জন।  তার মধ্যে রজতের ভাগ্নে মুন্না ভগত রাতে মর্গের পাশেই একটি কক্ষে থাকে। মুন্নাকেই সন্দেহ হয় সিআইডির। গুমের শিকার হওয়া এক যুবকের স্বজন সেজে মুন্নার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন সিআইডির দুই কর্মকর্তা।
তাদের একজন জানান, বেশ কয়েকদিন লাগাতার তারা মুন্নাকে ফলো করতে থাকেন। রাতে মুন্নাই থাকে এটি নিশ্চিত হতে তারা রাত ১টা বা ২টায়ও মর্গে গিয়েছেন। ছবি দেখিয়ে জানতে চেয়েছেন এই চেহারার কোনো লাশ মর্গে এসেছে কিনা। সম্পর্ক গাঢ় হলে, কৌশলে মুন্নার পান করা সিগারেটের ফিল্টার সংগ্রহ করেন তারা। ফিল্টার থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ’র সাথে মিলে যায় ওই পাঁচ কিশোরীর দেহে পাওয়া ডিএনএ’র।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম ধরা পড়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে একটি হাসপাতাল মর্গের ঘটনা ধরা পড়েছে। সারা দেশের অন্য হাসপাতালগুলোতেও অনেক ডোম কাজ করেন। তারা যে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে না সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। খুঁজলে আরো অনেক পাওয়া যেতে পারে। তাই অন্যান্য হাসপাতালে সিআইডির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
মুন্নার বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের জুরান মোল্লার পাড়ায়। সে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের কোনো কর্মচারী নয়। হাসপাতালের ডোম যতন কুমারের ভাগ্নে হওয়ার সুবাদে মুন্না সেখানে কাজ করত। মর্গে আসা মরদেহগুলো সে গ্রহণ করত। আত্মহত্যাকারী ওই কিশোরীদের লাশ বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে মর্গে আনা হয়। তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার এসব লাশ কাটার সময় নির্ধারণ ছিল পরদিন। রাতের বেলা লাশগুলো মর্গে রাখা হতো। মুন্না থাকত সেখানেই। লাশ পাহারার দায়িত্বও ছিল তার ওপর। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বিকৃত মানসিকতা চরিতার্থ করত মুন্না। সূত্রঃ সময় টিভি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles