Skip to content

ভূমিখেকোরা যা খুশি করতে পারবেনা



দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | বিশেষ প্রতিনিধি : প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৩, ০৯:৪৬ পিএম

বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেছেন, এখানে নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে কর্মচারীদের জন্য মসজিদ মন্দির নির্মাণ করেছে। এখানে সহাবস্থানের ভেতরে দিয়েই শ্রমিকেরা কাজ করে আসছিল। আমরা অবাক হই এখানে ৮০ থেকে ৮১ বছর ধরে নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে পূজা হয়ে আসছিল। গত বছরেও এখানে পূজা হয়েছে। কোন একজন মিল মালিক তারা নাকি ১৮ থেকে একর জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছে। এখানে মিলের ভেতরে সামান্য কিছু জমিতে ৪০ থেকে ৫০ টি ঘরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বাস করে। সেখানে কিন্তু সরকার থেকে তাদেরকে এলটমেন্ট দেয়নি। অথচ সামান্য কিছু জমির প্রতি তাদের যে লোভ এটা আমি লোভ বলবো না এটা সাম্প্রদায়িক উস্কানী দেয়ার সামিল বলে আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি। মিলটির মালিক হাজার কোটি টাকার মালিক তিনি সম্প্রীতি রাখবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি আমরাতো সম্প্রীতির মধ্যেই বাস করি। কিন্তু এখানে উচ্ছেদ করে তিনি আজকে কি ম্যাসেজ দিতে চান? আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ভূমিখেকোরা যা খুশি করতে পারবেনা। আমরা পরিস্কার ভাষায় বলে দিতে চাই নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে আগে যেখানে পূজা হতো সেখানেই পূজা হবে আর যদি সেটা না হয় তাহলে অধিকার কিভাবে আদায় করতে হয় সেটা আমরা জানি।  

বুধবার ৪ অক্টোবর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে ঐতিহ্যবাহী নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে ভেঙ্গে ফেলা মন্দির পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন  বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মন্ডল, কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রজত কুমার সুর রাজু, পুজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সেক্রেটারী শিখন সরকার শিপন, মহানগর কমিটির সেক্রেটারী সুশীল দাস, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক ও পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।

পুজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সেক্রেটারী শিখন সরকার শিপন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে মন্দিরের স্থান পরিদর্শন করেছেন ও সেখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আমাদেরকে আশ^স্ত করেছেন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য যা কিছু করণীয় সেটা করবেন।  

উল্লেখ্য গত ১ অক্টোবর নিট কনসার্ন গ্রুপের দখলদারিত্ব থেকে ঐতিহ্যবাহী নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলটির সম্পদ রক্ষার দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে আন্দোলনরত শেয়ারহোল্ডাররা। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, দেবোত্তর বোর্ড ও হিন্দু ফাউন্ডেশন বাস্তবায়নের দাবীতে পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশে হিন্দু নেতারা লক্ষ¥ীনারায়ণ কটন মিল দখল ও মিলের শতবর্ষী পুরনো মন্দির ভেঙে ফেলার অভিযোগ তুলে নিট কনসার্নের বিরুদ্ধে কথা বলেন। পাশাপাশি এ সময় নীট কনসার্ন গ্রুপকে ভুমিদস্যু উল্লেখ করে তারা পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের সাথে দখলকারীদের আইনের আওতায় আনারও দাবি করেন। একই সাথে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলে পূজা বন্ধ থাকলে নারায়ণগঞ্জের সমস্ত পূজা বন্ধ থাকবে বলেও হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তারা।

এর আগে গত ১৮ জুন মিলটির অভ্যন্তরে মন্দিরের অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলার খবর পেয়ে ছুটে যান পুজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য সচিব শিখন সরকার শিপন, মহানগর কমিটির সদস্য সচিব সুশীল দাস, প্রদীপ দাস, রঞ্জিত মন্ডলসহ কয়েকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতা। এসময় পুজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিট কনসার্ন গ্রুপের পরিচালক মনির হোসেন মনা অসদাচরণ করেন এবং পুজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সামনেই শেয়ারহোল্ডারদের হুমকী দিয়ে বলেন, ‘গ্যানজাম লাগাইয়েন না। যদি জিদ উঠে তাইলে বাহির থেকে লোক খবর দিমু। সব পিডাইয়া ভাইঙ্গা দিমু।’

আন্দোলনরত শেয়ারহোল্ডাররা জানান, ১৮ একর ৬৫ শতাংশের উপর গড়ে ওঠা শতবছরের পুরনো নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলটি ২০০১ সালে ২১ মার্চ ৫১০ জন শেয়ার হোল্ডারদের মালিক বানিয়ে মিলটি হস্তান্তর করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। ২০০১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মিলটিতে প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকা আয় হলেও ১২ বছরে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। শেয়ারহোল্ডাররা হিসাব চাইতে গেলে তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ তাদের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আমাদের হুমকী ধমকী দিতো। এরপর মিলটির একজন বিনিয়োগকারী নিয়োগের কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে ৩৮২ জনের শেয়ার হাতিয়ে নিয়ে নিট কনসার্ন গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয়। অথচ মিলটির শেয়ার বিক্রি করা আইনগতভাবে বৈধ নয়। আনুমানিক মূল্য ৭০০ কোটি টাকা হলেও মাত্র ৩৫ কোটি টাকায় মিলটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে নিট কনসার্ন গ্রুপের জয়নাল আবেদীন মোল্লা ও তার লোকজন এমনটিই অভিযোগ শেয়ারহোল্ডারদের। ৫৩ জন শেয়ারহোল্ডার শেয়ার বিক্রি করতে রাজী না হওয়ায় তাদের উপর গত ১০ বছর ধরে চালানো হয়েছে নির্যাতনের স্টীম রোলার। ২০১৩ সালের ৩১ আগষ্ট বকেয়া বিলের অজুহাতে মিলের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় মিলের দুর্নীতিবাজ পরিচালনা পর্ষদ। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র নিয়ে হামলাও চালিয়েছে। ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর পরিচালনা পর্ষদের লোকজন শেয়ারহোল্ডারদের কলোনীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এক শেয়ারহোল্ডারের রিট পিটিশন অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারী হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের জাস্টিস মোঃ রেজাউল হাসান নির্বাচন দেয়ার আদেশ দেন। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নিরপেক্ষ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে ও শেয়ারহোল্ডারদের সরাসরি ভোটে পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক পদে নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে হাইকোর্টের নির্দেশনা না মেনে দখলদারিত্ব অব্যাহত রেখেছে নিট কনসার্ন গ্রুপ।




বার্তা সূত্র