Skip to content

ভারতে মুম্বাইয়ে আরব সাগরের ওপর তৈরি হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম সেতু

ভারতে মুম্বাইয়ে আরব সাগরের ওপর তৈরি হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম সেতু

ভারতে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে লম্বা সেতু আসামের ঢোলা সাদিয়া সেতু বা ‘ভূপেন হাজারিকা সেতু’। উত্তর-পূর্ব আসামের তিনসুকিয়া জেলায় পুব হিমালয়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা লোহিত নদীর সুবিশাল চরের এপার-ওপার ছড়ানো এই সেতু ৯ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা। কাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে, উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এবার তার দ্বিগুণেরও বেশি লম্বা সেতু প্রায় তৈরি হওয়ার প্রায় শেষ পর্যায়ে। মুম্বইয়ের ‘ট্রান্স হারবার লিঙ্ক’ তৈরি হচ্ছে আরব সাগরের ওপর।

মুম্বই আসলে একটা মস্ত বড় দ্বীপ, যা কার্যত ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এই ব্যাপারে মুম্বইয়ের মিল আছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের সঙ্গে। নিউ ইয়র্ক-ও আদতে কয়েকটি দ্বীপের সমাহার, যার একেবারে কেন্দ্রে আছে নিউ ইয়র্ক-এর প্রাণভোমরা ম্যানহাটান দ্বীপ। মুম্বইও সেরকমই একটা দ্বীপ ও তার সন্নিহিত এলাকা নিয়ে গঠিত। ইতিহাস যাকে চেনে ‘সলসেট দ্বীপ’ বলে। বিষমবাহু ত্রিভুজের মত সেটা মূল ভূখণ্ড থেকে নেমে এসেছে দক্ষিণে। তিন বাহুর উত্তরে ভাসাই প্রণালী, পুবে থানে প্রণালী ও পশ্চিমে সুবিস্তৃত আরব সাগর।

মুম্বইয়ের সলসেট দ্বীপের উত্তর পুর্বে, থানে প্রণালী বা থানে ক্রিক পেরিয়েই মূল ভূখণ্ডে গড়ে উঠেছে মুম্বইয়ের পার্শ্ববর্তী উপনগরী নবি মুম্বই। এতদিন সেই নবি মুম্বই ছিল কার্যত মুম্বইয়ের থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। অনেকটা ঘুরে ট্রম্বে, ভাসাই হয়ে পুরনো ভাসাই ব্রিজ টপকে যেতে হত নবি মুম্বই। কিন্তু এবার একেবারে দক্ষিণ মুম্বইয়ের সেওড়ি থেকেই সরাসরি গোটা থানে প্রণালীটাই টপকে নবি মুম্বই যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে সুবিশাল ট্রান্স মুম্বই হারবার লিঙ্ক। খরচ হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

মুম্বই থেকে এলিফ্যান্টা গুহা যেতে এখন লঞ্চে করে সমুদ্র পেরোতে হয়, এই নতুন সেতু পেরোবে সেই সমুদ্রটাই। ওটারই পোশাকি নাম থানে প্রণালী। এলিফ্যান্টা দ্বীপের উত্তর দিক দিয়েই এগোবে এই বিশাল সেতু। দৈর্ঘ্য হবে ২১.৮ কিলোমিটার। চওড়ায় ২৭ মিটার। থাকবে ছয় লেনের রাস্তা, আপৎকালীন নিষ্ক্রমণ পথ, এমনকি ক্র্যাশ ব্যারিয়ার। এর মধ্যে ১৬.৫ কিলোমিটার থাকবে কার্যত সমুদ্রের ওপর। বাকি অংশ স্থলভাগের ওপর, নেমে আসবে সৈকত থেকে অনেকটাই ভেতরে। সেতুটির জন্য লেগেছে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টন ‘রিইনফোর্সমেন্ট’ ইস্পাত, ৯৬ হাজার টন ‘স্ট্রাকচারাল’ ইস্পাত, ৮ লক্ষ ৩০ হাজার ঘনমিটার আয়তনের কংক্রিট। সমুদ্রের গভীরতম অংশে এক একটি স্তম্ভের গভীরতা হবে জলতলের ৪৭ মিটার নীচ অবধি। এই সেতুটি নির্মাণেই দেশে প্রথমবার ‘অর্থোপেডিক ডেক’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাণের দায়িত্বে আছে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো, জাপানের একটি সংস্থা ও কোরিয়ার দায়েউ নির্মাণ সংস্থা।

প্রথমে পরিকল্পনা ছিল, এই সেতু দিয়ে চলবে মেট্রোও। কিন্তু পরে মুম্বই মেট্রোপলিটান রিজিওন ডেভলপমেন্ট অথরিটি জানিয়ে দেয়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না। এমনিতেই খরচ বিপুল, এরপর দুই ডেক বানিয়ে নিচে মেট্রোর লাইন পাততে গেলে খরচ আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে। তদুপরি, মুম্বইতে মেট্রোর লিঙ্ক এখনও শেষ হয়নি। শহরের ভেতরের মেট্রো পরিষেবা পুরোপুরি চালু না করে এত বড় প্রকল্প হাতে নেওয়াটা ঠিক হবে না। তাই শুধু সড়ক সেতু বানানোরই উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ইতিমধ্যেই সেতুটির নামও ঠিক হয়েছে। মুম্বইয়ের বিখ্যাত সমুদ্র সেতু ‘বান্দ্রা ওরলি সি লিঙ্ক’, আর এক ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময়, তৈরির পরে নাম রাখা হয়েছিল রাজীব গান্ধী সেতু। নতুন সেতুর নাম ঠিক হয়েছে ‘অটলবিহারী বাজপেয়ী ট্রান্স হারবার লিঙ্ক’। যা মুম্বই বন্দরকে জুড়বে জওহরলাল নেহরু বন্দরের সঙ্গে।

সূত্র: ভয়েজ অব আমেরিকা