Skip to content

ভারতে কতটা স্বাধীন সংবাদমাধ্যম? বাইডেনের সঙ্গে কী আলোচনা করলেন মোদি?

ভারতে কতটা স্বাধীন সংবাদমাধ্যম? বাইডেনের সঙ্গে কী আলোচনা করলেন মোদি?


Joe Biden On Modi’s Press freedom: ২০২৩ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারতের র‌্যাঙ্কিং ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬১-এ নেমে এসেছে।

ভারতের সংবাদ মাধ্যম কি মুক্ত কণ্ঠে কথা বলে? ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা কি সত্যিই নিরপেক্ষ হয়ে বাস্তবকে তুলে ধরেন? প্রশ্ন করেন? যদি তাই করেন, তাহলে গোদি মিডিয়ার জন্ম হলো কীভাবে? সদ্য সমাপ্ত জি২০ সম্মেলনে মোদিকে যখনই পৃথকভাবে পেয়েছেন, বৈঠক করেছেন, এই প্রসঙ্গেই নাকি কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেনের দাবি, দিল্লিতে জি ২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে নানা বৈঠকে তিনি মানবাধিকারের সম্মান, বুদ্ধিজীবী সমাজ এবং মুক্ত গণমাধ্যমের ভূমিকা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেই মোদির সঙ্গে এসব আলোচনা করেছেন যিনি প্রধানমন্ত্রিত্বের দীর্ঘ মেয়াদে সাংবাদিক সম্মেলন অবধি করতে চাননি। করলেও চুপ থেকেছেন। যিনি মণিপুরের জঘন্য ঘটনার ৭৮ দিন পর ৩০ সেকেন্ডের জন্য মুখ খুলেছিলেন।

ফিরে যাওয়া যাক মাস খানেক আগের ঘটনায়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একজন সাংবাদিক ২২ জুন ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একটি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রশ্ন করেছিলেন। তারপর সেই সাংবাদিককে কীভাবে হেনস্থা করা হয় বিবিধ উপায়ে নিশ্চয়ই মনে রেখেছেন বাইডেন। দেশে তিনি সাংবাদিক সম্মেলনের ধারকাছ মাড়ান না, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর প্রথম সরকারি সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্ন নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন- রাত দুপুরে সাংবাদিককে গ্রেফতার কেন? দেবমাল্য বাগচী আসলে কোন সত্য ফাঁস করেছিলেন?

সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকী ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “অনেক মানবাধিকার গোষ্ঠী রয়েছে যারা বলে যে আপনার সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে এবং সমালোচকদের চুপ করাতে চাইছে। আপনি এবং আপনার সরকার আপনার দেশের মুসলমান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা এবং বাকস্বাধীনতা বজায় রাখতে কী পদক্ষেপ করছে?” ব্যাস! তারপর থেকেই, অনলাইনে তাঁর ধর্ম, তার সম্মান সব কিছুই খোলামকুচির মতো হয়ে যায় ট্রোলিংয়ের ধাক্কায়।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে ২০২৩ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারতের র‌্যাঙ্কিং ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬১-এ নেমে এসেছে। আর বাইডেন মোদির সঙ্গে আলোচনা করছেন সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিয়ে!

বাইডেন দিল্লি থেকে সোজা গিয়েছিলেন ভিয়েতনামে। সেখানেই এই মন্তব্য করেছেন তিনি। বাইডেন বলছেন, “আমি সবসময় যেমন করি, মানবাধিকার, সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছি। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছি।”

মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য সামনে আসতেই ভারত জুড়ে বিরোধীস্বরগুলি জেগে উঠেছে। কংগ্রেস স্বাভাবিকভাবেই বাইডেনের এই বক্তব্যের সারবত্তা ঘিরে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স-এ লিখেছেন, “না প্রেস কনফারেন্স করুঙ্গা, না করনে দুঙ্গা কোনও প্রভাব ফেলেনি।” কংগ্রেস বলছে, দেশে এসে নরেন্দ্র মোদির মুখের উপর বাইডেন মানবাধিকার, সুশীল সমাজের ভূমিকা এবং মুক্ত সংবাদ মাধ্যমের প্রতি সম্মানের বিষয়ে যা বলেছেন, সেই বিষয়টিই ভিয়েতনামেও বলেছেন।

আরও পড়ুন- ধরে ধরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর, কী লুকোতে চাইছে মণিপুর প্রশাসন

এর আগে জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেন যে, দিল্লিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে বাইডেনের দলকে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠক সম্পর্কে কোনও প্রশ্নই করতে দেওয়া হয়নি। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভিয়েতনামে সরাসরি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন, মিডিয়ার প্রশ্ন শুনছেন, উত্তর দিচ্ছেন। এতে আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পদ্ধতি এটাই, পথও এটাই। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া কেন ‘গোদি মিডিয়া’ নাম পেয়েছে তা খুবই স্পশট হয়ে গিয়েছে। এদেশের গণতন্ত্র মোদি-স্টাইলে চলছে বলে অভিযোগ কংগ্রেসের।

তবে হ্যানয়ে গিয়ে বাইডেন মোদিকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার উপায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তাঁদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা আগামীর রূপরেখা তৈরি করতে সাহায্য করবে বলেই তাঁর ধারণা। মোদির নেতৃত্ব এবং দিল্লিতে G20 সম্মেলনের আয়োজনের জন্য ঢালাও প্রশংসাও করেছেন বাইডেন।

More Articles



সংবাদ সূত্র