Skip to content

ভারতের কর্নাটকে নব নির্বাচিত কংগ্রেস সরকার বাতিল করল ‘লাভ-জিহাদ’ আইন সহ বিজেপি জমানার বহু সিদ্ধান্ত

ভারতের কর্নাটকে নব নির্বাচিত কংগ্রেস সরকার বাতিল করল ‘লাভ-জিহাদ’ আইন সহ বিজেপি জমানার বহু সিদ্ধান্ত

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তৎপর হয়ে উঠেছে ভারতের দক্ষিণে কর্ণাটকে বিধানসভা ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসা কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের। সরকারি পরিষেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত নতুন কংগ্রেস মন্ত্রিসভার শপথের দিন মন্ত্রিসভার পয়লা বৈঠকেই নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। চালুও করে দিয়েছেন একাধিক সিদ্ধান্ত।

বৃহস্পতিবার ১৫ জুন কনাটকের কংগ্রেস সরকার রাজ্যের ধর্মান্তকরণ আইনটি বাতিল করে দিল, যে আইনকে গোটা দেশ এখন লাভ জিহাদ বিরোধী আইন বলেই জানে। ক্ষমতায় এলে বিজেপি সরকারের আনা ওই আইনটি বাতিল করা হবে বলে নির্বাচনী ইস্তাহারে জানিয়েছিল কংগ্রেস।

হিন্দু মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয় অভিযোগ করে বিজেপি একে লাভ জিহাদ নাম দিয়েছে। আর তা আটকাতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ধর্মান্তকরণ বিরোধী চালু আইন কঠোর করা হয়েছে অথবা নতুন আইন প্রণয়ন হয়েছে। পথ দেখিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বিজেপি ক্ষমতায় থাকাকালে মুসলিমদের অভিযোগ ছিল ওই আইনে বহু সংখ্যালঘু তরুণকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিদ্দারামাইয়ার সরকার। সিদ্ধান্ত হয়েছে স্কুল স্তরের সিলেবাস থেকে চলতি শিক্ষাবর্ষেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার এবং বীর সাভারকারের জীবনী বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। পরিবর্তে সিলেবাসে ঢুকবে সমাজ সংস্কারক সাবিত্রী ভাই ফুলের জীবনী, জওহরলাল নেহরুর ‘লেটার্স ফ্রম এ ফাদার টু হিজ ডটার’ (১৯২৯ সালে দশ বছর বয়সি কন্যা ইন্দিরাকে লেখা ৩০টি চিঠির সংকলন) এবং আম্বেদকরকে নিয়ে লেখা কবিতা। এগুলি বর্তমান টেক্সট বইয়ে না থাকায় আলাদা করে ছাপিয়ে স্কুলে স্কুলে বিলি করে দেওয়া হবে।

এছাড়া কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত করেছে, স্কুলের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীতের পর সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করতে হবে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী সরকারি অনুষ্ঠান, বৈঠকের শুরুতেও সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করছেন।

বিজেপি আগেই এই সংক্রান্ত ঘোষণা নিয়ে সরব হয়েছে। দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সিটি রবির বক্তব্য, “কংগ্রেস আসলে অজ্ঞদের পার্টিতে পরিণত হয়েছে। তা না হলে তারা হেডগেওয়ারের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীকে নিশানা করত না। তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যের হল কংগ্রেস সরকার বিদেশি কমিউনিস্ট নেতা কার্ল মার্কস, মাও জে দংয়ের মতো মানুষের জীবনী পড়াতে আগ্রহী যাঁরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন না। ” অন্যদিকে, কর্নাটকের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা বিকে হরিপ্রসাদের দাবি, “হেডগেওয়ার মোটেই নিষ্ঠাবান স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন না। তিনি ছিলেন ছদ্ম সংগ্রামী।”

উল্লেখ, বাম ও কংগ্রেস শিবির গোটা সঙ্ঘ পরিবারকেই ব্রিটিশের বন্ধু বলে অভিযোগ করে থাকে। আর দু’ বছরের মাথায় আরএসএসের শতবর্ষ। তার আগে কর্নাটক সরকারের সিদ্ধান্তে সঙ্ঘ পরিবারও বিচলিত। তবে এখনও আরএসএস প্রকাশ্যে এই ব্যাপারে মুখ খোলেনি।

কংগ্রেসের বক্তব্য, সিদ্দারামাইয়া সরকার আসলে ‘অপারেশন ক্লিন’ চালু করেছে। অর্থাৎ আগের সরকারের বহু নীতি, আইন, বিধি তারা বাতিল অথবা সংশোধন করবে, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে শিক্ষাঙ্গনে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হলেই সরকার পদক্ষেপ করবে। সংশোধন করা হবে গরুর মাংস বিক্রি সংক্রান্ত আইন।

সম্প্রতি নতুন এক মন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, “স্লটার আইনে মহিষ হত্যার অনুমতি থাকতে পারলে গরুতে আপত্তি কেন?” মন্ত্রীর এই বক্তব্য ঘিরে তুমুল শোরগোল শুরু হয়। সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই অভিযোগ করেন, কংগ্রেস সরকার বিভাজন উসকে দিচ্ছে। হিন্দুদের মনে আঘাত করছে। গরুকে হিন্দুরা মাতৃজ্ঞানে পুজো করে থাকে।

মন্ত্রীর ওই বক্তব্যকে অবশ্য কংগ্রেস অনুমোদন করেনি। দল জানিয়ে দেয়, গো-হত্যার বিষয়ে মন্তব্য ব্যক্তিগত অভিমত, দলের নয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জানিয়ে দেন, কাউ স্লটার আইনেও বদল আনা হবে। গো-হত্যা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করায় বহু সাধারণ গো-পালক সমস্যায় পড়েছেন। কারণ, অসুস্থ, বয়স্ক গরু প্রতিপালন করার বিপুল খরচ বহন করতে হচ্ছে।

কেন্দ্রের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখরের বক্তব্য, কংগ্রেসের সমস্যা হল তারা নেহরু-গান্ধী পরিবার ও তাদের অনুগামীদের বাইরে ইতিহাসকে ভাবতেই পারে না। মন্ত্রীর আরও বক্তব্য, কংগ্রেস বিপুল মানুষের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তাদের ধীরে পদক্ষেপ করা উচিত। উচিত সকলের ভাবনা যাতে সরকারি সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হয়। মুখ খুলেছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বিজেপি নেতা বিসি নাগেশ। তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেস সরকার শিক্ষা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করতে চাইছে রাজ্যের সমস্যা থেকে দৃষ্টি সরাতে। আসলে যে বিপুল প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে তা পূরণ করার মতো অর্থ সরকারের হাতে নেই।

সূত্র: ভয়েজ অব আমেরিকা