বাবুল খান, বান্দরবান: [২] পার্বত্য জেলায় ১২টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বম, তঞ্চঙ্গা, মুরং, খুমী, লুসাই, খেয়াং, পাংখোয়া চাক এবং বাঙ্গালীদের বসবাস। পার্বত্য জেলা পরিষদে সরকারী কর্মচারী নিয়োগে সকল সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা অনুপাতে বৈষম্যহীন নিয়োগ প্রদানের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বান্দরবান পিসিএনপির জেলা কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
[৩] সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মো: মজিবর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাঝে ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প ছড়িয়ে উপজাতি ও বাঙ্গালীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টায় লিপ্ত একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল। সব ধরনের যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এখানে বসবাসরত ৫৪% বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েরা সরকারী ও বেসরকারী চাকুরী ও সুযোগ-সুবিধাদি পাচ্ছে না। এমনকি পার্বত্য জেলা পরিষদের বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারী ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও চাকুরী থেকে বঞ্চিত।
[৪] তিনি আরও বলেন, ১৯৮৪ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ছেলে-মেয়েদের জন্য মেডিকেল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর কোটার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতি বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৩২৫ জন উপজাতি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে কোটাতেই। অন্যদিকে এই একই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীদের জন্য কোটাতো দূরে থাক তেমন কোনো সুযোগ এখনো তৈরী করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২,২২৫ জন বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধুমাত্র ৬০৭ জন বাঙ্গালী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
[৫] মো. মজিবর রহমান বলেন, শিক্ষা, চাকুরী, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উপজাতি জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে ও উপজাতি কোটার চাকুরী সুবাদে অনেক দূর এগিয়ে রয়েছে। পাহাড়ি ম্রো, খুমী, বম, ত্রিপুরা, তঞ্চাঙ্গা, চাক, পাংখোয়া ইত্যাদি ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র সম্প্রদায় বাঙ্গালীদের ন্যায় বৈষম্যের শিকার। অপরদিকে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত দুর্ভাগা বাঙ্গালীরা সমতার ভিত্তিতে পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেনা। যার প্রেক্ষিতে এখানকার বাঙ্গালীরা শিক্ষা, চাকুরী, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক ও নেতৃত্বের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে।
[৬] তিনি বলেন, সম্প্রতি গত ১৭/০৭/২০২৩ইং তারিখে বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত স্মারক নং ২৯.৩৫.০০০০.০০৩.১১.০৮৫.২৩.১০১৮ এর আলোকে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের রাজস্ব খাতভূক্ত ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের অনলাইন সার্কুলার জারি করা হয়। কোন ধরনের বৈষম্য হলে, স্বজনপ্রীতি ও উপজাতীয়করণ করা হলে সরকারী কর্মচারী ও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। অবিলম্বে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক স্বজনপ্রীতি, দূর্নীতি প্রতিহংসা, সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করে পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের মধ্যে জনসংখ্যা ভিত্তিক সমবণ্টন করে সরকারী কর্মচারী নিয়োগের জোর দাবী জানান
[৭] এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবান জেলা কমিটির, সহ-সভাপতি-মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক-নাছির উদ্দিন প্রমুখ ও জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিক।