Skip to content

‘বীর নিবাস’: জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার

মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের আত্মমর্যাদা ও সম্মান সবার ওপরে। কারণ জীবনের মায়া ও পরিবারের টান উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করে এনেছেন তাঁরা। তাঁদের সংগ্রামের ফলেই বর্তমান স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্তিত্ব সম্ভব হয়েছে। তবে রাজাকারদের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা বহু ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। দলমত নির্বিশেষে সব মুক্তিযোদ্ধাকে আওয়ামী লীগ সম্মান দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোকে আওয়ামী লীগ কর্তব্য মনে করে।

অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও প্রয়াত যুদ্ধ বীরদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ‘বীর নিবাস’ নামে বাড়ি উপহার দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার পাঁচ জেলায় পাঁচ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ‘বীর নিবাস’ নামের বাড়ির চাবি হস্তান্তর করেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণ করা হবে।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ ৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর।

প্রতিটি নিবাসের আয়তন ৭৩২ বর্গফুট। একতলার এই বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ (ড্রয়িংরুম), একটি খাওয়ার কক্ষ (ডাইনিং), একটি রান্নাঘর, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও দুটি শৌচাগার থাকছে। প্রতিটি বাড়িতে থাকছে একটি উঠান, একটি নলকূপ, গবাদিপশু-হাঁস-মুরগি পালনের জন্য পৃথক শেড। প্রতিটি বাড়ির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।

বর্তমানে ৩০ হাজার বীর নিবাসের মধ্যে ২০ হাজার ৮৩৭টির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১৭ হাজার ৬৬০টি বীর নিবাসের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। এগুলোর নির্মাণকাজ বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান রয়েছে।

স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজের জন্য অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। অসচ্ছল বীরাঙ্গনারা সরাসরি বরাদ্দ পাবেন। অসচ্ছল যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রাধিকার পাবেন। অগ্রাধিকার পাবেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার অসচ্ছল স্ত্রী-সন্তানেরা।

এখানে উল্লেখ্য যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের মতো জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো স্থবির হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো পুনরায় শুরু করেন। তাই তিনি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল’ সামনে এনে পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল মানুষকে মূলধারায় আনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন এবং একই বছর তিনি সারা দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শুরু করেন “আশ্রয়ণ প্রকল্প”।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ছিল দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, তা বাস্তবায়নকেও প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। এ পর্যন্ত তিন দফায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি পরিবারকে জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়েছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের জুন থেকে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। ইতোমধ্যে তিন ধাপে প্রত্যেকটি উপকারভোগী পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। ‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চতুর্থ ধাপের ঘরগুলো মার্চের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সপ্তাহে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তান্তর করবেন এমন প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে গৃহহীনদের জন্য বাড়ি। দুই শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা দুই রুমের ঘর করে দেওয়া হয়েছে মাথার ওপর ছাদহীন বহু মানুষকে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে রান্নাঘর, টয়লেট, সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ, আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষেরও জায়গা। ভূমিহীন ও গৃহহীন যেকোনো বয়সের মানুষই এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। তবে প্রতিবন্ধী, বিধবা, প্রবীণ ও স্বামী পরিত্যক্তদের অসহায়ত্বের বিষয়টি বিবেচনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা অর্জনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। উপহারের এসব বাড়ি পেয়ে বদলে গেছে লাখো সহায়-সম্বলহীন মানুষের জীবন। যে মানুষগুলোর বেঁচে থাকাটাই ছিল দুঃস্বপ্নের মতো, এখন তাদের চোখেমুখে স্বাবলম্বী জীবনের হাসির ঝিলিক।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার-আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন করায় তারা যেমন মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে ঠিক তেমনি পেয়েছে নতুন জীবনের ঠিকানা। তাদের বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তা, পানি নিষ্কাশনেরও সুব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকের বেকারত্ব দূর হয়েছে, ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছে, সমাজে নতুন করে পরিচিত হচ্ছে তারা। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তারা।

এদিকে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকীতে দুই হাজার ৫০০ জন অসচ্ছল নারীকে দুই হাজার টাকা করে উপহার প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোবাইলের মাধ্যমে এই উপহারের অর্থ পাঠানো হয়।

পরিশেষে বলছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা জীবন দেশের মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। তিনি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন। আমার প্রত্যাশা রইলো তিনি যেন আমৃত্যু মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারেন।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন



বার্তা সূত্র