বিজয় দিবসে জয় এনে দিয়েছে মেয়েদের অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দল। অনূর্ধ্ব–১৯ নারী এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কাকে ২৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সোমবার এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেছিল জুনিয়র টাইগ্রেসরা।
একই দিন আরেকটি জয় দিয়েছে ছেলেরা। সোমবার সকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হারায় ছেলেদের জাতীয় ক্রিকেট দল। সুদূর কিংসটাউনে বিজয়ের আলো ছড়িয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি২০ জিতেছে টাইগাররা।
দুপুরে সে আনন্দ দিগুণ হয়েছে কিশোরীদের সাফল্যে। দুয়েমিলে বিজয় দিবসে দেশবাসীকে আনন্দের জোয়ারে ভাসাল ক্রিকেট।
বাঘিনীদের বিজয়গাথা
কুয়ালালমপুরে কিশোরী মেয়েদের পারফর্ম্যান্স ছিল ঝলমলে। বায়োমাস ওভালে বৃষ্টির কারণে ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশের মেয়েরা ৯ উইকেটে ১২২ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ৮ উইকেটে ৯৪ রানে থামে লঙ্কান মেয়েদের ইনিংস।
রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কা ৭ ওভারেই তুলে ফেলেছিল ২ উইকেটে ৪৭ রান। তবে ফারজানা ইয়াসমিন, সুমাইয়া আক্তারদের আঁটসাট বোলিংয়ে রানের গতি টেনে ধরে টাইগ্রেসরা। ধারাবাহিকভাবে উইকেট তুলে নিয়ে চাপ বাড়াতে থাকে প্রতিপক্ষের ওপর। শেষ পর্যন্ত অলআউট না হলেও ১০০-এর আগেই থেমেছে তারা। এতেই ২৮ রানের জয় পায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
অধিনায়ক সুমাইয়া ১২ রানে ৩টি এবং ফারজানা ও নিশিতা আক্তার ২টি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট নিয়েছে আফিয়া আশিমা।
এর আগে, টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের রান একশর ওপরে নিয়ে যায় চারটি ছোট ছোট ইনিংস। সাতে নামা সাদিয়া আক্তার করেন সর্বোচ্চ ২৫ বলে ৩১ রান। এ ছাড়া আফিয়া ২৩ বলে ২৫, সুমাইয়া ২১ বলে ২৪ এবং মোসাম্মৎ ইভা ১৯ বলে করেন ১৮ রান।
দারুণ এই জয়ের অন্যতম রূপকার নিশিতা আক্তার নিশি। ১৬ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন ১৬ বছর বয়সী এ অফস্পিনার।
একই মাঠে আগামীকাল স্বাগতিক মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচের ওপরই সকল সমীকরণ নির্ভর করছে। জিতলে গ্রুপসেরা হয়ে সুপার ফোরে উঠবে সুমাইয়া আক্তারের দল।
৬ দলের এশিয়া কাপে দলগুলো দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলছে। অপর গ্রুপে আছে ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল। গ্রুপের দুটি করে শীর্ষ দল উঠবে সুপার ফোরে।
ছেলেদের জয়গাথা
পাকিস্তানে স্মরণীয় সেই জয়ের পর সময়টা মোটেই ভালো যাচ্ছিল না। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের কাছে পর্যুদস্ত বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজে দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের পর ‘হোয়াইটওয়াশ’ হয় ওয়ানডেতে। কঠিন সময়ে টাইগাররা এমন দিনে ঘুরে দাঁড়াল, যে দিন বিজয়ের ৫৩ বছর উদ্যাপন করল দেশ।
১৪৭ রানের পুঁজি নিয়ে ৭ রানের নাটকীয় জয়ের নায়ক শেখ মেহেদীও ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে বিশেষভাবে বিজয়ের কথা স্মরণ করেছেন, সিরিজ জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন অধিনায়ক লিটন দাস। একই ভেন্যুতে বুধবার ভোরে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের দ্বিতীয়টিতে ক্যারিবীয়দের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
প্রায় তিনশ’ এবং তিনশ’র ওপরে রান করেও প্রথম ও শেষ ওয়ানডেতে পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো টি২০র স্পেশাল দলের বিপক্ষে এই স্কোর ডিফেন্ড করে ৭ রানের নাটকীয় জয় অবশ্যই স্মরণীয়।
সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ৬ উইকেটে করে ১৪৭ রান। ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস শেষ হয় ১ বল বাকি থাকতে ১৪০ রানে। এক পর্যায়ে ৬১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বড় পরাজয়ের দুয়ারে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু অধিনায়ক রোভমান পাওয়েল (মাত্র ৩৫ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৬০) ও রোমারিও শেফার্ডের (১৭ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২২) আগ্রাসী জুটিতে বদলে যায় দৃশ্যপট। ম্যাচ প্রায় মুঠোয় পুরে ফেলেন দুজন।
ওই অবস্থায় শেষ ৩ ওভারে, অর্থাৎ ১৮ বলে ক্যারিবীয়দের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২০ রান। তখনই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শেফার্ডকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। রানের গতি আসে কমে।
শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাই ১০ রানে। স্নায়ুর চাপ সামলে অসাধারণ বোলিং উপহার দেন হাসান মাহমুদ। ওভারের তৃতীয় বলে এই পেসার ফিরিয়ে দেন বিধ্বংসী পাওয়েলকে। পঞ্চম বলে আলজারি জোসেফকে বোল্ড করে দলকে এনে দেন তিনি দারুণ এক জয়।
শেষের নায়ক হাসান হলেও ম্যাচের নায়ক শেখ মেহেদী। ব্যাট হাতে তার স্লথ গতির ২৪ বলে তার ২৬ রানের অপরাজিত ইনিংসটা ছিল প্রশ্ন জাগানিয়া। পরে বল হাতে তা পুষিয়ে দেন পুরোপুরি। ৪ ওভারের দুর্দান্ত স্পেলে প্রতিপক্ষের টপ ও মিডল অর্ডার ধসিয়ে দিয়ে ১৩ রানে নেন ৪ উইকেট। ৫২ ম্যাচের টি২তে ক্যারিয়ারসেরা।
‘নতুন বলে আমি সবসময়ই বোলিং করি। সাধারণত যেভাবে বল করি, সেই প্রক্রিয়াটায় ছিলাম এবং ওদের ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিল, তবে আমার পরিকল্পনা ছিল যাতে ওদের এই উইকেটে আরামে ও সহজে শট খেলতে না দেই। ওরা তো আসলে অনেক শক্তিশালী। ওভাবেই পরিকল্পনা করে বল করেছি। ওয়ানডেতে বাজে সময় পার করে বিজয়ের দিনে পাওয়া এই জয় সামনের ম্যাচগুলোতে ভালো করতে প্রেরাণা জোগাবে।’ ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে বলছিলেন এ অফস্পিনিং-অলরাউন্ডার।
দুটি করে উইকেট নিয়েছেন হাসান ও তাসকিন। এর আগে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন সৌম্য সরকার (৩২ বলে ৪৩ রান) ও শামিম পাটোয়ারী (১৩ বলে ২৭)।