বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে, ঢাকার পার্শবর্তী টঙ্গী এলাকার একটি বাসা থেকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রোববার (৫ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব এ তথ্য জানিয়েছে।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমরান খান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুর, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও সহিংসতার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আলতাফ হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশ কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়ে পরে মারা যান। ২৯ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৬৪ জন নেতার নাম উল্লেখ করে পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ।
এর আগে, এই হত্যা মামলায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সিনিয়র যুগ্ম সচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।