Skip to content

বিএনপির পিটার হাস বন্দনা ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন

KSRM

গণতন্ত্রের বিপরীত অবস্থানে অবস্থিত “রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, মানুষের দুর্বিষহ যন্ত্রণা ও দুর্যোগ প্রভৃতি উপসর্গ” ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রধান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে এইসব উপসর্গ এদেশের ভাগ্য ললাটে আমেরিকার সার্বিক তত্ত্বাবধানে, খুনি মোশতাকের রাজনৈতিক নেতৃত্বে এবং জিয়াউর রহমানের সামরিক ব্যবস্থাপনায় সম্পাদিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে ছিল আমেরিকার ঘোষিত অবস্থান। সেই আমেরিকার উত্তরসূরী পিটার হাসের লেজ ধরে রাজনৈতিক পথ চলছে বিএনপি।

বিএনপির নেতা শাজাহান ওমরের মুখে তাই পিটার হাসের বন্দনা। পিটার হাসকে অবতার হিসেবে আখ্যায়িত করে অগ্রহণযোগ্য ভাষায় উপদেশ দিচ্ছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি কথা প্রচলিত আছে, “আমেরিকা যার বন্ধু তার শত্রুর প্রয়োজন নেই।” সেই আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কি বাংলাদেশের জন্য ফেরেশতা? ওমরের ভাষায়, অবতার রূপে আবির্ভূত হলেন! ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যেমন এদেশের মানুষ আমেরিকাকে অবতার হিসেবে নয় বরং শত্রু হিসেবে গণ্য করেছে ২০২৩-২৪ এও তার থেকে ব্যতিক্রম হবে কি?

Bkash July

মধ্যপ্রাচ্যে হামাস ইসরাইল যুদ্ধে যখন বেসামরিক সাধারণ মানুষ তাদের জীবন, সম্পত্তি ও স্বাধীনতা হারাচ্ছে সেই সময় বিএনপির নেতারা কোন কথা বলছে না। মুসলিম বিশ্বের সাথে একাত্ম হবার কৌশল থেকে ফায়দা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বদলে ধর্মীয় রাষ্ট্রের তকমা দিয়েছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তাহলে এখন কি বিএনপি ফিলিস্তিনিদের স্বার্থের পিঠে ছুরিকাঘাত করল না?

যেই আমেরিকা হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সমর্থনে যুদ্ধ জাহাজ ও সব ধরনের অস্ত্র পাঠাচ্ছে। সেই আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে বিএনপি কেন এত মাতামাতি করছে? এর একমাত্র কারণ তারা এখন প্রয়োজনে অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখল করতে চায়। যেমন তাদের প্রতিষ্ঠাতা অতীতে করেছে।

Reneta June

নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে বিএনপির সূচনার যাত্রা সম্পন্ন হয়নি। আর বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশে অরাজকতা এসেছে। বিএনপি তার বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সবসময়ই সচেষ্ট থেকেছে। আর প্রতিবারই তাদের সমর্থক হিসেবে আমেরিকা ও পাকিস্তানকে পাশে পেয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি সবসময়ই ভারত বিরোধী শক্তি হিসেবে পরিচিত।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে, মসজিদে উলুধ্বনি হবে এসবই তো বিএনপির বক্তব্য। পিটার হাস তথা আমেরিকাকে যেভাবে বিএনপি আঁকড়ে ধরেছে, তাতে মনে হয়, দলটি তার ভারত বিরোধী ও হিন্দু বিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একটুও সরে আসেনি। তাদের এইসব কার্যকলাপের জবাব আগামী নির্বাচনে বিএনপি পাবে বলে পর্যবেক্ষক মহল বিশ্বাস করেন।

পর্যবেক্ষক মহলের এই বিশ্বাসের কারণ কী?

এই প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির অতীত কর্মকাণ্ডের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত এক সাক্ষাতে জামায়াতের হরতালের অজুহাতে সাক্ষাতে খালেদা জিয়া অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। যা বাংলাদেশের বন্ধু প্রতিবেশী ভারতের প্রতি বিএনপির বিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। এই ব্যাপারে পরবর্তীকালে ক্ষমতায় যাবার প্রয়োজনে খালেদা জিয়া এই ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার বৃথা চেষ্টা করেছিলেন।

এক সাক্ষাতে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘জীবনের প্রতি হুমকি থাকায় ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করতে যাননি’। ভারতের দ্য সানডে গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে সাক্ষাৎটি আমি বাতিল করেছিলাম। কারণ, আমার জীবনের প্রতি হুমকি ছিল। আমার যদি কিছু হয়ে যেত (সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার পথে), তাহলে সে জন্য জামায়াতকে দোষী করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের প্রতিপক্ষের।’

বিএনপি ক্ষমতা থাকার সময় উত্তর পূর্ব ভারতে বিদ্রোহী তৎপরতা চালানোর জন্য জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি সরকার প্রশিক্ষণ শিবির খুলতে দিয়েছিল। বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহের জন্য ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান ধরা পড়েছিল তখন। এর বাইরেও অনেক ভারত বিরোধী তৎপরতায় বিএনপির মদত ছিল। এখনও বিএনপির মধ্যে ভারত বিরোধী শক্তি প্রবলভাবে উপস্থিত আছে। তাই ভারত বিরোধিতা এবং হিন্দু বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে শুধু পিটার হাসকে অবলম্বন করে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে না বলেই পর্যবেক্ষক মহলের বিশ্বাস।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

বার্তা সূত্র