Skip to content

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন ২০২১: ১৫২ খুন, ২১৩০টি প্রতিমা ভাঙচুর; অপহৃতা ১৫১ নারী

শেখ হাসিনা দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা দেওয়ার কথা যতই মুখে বলুক না কেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় যে মোটেও ভালো নেই, তা উঠে এলো বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্টে।

গত এক বছরে অর্থাৎ ২০২১ সালে সারা বাংলাদেশে খুন হয়েছেন ১৫২ জন হিন্দু, ২১৩০টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে এবং ১৫১ জন হিন্দু মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে।

আজ ৩০শে ডিসেম্বর সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির হলে সারা বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বার্ষিক রিপোর্ট পেশ করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতৃত্ব। সেই রিপোর্টে গত এক বছরে ভয়াবহ হিন্দু নির্যাতনের ছবি ফুটে উঠেছে।

বাংলাদেশ: ২০২১ সালে ১৫২ জন খুন, ২১৩০টি প্রতিমা ভাঙচুর ও অপহৃতা ১৫১ জন হিন্দু মেয়ে - Hindu Voice

ছবি: ২০২১ সালে হওয়া হিন্দু নির্যাতনের পরিসংখ্যান( সৌজন্য: জাতীয় হিন্দু মহাজোট)

হিন্দু নির্যাতন বেড়েছে ব্যাপকহারে

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে গত ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে হিন্দু নির্যাতন বেড়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে হিন্দু নির্যাতন বেড়েছে ব্যাপকভাবে। আবার ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে হিন্দু নির্যাতন বেড়েছে ব্যাপকভাবে।

২০১৮ সালে হত্যা হয়েছিল ৯৬ জন, ২০১৯ সালে ১০৮ জন, ২০২০ সালে হত্যা হয়েছে ১৪৯ জন, ২০২১ সালে ১৫২ জন। ২০১৮ সালে বসতবাড়ী (দক উজম হয়েছিল ১১৭টি ব্যবসা, ২০১৯ সালে ৪৩৪টি , ২০২০ সালে ১১২৫টি পরিবার, ২০২১ সালে ১৯৮০৯৯ পরিবার। ২০১৮ সালে দেশ ত্যাগে হুমকি ছিল ১১৩ টি, ২০১৯ সালে ৬৪১টি পরিবার, ২০১০ সালে ৮৯৩টি ২০১১ সালে ১৩.৪৪৮ টি পরিবার।

২০১৮ সালে দেশত্যাগেবাধ্য করা হয়েছিলাে ২৫টি পরিবারকে, ২০১৯ সালে ৩৭৯টি পরিবারকে, ১০২০ সালে ১১৯টি, ২০১১ সালে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৯১৬১টি পরিবারকে। ২০১৮ সালে নিরাপত্তাহীনতায় ছিল ১৫১০ পরিবার, ১০১৯ সালে ১৯৬১ পরিবার, ২০১০ সালে ৬৬১৩টি পরিবার, ২০১১ সালে ১,১৩,৭১১ টি পরিবার।

 

২০১৮ সালে মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযােগের ঘটনা ঘটেছিল ১৩১টি, ২০১৯ সালে ১৫৩টি, ২০২০ সালে ১৪৩টি, ২০২১ সালে ৩২৫৬টি, ২০২০ সালে মিথ্যা মামলায় আসামী, চাকুরিচ্যুতি, গ্রেফতার ১৭৭, ২০১১ সালে ৪২৫ জন। সর্ব ক্ষেত্রেই নির্যাতনের পরিমান বেড়েছে।

ভয়াবহ হিন্দু নির্যাতনের খতিয়ান

ঘরবাড়ী দখলের ঘটনা ঘটেছে ২২২টি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ১৫৩টি, মন্দিরের ভূমি দখল ৭৬টি, বসত বাড়ী থেকে উচ্ছেদ ৯৮০৯ টি পরিবার, যার বেশীরভাগ আদিবাসী ম্রো ও চাক সম্প্রদায়ের। উচ্ছেদের চেষ্টা ৪১৭৯১ টি পরিবার, উচ্ছেদের হুমকী ৮৯৪৩ পরিবার। দেশত্যাগের বাধ্যকরণ ৯২৬১টি পরিবার। দেশত্যাগে হুমকীর শিকার ১৩,৪৪৮ট পরিবার, নিরাপত্তাহীনতায় ১,২৩,৭২২ টি পরিবার। সংঘবদ্ধ হামলা ১৯০২টি।

মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নি সংযােগ ৪৭২টি, প্রতিমা ভাংচুর ২১৩০টি, শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর আশ্রমের বধূয়া সাজ নামের দোকানের ১২৩২ দেবদেবীর প্রতিমা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। প্রতিমা চুরি ৩২২টি, বাড়ীতে হামলা ভাংচুর অগ্নি সংযােগের ঘটনা ঘটেছে ২০৫৩টি। অপহরণ করা হয়েছে ১৫১ জনকে, অপহরনের চেষ্টা ০৯ জনকে।

সংখ্যালঘু হিন্দু নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান

২৯ জনকে ধর্ষন করা হয়েছে, গণধর্ষনের শিকার ১৪ জন। ধর্ষনের পর হত্যা ৬ জন। ৪৬ জনকে ধর্ষনের চেষ্টা হয়েছে, ৪১১ জনের অধিক নারী যৌন ও শারিরীক লাঞ্চনার শীকার। ৬০৯ জনকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। ধর্মান্তরের চেষ্টা ৭৩ জনকে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এর ঘটনা ঘটেছে ২৭৮ টি। মিথ্যা মামলায় আসামী, গ্রেফতার, বরখাস্ত, জেল জরিমানার শিকার ৪২৫ জন, ১,১৩০ টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অপবিত্রকরণ ৩০৮টি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে বাধা ৪২০টি। ধর্মীয় নিষিদ্ধ গরুর মাংস খাইয়ে অপবিত্রকরন ৩২জনকে।

২০২১ সালে ১৯১৪টি আলাদা ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠান মন্দির ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে; যার সংখ্যা কমপক্ষে ১,৩৫,৯৪৮টি এবং ৬২৪৯ একর ২১ শতাংশ ভূমি হতে বেদখল করা হয়েছে। যার মধ্যে, ম্রো, ত্রিপুরা সাঁতাল ও তঞ্চঙ্গা আদিবাসীদের ২৮৮২.৩০ একর এবং এবং হিন্দুদের ৩২৯৭.৫১ শতাংশ জমি দখল হয়েছে। মােট ক্ষতির পরিমান ১,১৪৫ কোটি ৯৭ লক্ষ ৯,৫৯৯ টাকা।

সূত্র: হিন্দু ভয়েস