Monday, January 13, 2025

সপ্তাহে শীর্ষে

প্রাসঙ্গিক বার্তা

বাংলাদেশি সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের দাবি জানালো জাতিসংঘ

বেনার নিউজ

ইসরায়েল থেকে মোবাইল ফোন নজরদারি সরঞ্জাম কেনাসহ ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতিতে বাংলাদেশি সেনাপ্রধানের সম্পৃক্ততা বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্যচিত্রের অভিযোগগুলো বৃহস্পতিবার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

সোমবার প্রচারিত আল জাজিরার এক ঘণ্টার তথ্যচিত্রমূলক প্রতিবেদন ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’কে ‘মিথ্যা’ ‘অবমাননাকর’ এবং বাংলাদেশ বিরোধী “অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার।

তবে তথ্যচিত্রটিতে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও তাঁর ভাইদের সম্পর্কে উত্থাপন করা অভিযোগগুলো সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো মন্তব্য করা হয়নি। অভিযোগগুলো তদন্ত করা হবে কি না সে বিষয়েও কোনো ঘোষণা আসেনি সরকারের পক্ষ থেকে। 

বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংএ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আল জাজিরার তোলা দুর্নীতির অভিযোগগুলো সম্পর্কে জাতিসংঘের মতামত জানতে চান সাংবাদিকরা।

এর জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, “বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে করা দুর্নীতির অভিযোগ, এবং এ সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি সম্পর্কে আমরা অবগত।”

“দুর্নীতির অভিযোগগুলো গুরুতর, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এগুলো তদন্ত করা,” জানিয়ে তিনি বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশি পেশাদাররা হলেন সর্ববৃহৎ ইউনিফর্মধারী বাহিনী।” 

মোবাইল নজরদারির সরঞ্জামগুলো জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে ব্যবহারের জন্য কেনা হয়েছে বলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দাবি নাকচ করে দেন স্টিফেন।

তিনি বলেন, “এই ধরনের পেশাদার বাহিনীর নিয়োগ জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট চাহিদাপত্র অনুযায়ী হয়ে থাকে, যা বাংলাদেশের সাথে চুক্তি অনুযায়ী শান্তিরক্ষার যেসব অভিযানে তাঁরা অংশগ্রহণ করেন, প্রতিটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।” 

“আল জাজিরার তথ্যচিত্রে যেসব সরঞ্জামের কথা বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাথে চুক্তিপত্রে (বাংলাদেশের সাথে) সেরকম কোনো ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের কথা বলা হয়নি,” বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।

“এবং বাংলাদেশি কোনো শান্তিরক্ষা বাহিনীকে সে ধরনের যন্ত্রপাতি সরবরাহও করা হয়নি,” যোগ করেন তিনি।

তবে স্টিফেন ডুজারিক তাঁর মন্তব্যে বাংলাদেশি “শীর্ষস্থানীয়” কোনো কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেননি। 

জাতিসংঘের এই মন্তব্যটি এমন এক সময় এলো যখন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ গত শুক্রবার থেকে সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছেন।

এই সফরে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রধানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক ছাড়াও জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শান্তিরক্ষা মিশনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

“জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে,” সেনাপ্রধানের এ সফর “গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা” পালন করবে বলে জানায় আইএসপিআর।

আইএসপিআর জানায়, সফর শেষে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান দেশে ফিরবেন। 

ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ প্রচারিত আল জাজিরার তথ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের এক ভাই হারিস আহমেদ পরিচয় বদলে হাঙ্গেরিতে ‘মোহাম্মদ হাসান’ নামে বসবাস করছেন।

অন্য ভাই আনিস আহমেদ রয়েছেন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। তাঁরা দুজনই ১৯৯৬ সালে মোহাম্মদপুরে আলোচিত মোস্তফা হত্যাকাণ্ডের দায়ে দণ্ডিত এবং পলাতক। তাঁদের একজন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ।

গোপনে সংগ্রহ করা বিভিন্ন নথিপত্র দেখিয়ে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, সেনাপ্রধান তাঁর ভাই হারিস আহমেদের জন্য ভুয়া পাসপোর্ট ও অন্যান্য ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করতে সেনা কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেছেন।

আল জাজিরা জানায়, হারিস আহমেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণদের সাথে ঘনিষ্ঠ হবার সুবাদে অবৈধভাবে অনেক অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।

এছাড়া ইসরাইলের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য নিষিদ্ধ হলেও সামরিক বাহিনীর জন্য ইসরাইলে নির্মিত সেলফোন নজরদারির প্রযুক্তি কিনতে সেনাপ্রধান তাঁর ভাই হারিসকে গোপনে সাহায্য করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয় ওই তথ্যচিত্রে।

তথ্যচিত্রে বলা হয়, ওই সব যন্ত্রপাতি দিয়ে এক সাথে কয়েক শ মোবাইল ফোন নজরদারি করা সম্ভব। হারিস আহমেদ এই সরবরাহ প্রক্রিয়ায় মূল ব্যক্তি ছিলেন।

ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বলেও জানায় আল জাজিরা। 

তবে আল জাজিরার প্রতিবেদনটিকে ‘মিথ্যা’ ‘অবমাননাকর’ এবং বাংলাদেশ বিরোধী “অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে সোমবার প্রত্যাখ্যান করেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

পাশাপাশি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায় “প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য হাঙ্গেরির একটি কোম্পানি থেকে ক্রয়কৃত সিগন্যাল সরঞ্জামাদিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ইসরায়েল থেকে আমদানিকৃত মোবাইল মনিটরিং প্রযুক্তি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।”

“ক্রয়কৃত সরঞ্জাম কিংবা এ সংক্রান্ত কোনো নথিপত্রেই এগুলো ইসরায়েলের তৈরি বলে উল্লেখ নেই,” জানায় আইএসপিআর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

পাঠক প্রিয়