Monday, January 13, 2025

সপ্তাহে শীর্ষে

প্রাসঙ্গিক বার্তা

বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন জননেতা ও সংগ্রামী মানুষ : আর্চার ব্লাড

** কানাই চক্রবর্ত্তী **

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথমত একজন জননেতা এবং একজন সংগ্রামী মানুষ। আজীবন সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ এবং একজন সম্মোহনী বক্তা হিসাবে তিনি বৃষ্টিস্নাত শত সহস্র জনতাকে আগুনের উত্তাপে আলোড়িত করতে পারেন।

পাকিস্তানে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমেরিকার মূল্যায়ন ছিল এরকমই। তাদের বর্ণনায় শেখ মুজিব ছিলেন এক সম্মোহনী বক্তা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতাকে কৃতিত্বের সঙ্গে কাজে লাগাতে পারেন। বাঙালিদের মধ্যে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বা এমন বৈশিষ্টমন্ডিত কেউ নেই, যে তাকে ছাড়িয়ে যাবে।

আমেরিকান সাংবাদিক লেখক বি জেড খসরু‘র ইংরেজিতে লেখা ‘বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু, সিআইএ লিঙ্ক’ গ্রন্থে  বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকে  আর্চার ব্লাডের এই মূল্যায়নের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। বাংলাদেশে দি ইউনিভার্সেল একাডেমি প্রকাশিত গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন সিরাজ উদ্দিন সাথী।

আমেরিকান কূটনীতিকদের চোখে শেখ মুজিব তখন পাকিস্তানের ভবিষ্যত নেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন।  নির্বাচনের তিনদিন পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ আমেরিকান কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড ওয়াশিংটনে বার্তা পাঠিয়ে শেখ মুজিব সর্ম্পকে তাদের মূল্যায়নে আরো লিখেন, ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান এক দলীয় রাজ্যে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই অবাক করা বিজয় দলের বিজয়ের চেয়েও একক ব্যক্তির ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির বিজয়। সকল প্রভাবশালী দলের কাছে অবিতর্কিত নেতা হচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান। যদিও এমন বিজয়ের খবরে খুব একটা অবাক হননি মুজিব। আমেরিকান কূটনীতিকদের ছয় মাস আগেই কথা প্রসঙ্গে এমন বিজয়ের সম্ভবনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

আর্চার ব্লাড এখানেই থেমে থাকেননি। শেখ মুজিবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট, গুণাবলী ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি লিখেন  ‘মুজিব আজীবন সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ। আমরা যতদুর জানি তিনি আইনের ডিগ্রি না নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। কখনো কোন চাকরি বা ব্যবসায় নিয়োজিত হননি। তার দৃষ্টিগ্রাহ্য আয়ের উৎস হচ্ছে গ্রেট ইস্ট্রার্ণ লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানির উপদেষ্টা হিসাবে প্রাপ্ত অর্থ।’ একান্ত বৈঠক ও সাক্ষাতে তিনি (মুজিব) চমৎকার, শান্ত এবং আত্মপ্রত্যয়ী উল্লেখ করে আর্চার বলেন, ভুট্টোর মত বিশ্বজনীন আভিজাত্য তার নেই। তবে, তিনি বহুদেশ ভ্রমন করেছেন এবং নাগরিক জীবনের মানুষ। আর্চার লিখেন, মঞ্চে তিনি অনলবর্ষী বক্তা।  বৃষ্টিস্নাত শত সহস্র জনতাকে তিনি আগুনের উত্তাপে আলোড়িত করতে পারেন। দলনেতা হিসাবে তিনি কঠোর ও কর্তৃত্ববাদী, প্রায়শই বেপরোয়া। মুজিবের মধ্যে আছে মসীহর মতো জটিল দিক। জনতোষণ ও মনোরঞ্জনের জন্য চরম কর্মসূচির অভিজ্ঞতায় তা আরো জোরদার হয়েছে ক্রমশ।

বঙ্গবন্ধুর কথা বলার ধরন নিয়েও আর্চার কথা বলেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিব কথা বলেন, ‘আমার লোক, আমার জমি, আমার বন, আমার নদী উচ্চারণে। এতে স্পষ্ট মনে হয়, তিনি নিজেকে পরিচয় দেন বাঙালির আশা ভরসার ব্যক্তি হিসাবে। মুজিব যখন বাঙালির দুঃখবেদনার কথা বলেন তখন তিনি আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন। তাকে নিয়মানুগ চিন্তাবিদ বলে মনে হয় না, বরং তাকে নিয়ম ভাঙ্গার মেজাজের অধিকারী বলেই বেশি মনে হয়। তবে, বঙ্গবন্ধুকে প্রথমত একজন জননেতা, সংগ্রামী মানুষ হিসাবে অভিহিত করেন আর্চার।
অন্যদিকে নিন্দুকেরা বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকে কি ধারণা করে তাও তুলে ধরেন আর্চার। তিনি লেখেন নিন্দুকদের মতে, শেখ মুজিবের বুদ্ধিবৃত্তিক গভীরতা কম এবং ক্ষমতা লোভী। এর জবাবে অবশ্য আর্চার বলেন, যদিও তিনি বুদ্ধিজীবী নন,  তবুও একান্ত বৈঠকে মুজিব উল্লেখযোগ্য মানসিক চৌকষতা প্রদর্শন করে থাকেন এবং তাঁর রসবোধও যথেষ্ট।

তবে, ১৯৭৩ সালে আমেরিকান মিশন বঙ্গবন্ধুর মূল্যায়নে আগের অবস্থান থেকে একটু সরে আসে বলে মনে করা যেতে পারে। মিশনের মতে, শেখ মুজিব রাজনৈতিক জীবনে বৈদেশিক নীতি বা বিষয়াবলি নিয়ে খুব একটা মনযোগ দেননি।
ধারণা করা যায়, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু জোট নিরপেক্ষতায় নিজেকে জড়িয়ে নেয়া এবং জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার কারণে

আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গিজনিত ধারণায় এই মূল্যায়ন আসে। তবে, মিশন এটাও বলেছে  আমেরিকানদের কাছে তিনি পাকিস্তানের সময় থেকেই উদারবাদী নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। একমাত্র ব্যতিক্রম হিসাবে তারা দেখেছেন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে চরম অবস্থান নেয়া।

যদিও বঙ্গবন্ধু একটা সময়ে স্বায়ত্তশাসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। চুড়ান্ত পর্যায়ে তিনি স্বাধীনতা চেয়েছেন এবং ন্বাধীনতার ঘোষণাও দেন।  বঙ্গবন্ধুর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি নয়মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে  যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে।  সূত্র : বাসস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

পাঠক প্রিয়