ফরিদপুরে বর্ষা মৌসুমে দেখা মিলছে কদম ফুল। হলুদ-সাদার সংমিশ্রণে পেলব আকৃতির এই ফুল এখন শোভা পাচ্ছে চিরিরবন্দরের গাছে গাছে।
সারা বছর এর দেখা না মিললেও বর্ষায় যেন অনিবার্য এই কদম ফুল। বহু বিখ্যাত কবিতা ও গান রয়েছে বর্ষাকাল আর কদম ফুল নিয়ে। প্রিয় ঋতু বর্ষার আগমনে তাই কদম ফুল যেন অনিবার্য অনুষঙ্গ।
সারাদেশে শহর থেকে শুরু করে গ্রামে-গঞ্জে বিশালকার কদম গাছে ফুটেছে শত শত গোলাকৃতির কদম ফুল। সবুজ পাতার মাঝে সাদা হলুদ ফুল পথচারীদের নজর কাড়ে। কেউ কেউ কচি ফুল সংগ্রহ করে প্রিয়জনকে উপহারও দেন। বেশ কয়েকদিন গাছে ফুটে থাকার পর মলিন হয়ে পড়ে এই ফুল।
ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় কদম ফুল ফুটতে দেখা গেছে বর্ষা মৌসুমে ।
বর্ষা এলেই কদম গাছের শাখায় শাখায় পাতার আড়ালে ফুটে থাকা অজস্র কদম ফুলের সুগন্ধ লোকালয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আর তাই তো কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত। দেখতে মনে হয়, প্রকৃতি যেন আজ কানের দুলে সেজেছে কদম ফুল দিয়ে। এই ফুল পথচারীদের একবার হলেও নজর কাড়ে।
বৃষ্টি স্নানে কদম ফিরে পায় তার চিরচেনা রূপ। গাছ গাছে এ ফুলের সমাহার ঘটে। হাজারও গান ও কবিতা দখল করে আছে এ ফুল। কদমের এ রূপের কারণের একে যুগে যুগে কবিরা তাদের কবিতা ও গানের মাঝে অলঙ্কার হিসেবে সাজিয়েছেন। তাই তো পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের সেই বিখ্যাত গানের কথা মনে পড়ে—প্রাণ সখীরে/ ঐ শোন কদম্ব তলে বংশী বাজায় কে/ বংশী বাজায় কে রে সখী, বংশী বাজায় কে/ আমার মাথার বেণী বদল দেবো, তারে আইনা দে।
বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/ আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান/ মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে/ এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান/—রবি ঠাকুরের এ গান কে না জানে।
কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। ভাগবত গীতাতেও রয়েছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি।
বর্ষা নিয়ে কবি, সাহিত্যিক ও গায়কদের উৎসাহের কমতি নেই। আর এ রূপসী বাংলা ছাড়া বিশ্বের কোথাও বর্ষার এ স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক রূপ চোখে পড়ে না।
বর্ষা মৌসুমে সারাদেশে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জে সবুজ পাতার মাঝে সাদা-হলুদ গোলাকৃতির কদম ফুল ফুটতে থাকে। এই ফুল ’নীপ’নামেও পরিচিত। এ ছাড়াও কদম ফুলের আরও কয়েকটি সুন্দর নাম রয়েছে। যেমন: বৃত্তপুষ্প, সুরভি, মেঘাগমপ্রিয়, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, কর্ণপূরক, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সিন্ধুপুষ্প ইত্যাদি।
ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কালিপদ চক্রবর্ত্তী বলেন বলেন , বাংলার হাজার ফুলের মধ্যে কদমের সৌন্দর্য অন্যতম। আপাত দৃষ্টিতে আমরা গোল আকৃতির যে একেকটি কদম ফুল দেখি সেটি আসলে অজস্র ফুলের সমারোহ। কদম মূলত বর্ষার ফুল হলেও ফোঁটা শুরু করে জৈষ্ঠ্যের শুরু থেকেই। তবে আষাঢ় মাসেই এ ফুলের সমারোহ বেশি হয়। কদমফুল ছাড়া বাংলাদেশে বর্ষাকাল যেন অসমাপ্ত।
একুশে সংবাদ/স ক