Skip to content

প্রসঙ্গঃ ওয়ান ইলেভেনের সরকার

প্রসঙ্গঃ ওয়ান ইলেভেনের সরকার

“রাজনীতি ও সরকার পরিচালনায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কোনো দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনেনা”, বলেছেন বাংলাদেশের প্রধান দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে, ওয়ান-ইলেভেনের সরকারকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন এই প্রশ্নের জবাবে ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি একথা বলেন।

“২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে ৫৮৪ টি। এর মধ্যে ১১৫ টি মামলা ২২৯ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আসামী করে করা হয়েছে। আবার আমরা যদি এ বছরের তিন মাস দেখি, তিন মাসে ইতোমধ্যে ১৩টি মামলা করা হয়ে গেছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে”, বলেছেন সম্পাদক মতিউর রহমান। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’র প্রাক্কালে, ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি এক সাক্ষাৎকার দেন।

সাক্ষাৎকারে মতিউর রহমান আরও বলেন, “এই অবস্থার মধ্যে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের অবশ্যই অনেক ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়, এবং এই কারণে তাদেরকে সেল্ফ সেন্সরশিপের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে এবং গ্রেফতারের আগে ভয় পেয়ে, গ্রেফতারের পরে যে অবস্থার মধ্যে তারা পতিত হন, জেলের মধ্যে থাকেন, তাতে তো তাদের মধ্যে ভয় বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।”

‘অধিকারের ভবিষ্যৎ বিন্যাস: সবধরণের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নিয়ামক হিসেবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ এই থিম কে সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো ৩মে পালিত হয়েছে ২০২৩ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে। এ দিনটিকে সামনে রেখে বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতটার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলো’র মতিউর রহমানের এই সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ থেকে ওয়ার্ল্ড প্রেস ইনডেক্স এ বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো উন্নতি হয়নি। তাদের প্রকাশিত ২০২৩-এর তথ্য অনুযায়ী ওয়ার্ল্ড প্রেস ইনডেক্স-এ ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৩।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সালে চালু হবার পর থেকে এর অপপ্রয়োগ বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণ ভাবে ক্ষুন্ন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিস এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-এর আগস্ট থেকে ২০২২-এর আগস্ট এর মধ্যে ৪ বছরে ১১১৯টি মামলা দেয়া হয়েছে ২৮৮৯জনের বিরুদ্ধে, এদের মধ্যে ৩০১জন রাজনৈতিক কর্মী ও ২৮০ জন সাংবাদিক রয়েছেন। অধিকার কর্মীদের মতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশ একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।

সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলাগুলোসহ প্রথম আলোর বিরুদ্ধে ৫২টি মামলা চলছে। সম্পাদক মতিউর রহমানের নাম উল্লেখ আছে এমন মামলার সংখ্যাই ১৬টি।

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও ভিন্নমত দমনের নানা আইনি ও বেআইনি অপচেষ্টা নিয়ে মতিউর রহমান খোলামেলা কথা বলেছেন এ সাক্ষাৎকারে। ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগকে দেয়া এই টেলিফোন সাক্ষাৎকারে মতিউর রহমান আরও বলেন, “আবার গত পাঁচ বছরের হিসাব যদি আমরা নেই আমরা দেখতে পাই, এই মামলাগুলিতে ৮৫জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে সব মামলা পর্যবেক্ষণ করে আমরা দেখেছি, সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে রাজনৈতিক খাতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। তারপরেই সংখ্যার দিক থেকে সাংবাদিকরা এগিয়ে আছেন। অর্থাৎ, সাংবাদিকরা এবং সংবাদপত্র ডিজিটালসিকিউরিটি আইনে আক্রমণের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান দ্বিতীয়।”

প্রথম আলো সম্পাদক এই আইনের অপ্রয়োগসহ সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনে মামলা দেয়া, সাংবাদিক, ভিন্ন মতালম্বীদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা, আইন বহিৰ্ভূত আটক, নির্যাতন এসব নিয়ে নানা প্রশ্নেরও জবাব দেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিরোধীদলগুলোর চলমান আন্দোলন নিয়েও মতিউর রহমান তার মতামত দেন।

ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নেন শতরূপা বড়ুয়া।

সূত্র: ভয়েজ অব আমেরিকা