২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের দেওয়া নির্বাচনী সব প্রতিশ্রুতি ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। অন্যথায় ঢাকায় ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৪৮ ঘণ্টার কেন্দ্রীয় গণঅনশন ও গণসমাবেশ কর্মসূচি পালিত হবে। এ ছাড়া আগামী ৬ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চাসহ মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভায় আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক মহলবিশেষ আবারও এ দেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর অব্যাহত হামলাকে অধিকতর জোরদার করতে পারে এবং এ ধরনের পরিস্থিতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন করতে পারে। তাই দেশ ও বিদেশের মানবতাবাদী দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও জনগণের সবাইকে সজাগ, সতর্ক ও সচেতন থাকার উদাত্ত আহ্বান জানান কেন্দ্রীয় নেতারা।
সভায় সংগঠনের তিন সভাপতি সাবেক এমপি ঊষাতন তালুকদার, ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও পর্যায়ক্রমে সভাপতিত্ব করেন। ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সবপর্যায়ের কর্মকর্তা, অঙ্গসংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ৭৪টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আন্দোলনের যে রূপরেখা ঘোষণা হবে, তা আন্তরিকভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
সভায় গৃহীত প্রস্তাবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া দাবি পূরণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক ও মিশনপ্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে সংগঠনের বিদেশি শাখাগুলো ৭ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি নিজ নিজ রাষ্ট্রের মিশন প্রধানদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভার আরেক প্রস্তাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নির্বাচনের সব পর্যায়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালীন, নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ও সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা, নির্বাচনী প্রচারণায় সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষ না ছড়ানো এবং সবার ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি পেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে একদিকে আলোচনা ও অন্যদিকে রাজপথের আন্দোলনকে তীব্রতর করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় সমমনা সব ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংগঠনগুলোকে সমন্বয় করে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৮ সেপ্টেম্বর, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে ১৫ সেপ্টেম্বর, সিলেট বিভাগে ১৬ সেপ্টেম্বর, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে ২২ সেপ্টেম্বর, ঢাকা বিভাগের সব জেলা-উপজেলায় ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন এবং বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত গণসমাবেশ করা হবে।
সভায় আলোচনায় অংশ নেন মতিলাল রায়, অতুল চন্দ্র মণ্ডল, প্রদীপ কুমার দাস, সুবীর চক্রবর্তী, রঞ্জন কুমার সাহা, প্রদীপ কুমার দাস, লিটন চন্দ্র পাল, বিমল চন্দ্র বাড়ৈ, সুদীপ্ত ঘোষ রানা, দুলাল বিশ্বাস, অধ্যাপক আশুতোষ রায়, অধ্যাপক প্রণব কুমার সরকার, বিশ্বজিৎ পালিত, অ্যাডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু, দীপেন কুমার ঘোষ, শুকদেব নাথ তপন, দিলীপ কুমার নাগ, রণজিৎ রায় চৌধুরী, শংকর মজুমদার, চন্দন কুমার রায়, অ্যাডভোকেট পাপ্পু সাহা, গোপাল চন্দ্র সাহা, বিশ্বজিৎ সাধু ও সন্তোষ কুমার দত্ত প্রমুখ।