দক্ষিণবঙ্গ: বনসৃজন থেকে কুটিরশিল্প, বিশেষ করে আদিবাসীদের স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে রাজ্যের বনবিভাগের বিশেষ উদ্যোগ। বিশেষ করে মহিলাদেরও স্বাবলম্বী করতে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে আলোর দিশা। একদিকে বনজ সম্পদ বৃদ্ধি, অন্যদিকে সেই সম্পদকে ব্যবহার করে নিজেকে স্বাবলম্বী করা। বাংলা ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই ১৯৫৬ সালে বিহার জেলার মানভূম মহকুমা অন্তর্ভুক্ত হয়ে তৈরি হয় এই পুরুলিয়া জেলা। উল্লেখ্য, এই জেলা পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে কম জনঘনত্ব একটি জেলা। তবে এখানে আদিবাসীদের আধিক্যই সবচেয়ে বেশি। তাদের মধ্যে রয়েছেন কুড়মি, সাঁওতাল, ওঁরাং, ভূমিজ, বাউড়ি ছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ। জনসংখ্যার হিসেবে তা প্রায় ৪ লক্ষ ৭২ হাজার।
এখানেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে রাজ্যের বনদফতর। প্রায় বৃক্ষহীন ময়ূর পাহাড়কে গাঢ় সবুজে মুড়ে দিয়েছেন পাহাড়ের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। রাজ্যের সবুজশ্রী প্রকল্পে শুধুমাত্র (২০২২-২০২৩) নিজস্ব উদ্যোগে যে ১,৫০,৩৩১টি চারাগাছ তৈরি করা হয়েছিল তার মধ্যে বিলি হয়েছে ১,৪৯,৩৬২টি। এর মধ্যে যে ব্লকগুলির সাফল্য তুলে ধরা যেতে পারে তার মধ্যে রয়েছে আরশা (৮১১), বাঘমুণ্ডি (১০৩২), বলরামপুর (১৬৪২), বান্দোয়ান (৮১৪), ঝালদা-১ (১৩৬১), ঝালদা-২ (২৬০০), মানবাজার (১১৬৩), মানবাজার-২ (৭৯৩), পারা (১০০০), পুরুলিয়া-১ (৭৯০), পুরুলিয়া-২ (৮০০),রঘুনাথপুর-১ (৪২৫২), রঘুনাথপুর-২ (৩৭৭)প্রভৃতি।
পরিসংখ্যান বলছে, পুরুলিয়া জেলায় ২০২১ সালে ১২২০ হেক্টর জমি বেছে নেওয়া হয়েছিল যেখানে বৃক্ষরোপণের সংখ্যা ছিল ১৯ লক্ষাধিক। আবার গত বছর (২০২২) সেই সংখ্যা ছিল ৭১৩ হেক্টর জমিতে প্রায় ১২ লক্ষ চারাগাছ। সিমুলিয়া, কাঁসাই নদী, মিশিরডি, কুলটার, লছমনপুর, সিরকাবাদ, কলাবনী, ছাতানি, মাঝিডি, গড়ধাম, মাঠা সহ বিস্তীর্ণ এলাকাগুলিতে এখন শুধুই সবুজের প্রাধান্য। বনদফতরের আশা, তাদের নিজস্ব নার্সারিগুলিতে যে কয়েক লক্ষাধিক চারা বেড়ে উঠছে তা এ বছরের বর্ষার শুরুতেই রোপণ করা হবে পুরো জেলা জুড়েই। ইতিমধ্যেই সেই সব পতিত জমি আরও উর্বর করা হয়েছে বলে দাবি বন দফতরের।
বন দফতর জানাচ্ছে, পুরুলিয়া বনবিভাগের দক্ষিণ থেকে পশ্চিম চক্র জুড়ে যে শিয়ালি পাতা নির্ভর পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছিল, তা এখন চূড়ান্ত সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। আদিবাসী গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে তো বটেই, তা আরও স্বাবলম্বী হবার লক্ষ্যে আদিবাসী মহিলাদের এই ক্ষুদ্রশিল্পের প্রতি আরও আগ্রহের পরিবেশ গড়ে তুলেছে। সহজ অথচ রোজগারের বড় উপায় এখন তাদের নিজেদেরই হাতে। অনেকেই এখন এই প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘শিয়ালি পাতার বিপ্লব’। যেমন, জঙ্গল থেকে পাতা সংগ্রহ, দলবদ্ধভাবে তা নিয়ে বাড়ি ফেরা, পাতা বাছাই এবং বাঁধা, পাতা সেলাই, পাতা সেলাইয়ের পরে তা রোদে শুকোনো, সেই পাতা ওয়ার্কশপে পৌঁছে দেওয়া, সেখানে যন্ত্রের সাহায্যে থালায় রূপান্তর। বনদফতরের এই উদ্যোগে খুশি জেলার আদিবাসী মহিলারা। এই কাজে তাঁরা এখন যথেষ্ট স্বাবলম্বী।
এছাড়াও, আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষদের কথা ভেবে বন দফতর প্রায় ৩০ বিঘা জমি জুড়ে ভেষজ ও সুগন্ধি গাছের চাষ শুরু করেছেন। যা আপাতত সীমাবদ্ধ রয়েছে তেলিয়াভাসা, হেসাদি, কুসুমটিক্রি, চিরুবোরাতে। কর্তৃপক্ষের আশা, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই এই চাষাবাদের এলাকা আরও সম্প্রসারিত হবে। অন্যদিকে, মাশরুম চাষ এবং তার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার এক অসাধারণ উদ্যোগ নিয়ে সাফল্যের আশায় আছেন বনদফতরের কর্তারা।
শুরুতেই ঝিনুক মাশরুম নামের মাশরুম চাষে জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ এই মাশরুমের শুধু দেশে নয়, বিদেশের বাজারেও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এই চাষে পুরোপুরি সাফল্য এলে পুরুলিয়ার আদিবাসী শ্রমজীবীদের ব্যাপক অর্থনৈতিক সাফল্যের মুখ দেখবে নিঃসন্দেহে। আশা করা যায়, এই চাষ থেকেই এক একজন শ্রমজীবী অন্তত ৮ হাজার টাকারও বেশি উপার্জন করতে পারবেন প্রতি মাসে। উল্লেখ্য, আর্থিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী না হওয়াতেই এক সময় তাঁরা বনাঞ্চলের গভীরে প্রবেশ করতেন। যার ফলে হাতির উপদ্রব বেড়ে যেত। পরিসংখ্যান বলছেন, সেই প্রবণতা দ্রুত কমছে।
এ নিয়ে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অত্যন্ত আশাবাদী। বললেন, ‘‘আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পুরুলিয়ার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আর্থিক সঙ্গতি আরও আশাব্যঞ্জক স্থানে পৌঁছে যাবে। সেই লক্ষ্যেই দ্রুত এগিয়ে চলেছে পুরুলিয়া জেলা।’’
Published by:Satabdi Adhikary
First published:
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Purulia