Skip to content

পুঁজি ও মেধার পাচার

পুঁজি ও মেধার পাচার

কোনো দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থপাচারে কী হয়? অর্থই বা আসলে কী? অর্থ হচ্ছে পণ্য বা সেবা বিনিময়ের মাধ্যম। সুতরাং অর্থ পাচার হচ্ছে মানে একটি দেশের এক বা একাধিক প্রজন্মের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা পাচার হচ্ছে। অর্থপাচার হলে দেশ রসাতলে যায় না, তবে টেকসই উন্নতির দিকে না গিয়ে দেশ ও সমাজ বেশ কিছু সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়ে, কারণ যে অর্থ বিনিয়োগ হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারত, সেটা হয় না। ‘ধন গোময়ের মতো, ছড়িয়ে দিলে সার হয়ে ফসল ফলায়। এক জায়গায় জমা হয়ে থাকলে গন্ধ ছড়ায়।’ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান না হওয়ার কারণে আরও অনেক দিন দেশের লোকজন বিদেশে গিয়ে দাসত্ব করতে হয়। দাসত্ব করে পেটেভাতে টিকে থাকা যায়, দাসত্ব দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়, কারণ দাসমাত্রকেই ঠকানো হয়। যে কোনো দাস-জাতির একাধিক প্রজন্মের সময় ও পরিশ্রম নষ্ট হয়। মাসে শ দেড়েক ডলার বেতন দিয়ে, একটি কক্ষে অনেক শ্রমিককে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করে, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের মূলত ঠকানো হচ্ছে।

‘ছোট বালুকার কণা বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল।’ লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের সেই দেড়শ ডলারের কিছু অংশ দেশে এসে পুঁজি গঠিত হয়। কিন্তু নবগঠিত পুঁজি মনে করে, স্বদেশে তার না আছে কদর, না আছে নিরাপত্তা। সুতরাং সঙ্গত কারণেই সে ভাবে: ‘হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনো খানে!’ তবে টাকা পাচার যে খুব নিরাপদ তা কিন্তু নয়। টাকা যেখানে পাচার হচ্ছে, সেখানকার অর্থনীতিতেও পাচার করা টাকা সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন ধরুন, কানাডার বাড়ির বাজার অস্থির করে রেখেছে তৃতীয় বিশ্বের টাকা পাচারকারী ক্রেতারা। যে কোনো পরিমাণ টাকা দিয়ে তারা বাড়ি কিনতে রাজি। ফলে বাড়ির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

ভুলক্রমে বা স্বেচ্ছায় পৃথিবীর যে কোনো দেশের সরকার এমন দুই ক্ষেত্রে ক্রমাগত ভুল করে চলে যে দুই ক্ষেত্রে তার ভুল করার কথা নয়।  ক্ষেত্র দুটি হচ্ছে: ১. রাজনীতি আর ২. অর্থনীতি। কানাডা সরকার নিয়ম করেছে, বিদেশিরা তিন বছর কানাডায় না থাকলে বাড়ি কিনতে পারবে না। অন্যের নামে, যেমন ধরুন শালা বা ভাইয়ের নামে বাড়ি কিনলে কীভাবে বাধা দেওয়া যাবে? আমার গ্রামের চেয়ারম্যানও নাকি কানাডায় বেনামীতে বাড়ি কিনেছেন। আমার এলাকার সংসদ সদস্যদের নাকি আমেরিকায় এত বাড়ি আছে যে গুনে শেষ করা যাবে না। যদিও এসব শোনা কথা, হয়তো গুজব, তবুও যা রটে, তার কিছুটাতো বটে। কানাডা সরকার একবারও চিন্তা করছে না, বাড়ির দাম বাড়ছে কেন। সরকার ঋণের ওপর সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে মানুষ যাতে লোকজন বাড়ি কিনতে ব্যাংক থেকে ঋণ না নেয়। সরকার ইচ্ছামতো টাকা ছাপিয়ে আগেই মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করেছিল। সরকারের মূল উদ্দেশ্য এম-থ্রির পরিমাণ কমানো। কিন্তু সরকার এটা ভাবছে না, সব কিছুর দাম যখন আকাশছোঁয়া, বাড়ির দামই বা কম হবে কেন?

বার্তা সূত্র