পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ইউপিডিএফপন্থী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) নেতা-কর্মীরা। শনিবার (২০ মে) সকাল ১১ টায় পিসিপির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে “পিসিপি’র গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামী চেতনা রাখবো সমুন্নত” এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে পিসিপির নেতা-কর্মীরা এই দাবি জানায়।
সমাবেশে বক্তব্যে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই তৎকালীন ছাত্র সমাজ পাকিস্তানের চাপিয়ে দেয়া উর্দু ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে, জীবনের আত্মাহুতি দিয়ে ভাষা রক্ষার আন্দোলন সংগঠিত করেছে। এদেশের শ্রমিক-কৃষকসহ দেশের সাধারণ মানুষই ইতিহাসের নির্মাতা। অথচ বাংলাদেশে আজ জনগণের ভোটাধিকারে জনবান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠা হয় না। যে সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা সিন্ডিকেট গঠন করে কালো বাজারের মজুরি শোষণসহ শ্রমিক-কৃষক ও ছাত্র সমাজের ওপর ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন ও গণবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জারি করে সে সরকার জনগণের সরকার হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, উগ্র-বাঙালি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে পাহাড়িদের উপর জাতিগত নিপীড়ন জারি রাখা হয়েছে। আজকে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও দেশের সংবিধানের কৃষক শ্রমিক তথা মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন দমন করতে এই ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ছাত্রনেতাদের হত্যা করছে। সাবেক ছাত্রনেতা মিঠুন, রূপক, অনিমেষ ও রমেলসহ অনেকে শাসকগোষ্ঠীর এই হত্যার শিকার হয়েছে। গণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার আন্দোলন, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম ও সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ নিপীড়িত মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
সমাবেশের আগে এক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে ভিসি চত্বর, কলা ভবন, মধুর ক্যান্টিন, সমাজবিজ্ঞান ভবন হয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে এক ছাত্র সমাবেশ মিলিত হয়।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সাধারণ সম্পাদক দীলিপ রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের প্রচার ও প্রকাশনার সম্পাদক সোহবত শোভন। এছাড়াও সমাবেশে সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম সাদিক প্রমুখ।
সমাবেশে থেকে পিসিপির নেতা-কর্মীরা ৭ টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- পাহাড়ি জনগণের দাবি পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন মেনে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার, বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের পার্বত্য চট্টগ্রামের থেকে সরিয়ে অন্যত্র সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করা, পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিত, সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক অবৈধ ১১ দফা নির্দেশনা বাতিলসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ বন্ধের দাবি জানান।