Thursday, February 13, 2025

সপ্তাহে শীর্ষে

প্রাসঙ্গিক বার্তা

পাকিস্তান বলছে আফগনিস্তান থেকে “সন্ত্রাসবাদীরা” সীমান্ত পেরিয়ে আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করছে

বৃহস্পতিবার পাকিস্তান বলেছে যে তারা আফগানিস্তানের তালিবান নেতাদের তাদের দাবির সমর্থনে “পর্যাপ্ত প্রমাণ” দিয়েছে যে সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদে জঙ্গিরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেলে যাওয়া অস্ত্র ব্যবহার করছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান ইসলামাবাদে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে প্রতিবেশি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধূনিক অস্ত্র থাকা “ উদ্বেগের কারণ হয়ে থাকছে” এবং এই বিষয়টি একাধিকবার কাবুলের তালিবান সরকারকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে তালিবানকে পাকিস্তান কোন প্রমাণ দিয়েছে কী না সেটি জানতে চাওয়া হলে খান বলেন, “ প্রমাণগুলি নিয়মিতই দেয়া হচ্ছে”।

মুখপাত্রটি জোর দিয়েই বলেন, “ আমরা পর্যাপ্ত প্রমাণ দিয়েছি আর তালিবান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাদেরকে এটা জানানো যে পাকিস্তানের ভেতরে আক্রমণ চালানোর জন্য সন্ত্রাসবাদীরা [আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে] অভয় আশ্রয় পাচ্ছে”।

খান বলেন ইসলামাবাদ বার বার বর্তমান আফগান নেতাদের এটা নিশ্চিত করতে বলেছেন যে এই অস্ত্রগুলি যেন “ ভুল হাতে গিয়ে না পড়ে”।

বৃহস্পতিবার তালিবানের উপ-মুখপাত্র হামদুল্লাহ ফিতরাত এই অভিযোগ জোরালো ভাবে নাকচ করে দেন যে আলোচিত সামরিক সাজসরঞ্জামগুলি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি দখল করেছে এবং তা পাকিস্তানি অঞ্চলে আক্রমণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

ফিতরাতের দাবিকে উদ্ধৃত করে তালিবান পরিচালিত রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, “ সব অস্ত্রশস্ত্র এবং সামরিক সাজসরঞ্জাম যাতে সম্ভাব্য অপব্যবহার করা না হয় সে জন্য নিরাপদে রাখা আছে”।

তালিবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ আবার গ্রহণ করার পর পাকিস্তানে জঙ্গি আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে যাতে শত শত অসামরিক লোকজন এবং নিরাপত্তা কর্মীরা প্রাণ হারিয়েছে। এই সহিংসতার জন্য প্রধানত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়। এটি বিশ্বব্যাপী একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত এবং ইসলামাবাদ দাবি করে যে তাদেরকে আশ্রয় ও সমর্থন দিচ্ছে কার্যত আফগান শাসকরা।

টিটিপি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মারণাঘাত হানছে তবে আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন গত দুই বছর ধরে জঙ্গিদের এই প্রাণনাশী হামলা পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর নিখুঁত ভাবে ঘটানো হচ্ছে এবং তাতে তাদের প্রচন্ড ক্ষতি হচ্ছে।

কাবুলে আন্তর্জাতিক ভাবে সমর্থিত সরকারকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সৈন্যরা প্রায় দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে মোতায়েন ছিল। ২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী তড়িঘড়ি করে বিশৃঙ্খল ভাবে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার দিন কয়েক পর তদনীন্তন বিদ্রোহী তালিবান দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই দেশের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় করে নেয়।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার পর প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের সামরিক সাজসরঞ্জাম যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে রেখে আসে। এই সব সাজ সরঞ্জামের মধ্যে ছিল বিমান, আকাশ থেকে মাটিতে ছোঁড়ার যন্ত্রপাতি, সামরিক যানবাহন, অস্ত্রশস্ত্র, যোগাযোগের যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য জিনিষপত্র যা পরিশেষে তালিবান তাদের দখলে নিয়ে নেয়।

২০ জানুয়ারি তাঁর অভিষেক সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তালিবানের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অস্ত্র-শস্ত্র ফেরত নেবার প্রতিজ্ঞা করেন এবং দাবি করেন যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন “ আমাদের সামরিক সাজ সরঞ্জামের একটা বড় অংশ আমাদের শত্রুদের দিয়ে ফেলেছে”।

ট্রাম্প বলেন যে আফগানিস্তানকে ভবিষ্যতে কোন আর্থিক সহায়তা প্রদান নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাজসরঞ্জাম ফেরত পাওয়ার উপর।

তিনি বলেন,“আমরা যদি বছরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিতে যাবো, তা হলে তাদের বলুন আমরা তাদের অর্থ দেবো না যদিনা তারা আমাদের সামরিক সাজসরঞ্জাম ফেরত দেয়”।

তালিবান কর্মকর্তারা ট্রাম্পের এই বক্তব্যে প্রকাশ্যে কোন সাড়া দেননি তবে তারা নিজেরা দাবি করে যে তারা আমেরিকান সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং তাদের পরাজিত করে। তাই সামরিক সাজসরঞ্জাম ছিল,“যুদ্ধে পরাজিত বাহিনীর ফেলে যাওয়া জিনিষপত্র”।

কোন দেশ দ্বারাই স্বীকৃত নয় যে বর্তমান কাবুল সরকার তারা গত তিন বছর ধরে তথাকথিত বিজয় দিবস পালনের সময়ে বার বার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাজসরঞ্জাম প্রদর্শন করেছে।

–ভয়েজ অব আমেরিকা

পাঠক প্রিয়