Skip to content

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পুলিশি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পুলিশি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের এক থানায় শনিবার ক্রুদ্ধ জনতা জোর করে ঢুকে পড়ে এবং ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সেখানে আটক এক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর তারা মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেয়।

মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবের প্রত্যন্ত শহর নানকানা সাহিবে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কুরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। তারা জানান, এই কথিত অপরাধের বিষয়ে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে, এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে শত শত মানুষ থানা ঘিরে ফেলে।

এই বিপুল সংখ্যক ক্রদ্ধ জনতাকে দেখে পুলিশের কর্তব্যরত কর্মকর্তারা থানা ছেড়ে পালিয়ে যান। ফলে বিক্ষোভকারীরা ৩৫ বছর বয়সী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে থানা থেকে বের করে এনে সড়কের ওপর পিটিয়ে মেরে ফেলে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রে দেখা যায় যে বিক্ষুব্ধ জনতা মৃত ব্যক্তির মরদেহটিকে নগ্ন অবস্থায় সড়ক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরে তারা এতে অগ্নিসংযোগ করে।

প্রাদেশিক পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ক্রুদ্ধ জনগোষ্ঠীর এই হামলা থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় থানার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে এই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ধর্ম অবমাননা মুসলমান অধ্যুষিত পাকিস্তানে একটি অতি স্পর্শকাতর বিষয় এবং এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কারো বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার সামান্য অভিযোগ উঠলেই দাঙ্গা সৃষ্টি হয়।আর জনতার হাতে বিচার ছাড়াই অভিযুক্ত ব্যক্তির মৃ্ত্যুর ঘটনা দেশটিতে প্রায়ই ঘটে।

সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ওপর প্রায়ই হামলা চালানো হয় এবং কখনো কখনো তারা ক্রুদ্ধ জনতার হাতে নিহত হন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলোর মতে, ধর্ম অবমাননার সামান্য অভিযোগই অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর ক্রুদ্ধ জনতার হামলা ও তাকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটার জন্য যথেষ্ট। ধর্ম অবমাননা আইন ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ, বিবাদ সৃষ্টি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শনের কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশনের ২০২২ সালের দেশ-ভিত্তিক প্রতিবেদনে (কান্ট্রি রিপোর্ট) বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ধর্ম অবমাননা আইন ইসলামী চরমপন্থীদের কোনো জবাবদিহি ছাড়া তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে উৎসাহ যোগায়, খুব সহজে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য ও নাস্তিক সহ ভিন্নমতাবলম্বীদের লক্ষ্যে পরিণত করতে সাহায্য করেছে।

বার্তা সূত্র