Skip to content

পরিমনি কী দেশের শীর্ষস্হানীয় অপরাধী ?

শরাফুল ইসলাম *  আমি সর্বশেষ এফডিসিতে গিয়েছিলাম “চাঁদনী” ছবির প্রেস শো’তে। বর্ষীয়ান পরিচালক ক্যাপ্টেন এহতেশাম আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁর নতুন মুখের নতুন ছবির প্রেস শো  দেখার জন্য। এফডিসি’র জহীর রায়হান মিলনায়তনে হয়েছিল “চাঁদনী”র প্রদর্শনী।

সামনের সারিতে নিয়ে বসালেন। পরিচালক- প্রযোজকের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর একটি মেয়ে হঠাৎ করে এসে আমার পা ধরে সালাম করলো।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি চাঁদনী ছবির নতুন মুখ শাবনাজ। মাথায় হাত রেখে দোয়া করলাম। এরপর ধীরে ধীরে আঁধার নেমে এলো।পর্দায় ভেসে উঠলো দু’টি নতুন মুখ। একজন শাবনাজ, অন্যজন ঢাকার নবাব পরিবারের ছেলে নাঈম।
এখন পরীমনি নামের এক নায়িকাকে নিয়ে হুলুস্থুল কারবার চলছে। ছবিতে দেখে মনে হলো খুবই সুন্দর মেয়েটি।
হঠাৎ সেদিন ফেইসবুক অন করতেই দেখি পরীমনি অন লাইনে সাহায্য চাচ্ছে পুলিশের। পরে দেখলাম, যারা এসেছে তারাই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। বাহিনীর নাম .ব্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন। তাদের কর্মকান্ড এবং অ্যাকশন দেখে মনে হচ্ছিল পরীমনি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অপরাধী। পরে দেখলাম মাদক বিষয়ক মামলা। সংগে যৌন অপরাধও রয়েছে। মাত্র দু’জন পুলিশ গেলেই পরীমনিকে অ্যারেষ্ট করা যেতো। কিন্তু গিয়েছে বিশাল বাহিনী। যেই বাহিনীতে রয়েছে আর্মি, পুলিশ, বি ডি আর।

মেয়েটিকে দু’বার রিমান্ডে নিলো। কোর্টও দুই বারই রিমান্ড মঞ্জুর করলো। আজ নিয়ে তিনবার।
কেন একজন পরীমনিকে নিয়ে দেশের সেরা ঘটনাটি ঘটানো হলো ?
ওর বাড়িতে নাকি অনেক মদ পাওয়া গেছে। ওর সংগে নাকি সাকলায়েন নামে একজন পুলিশ অফিসারের প্রেম রয়েছে। সেই পুলিশ অফিসার এর আগে পরীমনির করা মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।

অনেক বছর আগের কথা। এক এক করে ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন শহরে পতিতাবৃত্তি উচ্ছেদ আন্দোলন হলো। পতিতারা প্রতিরোধ করেও হেরে গেলেন। তারপর সবাই বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে গোপন ব্যাবসা অব্যাহত রাখলো। ফলে আশপাশের যুবক কিশোররাও অবনতিতে গেলো।
সেই সময়ে পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাট সংলগ্ন আজাদ সিনেমা হলের গলির পতিতালয় উচ্ছেদ করতে গিয়ে একজন পতিতাকে বিয়ে করেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। নিউজটি সকল পেপারে ফলাও করে ছাপানো হয়েছিলো।
১৯৩২ সালে গনিকাবৃত্তির প্রাথমিক গেজেটের পর ১৯৫৬ সালে পতিতাবৃত্তি আইন করা হলো। পতিতাবৃত্তিকে স্পষ্টতই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কিন্তু ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের গণিকাবৃত্তি নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন তৈরী করতে গিয়ে দেখলাম, বেশ ক’জন গণিকা কোর্ট থেকে প্রদত্ত লাইসেন্স নিয়ে এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে।
মদের ব্যাপারেও পান করা নিষিদ্ধ থাকলেও লাইসেন্স প্রাপ্তদের জন্য দরজা খোলা।
অর্থাৎ হিপক্র্যাসির সীমা অতিক্রম করে গেছে।নিষিদ্ধ করবেন, আবার কোন কোন ব্যক্তিকে লাইসেন্স দিয়ে দেবেন- এটা কতোটা সাংঘর্ষিক। পরীমনিকে জেলে পাঠিয়েছেন বিচারক।
আবার আদালতে নেয়া হয়েছে রিমান্ডে নেয়ার জন্যে।
আইনের সকল বাহিনীর ব্যাপক ব্যাস্ততায় মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সব চাইতে ভয়ানক অপরাধী পরীমনিকে কব্জায় নিয়েছে। কী হাস্যকর পরিস্থিতি।

এই মুহূর্তে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী  বাহিনীর পাঁচ লক্ষ সদস্য দিয়ে ঝটিক অভিযান চালানো হোক রাজনীতিকসহ শীর্ষস্থানীয়  ব্যাবসায়ীদের বাস ভবনে। দেখবেন হাজার হাজার মদের বোতল পাওয়া যাবে।

রাজনীতিকদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা অধস্তন মহিলা নেত্রীদের সংগে অনৈতিক সম্পর্ক করে থাকেন। অনেক বড় বড় নেতার ঘটনা জানা আছে।
সুন্দরী মহিলারা তদবীরের জন্য এলে বিনিময়টা কীভাবে হয় তাও অনেক সাংবাদিকই জানেন।
সেদিকে আইন-শৃংখলা রক্ষকারী বাহিনীর কোন আগ্রহ নেই। আগ্রহ পরীমনিকে নিয়ে। সাকলায়েনের সংগে সম্পর্কটাও অনেকের ঈর্ষার কারণ হতে পারে।
এই পরীমনিকে গ্রেফতার করা থেকে এ পর্যন্ত কতো টাকা খরচ হয়েছে তার হিসাব জানা প্রয়োজন।
এবং এতোটা হৈচৈ করে পরীমনির বাসার মনিটর বন্ধ করে দুর্ধর্ষ অপরাধীর মর্যাদায় গ্রফতারের কারণ চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
দেশকে ভালবেসে সুন্দর একটি পরিবেশ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করুন। এই স্বাধীন মাতৃভূমির জন্য তিরিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ আমরা দেখেছি।সীমাহীন দূর্ভোগ সয়েছি। তাই গুরুতর অপরাধীদের উপড়ে ফেলে নিরাপদ দেশ পরিচালনায় সাহায্য করুন।
এসব মদের বোতল পরেও ভেংগে ফেলা যাবে।

* লেখক শরাফুল ইসলাম-  জাপান প্রবাসী বাংলদেশী সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গ্রন্হকার