শুক্রবার হামাস চারজন ইসরায়েলি নারীর নাম ঘোষণা করে যাদেরকে গাজায় অস্ত্রবিরতির অধীনে বন্দিমুক্তি বিনিময়ের দ্বিতীয় পর্যায়ে এই জঙ্গি গোষ্ঠটি শনিবার মুক্তি দিবে ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির বিনিময়ে।
হামাস জানিয়েছে এই চারজন নারী হচ্ছেন কারিনা আরিয়েভ, ড্যানিয়েলা গিলবোয়া, নামা লেভি এবং লিরি আলবাগ। এই চার নারীর সকলেই ইসরায়েলি সৈন্য যাদেরকে হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তাদের হামলার সময়ে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নাহাল ওজ ঘাঁটি থেকে অপহরণ করা হয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর নিশ্চিত করেছে যে তারা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তালিকাটি পেয়েছে এবং পরে তারা এর উত্তর দিবে।
আশা করা হচ্ছে শনিবার অপরাহ্ন থেকে এই বিনিময় শুরু হতে পারে। অস্ত্রবিরতির প্রথম দিন, ১৯ জানুয়ারি , হামাস ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে তিন জন ইসরায়েলি নারীকে মুক্তি দেয়।
অস্ত্রবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে, হামাস ইসরায়েলের কাছে আটক ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি ,তা ছাড়া আরও মানবিক সহায়তা প্রাপ্তি ও গাজার কিছু অংশ থেকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করার বিনিময়ে হামাস ৩৩ জন পণবন্দিকে মুক্তি দিবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হয় যাতে জঙ্গিরা ১২০০ লোককে হত্যা করে এবং ২৫০ জনকে পণবন্দি করে নিয়ে যায়।
গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে ৪৭,০০০ ‘এর ও বেশি লোক নিহত হন তবে তাতে অসামরিক লোক ও যোদ্ধাদের সংখ্যা পৃথক করে দেখানো হয়নি। অবশ্য এর আগে তারা বলেছে যে নিহতদের অর্ধেকই হচ্ছে নারী ও শিশু। ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে ওই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক বাস্তুচ্যূত হয়েছেন এবং ছিঁটমহলটির বেশির ভাগই ধ্বংস হয়েছে।
শনিবারের বন্দি বিনিময়ের আগে, শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর সতর্ক করে দিয়েছে যে অধিকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি পেলে গাজার অস্ত্রবিরতিকে হুমকির মুখে ফেলবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র সামিন আল খিতান বলেন, মঙ্গলবার থেকে ইসরায়েলি পশ্চিম তীরে অভিযানে কম পক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৪০ জন আহত হয়েছেন, “ যাদের অধিকাংশই নিরস্ত্র ছিলেন বলে বলা হচ্ছে”।
তিনি বলেন, “ এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে আজ পশ্চিম তীরে যা হচ্ছে তার প্রভাব পড়তে পারে গাজার অস্ত্রবিরতিতে। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে গাজার অস্ত্রবিরতি যেন টিকে থাকে”।
বৃহস্পতিবার পশ্চিম তীরে একটি বড় রকমের অভিযানের তৃতীয় দিনে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী অনেকগুলি বাড়ি ভেঙ্গে ফেললে জেনিনের শত শত বাশিন্দা ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেন জেনিন অভিযানের লক্ষ্য ছিল, যেমনটি সামরিক বাহিনী বলছে শহরটির পাশেই একটি শরণার্থী শিবিরে বাসরত ইরান সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি । বহু বছর ধরে সেই স্থানটি সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলির মূল স্থান হয়ে রয়েছে।
আল-খিতান বলেন, “ ইসরায়েলের কিছু কর্মকর্তা বসতি আর্ও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা সম্পর্কে বার বার যখন মন্তব্য করেন সে নিয়ে আমরা আরও উদ্বিগ্ন বোধ করি যা কীনা আন্তর্জাতিক আইনের নতুন করে লংঘন। আমরা আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে নিজেদের দখল করা ভূমিতে নিজেদের অসামরিক লোকজনকে নিয়ে যাওয়াটা যুদ্ধাপরাধের সমতূল্য”।
১৯৬৭ সালের মধ্য প্রাচ্য যুদ্ধের সময় থেকে ইসরায়েল জর্দান নদীর পশ্চিম তীর দখল করে রেখেছে যাকে ফিলিস্তিনিরা তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের কেন্দ্রস্থল হয়ে রয়েছে।
অধিকাংশ দেশই সেখানে ইসরায়েলের তৈরি করা ইহুদি বসতিকে বেআইনি বলে মনে করে তবে ইসরায়েল ওই অঞ্চলের সঙ্গে ঐতিহাসিক ও বাইবেল বর্ণিত সম্পর্কের কথা বলে।
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এসেছে রয়টার্স ও এ এফপি থেকে।